Aindrila Sharma : `এমন প্রাণবন্ত একটি মেয়ের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না`
সব প্রার্থনা মিথ্যে করে মাত্র ২৪ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা। ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই থেকেই হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। ফিরে আসার অদম্য চেষ্টা করেছেন। ঐন্দ্রিলা তাঁর জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে সবসময় পাশে পান বন্ধু, প্রেমিক, অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীকে। তবে সেই সব চেষ্টা, বিগত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রার্থনা সব আজ ব্যর্থ। ঐন্দ্রিলার মৃ্ত্যুতে ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার এবং টলিপাড়ার সহকর্মীরা।
AIndrila Sharma Passes Away, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: এর আগে বারবার জিতে ফিরেছেন, তবে শেষ লড়াইয়ে হেরেই গেলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। রবিবার সকাল ১২.৫৯ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। শনিবার রাত থেকেই প্রায় ১০ বার মাইল্ড কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, তারপর সিপিআর দিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে রবিবার সকালে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর টানা সিপিআর দেওয়া হচ্ছিল, তবে ঐন্দ্রিলা আর সাড়া দেননি। ঐন্দ্রিলার মৃ্ত্যুতে ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার এবং টলিপাড়ার সহকর্মীরা।
অপরাজিতা আঢ্য
ঐন্দ্রিলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য বলেন, 'আমরা সবাই প্রার্থনা করছিলাম। গত কয়েকদিন ধরে যখন পুজোয় বসছিলাম, ওর মুখটাই বারবার ভেসে আসছিল। এটা নিজের লড়াইয়ের থেকেও বেশি ভাগ্যের লড়াই। এক্ষেত্রে তো আর হাতে পায়ে লড়াই করা যায় না। আমার মনে হচ্ছিল, গত দু'বার ও যেভাবে জিতে ফিরে এসেছে, এবারেও ও জিতে যাবে। সবথেকে বড় কথা ওর সঙ্গে বাবা-মা তো আছেনই, সঙ্গে এমন একটা ভালোবাসার মানুষ আছে, এমন ভালোবাসা হয়ত আজকাল বিরল। এভাবে ভালোবাসার সঙ্গীকে পাশে থাকতে দেখা যায় না। আমার তাই মনে হচ্ছিল, ওকে ফিরে আসতে হবেই। আজ সকালেও একজনের সঙ্গে এই কথাই হচ্ছিল, যে এই ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। ভালোবাসার টানেই ওকে ফিরে আসতেই হবে। তারপরই শুনতে পাচ্ছি ঐন্দ্রিলা শর্মা প্রয়াত হয়েছেন। আমি এ-খবরে খুবই আঘাত পেয়েছি। বাবা-মা, কাছের মানুষদের এটা প্রাপ্য ছিল না। ঈশ্বরের যে কী বিচার তা বুঝি না। যে দু'বার এত বড় একটা রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার পরও কেন এটা হল বুঝতে পারছি না। এটা খুবই দুঃখের। এমন অনেক বর্ষীয়ান রয়েছেন, যাঁরা নিজেরাই কষ্ট করে বেঁচে আছেন, চলে যেতে চান, তাঁদের বদলে কীভাবে এমন তরতাজা প্রাণ চলে যায়! এটা ঈশ্বরের কেমন বিচার বুঝি না...'
আরও পড়ুন-'সে চলে গেলেও থেকে যাবে তার স্পর্শ আমার হাতের ছোঁয়ায়…'
জয়জিৎ মুখোপাধ্যায়
'আমার সঙ্গে গতকাল একদম সকালে সব্যসাচীর কথা হয়েছিল। ও আমাকে বলল, আগের দিন সন্ধে অবধি ভালো ছিল। আমি ফোন করার মধ্যেই আবারও দু'বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে সিপিআর দিয়ে ফেরানো হয়েছে। মেয়েটির খুব বাঁচার আশা ছিল। বারবার যুদ্ধ করে ফিরে আসতে চেয়েছে। ফিরে এসেওছে। কিন্তু আসল যুদ্ধে আর ফিরতে পারলো না। ওর কত আর বয়স, মাত্র ২৪। এই বয়সেই এত ঝড়-ঝাপটা ও সামলেছে। আমরা এতগুলো মানুষ, ওর এতন সহকর্মী, এত দর্শক, তাঁরা প্রত্যেকেই অন্তর থেকে প্রার্থনা করেছিল, যেন ও ফিরে আসে। যখনই শুনেছি ও কিছুটা ভালোর দিকে, তখন আশার আলো দেখেছি। আবার যখন খারাপ খবর পেয়েছি, তখন কষ্ট পেয়েছি। ও ফিরে আসলে আমরা খুবই আনন্দ পেতাম (গলা ধরে এলো)। খুব কষ্ট হচ্ছে, কতটুকুই বা ও পৃথিবীর দেখতে পেল, কিছুই তো দেখল না।'
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
'দেখো এই মুহূর্তে কিছু ভাবতে পারছি না। কিছুই মনে হচ্ছে না। পুরো ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছি। কিছুদিন আগেই ও দিদি নম্বর ১-এ এসেছিল। তখন একদম সুস্থ, একদম ঠিকঠাক। আবার কাজে ফিরে এসেছি বলল। তখন ওকে দেখে একেবারেই অসুস্থ মনে হয়নি। ভীষণ প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। আমিও আনন্দের সঙ্গে দু-তিন ঘণ্টা কাটালাম। তারপর শুনলাম, ও আবার হাসপাতালে, আবার অসুস্থ। এটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের, যে ওকে আর দেখতে পাব না। কাকে দোষ দেব, কাকে বলব জানি না। এটাই হয়ত ভবিতব্য। আমরা সবাই কতদিন পৃথিবীতে থাকব, সেটা হয়ত লেখা হয়ে আছে। হয়ত ওর ওইটুকুই পৃথিবীতে থাকা প্রাপ্য় ছিল। আমরা যাঁরা ভালোবাসি, তাঁদের মেনে নেওয়াটা খুব কষ্টকর। সেকারণেই হয়ত অনেককে, অনেককিছুকে দোষারোপ করে ফেলি, তখন হয়ত ঈশ্বরকেও দোষারোপ করে ফেলি। আমরা সবাই একদিন চলে যাব, সেটাই সত্যি, আমাদের সকলেই জন্মের সঙ্গে মৃত্যুর সময় নিশ্চিত করেই এসেছি।'
আরও পড়ুন-লড়াই শেষ, প্রয়াত 'ফাইটার' ঐন্দ্রিলা
শ্রীতমা ভট্টাচার্য
এদিন ঐন্দ্রিলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কেঁদে ফেলেন সহ অভিনেত্রী শ্রীতমা ভট্টাচার্য। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, 'আমরা কেউ চাইনি যে এই লড়াইটা এভাবে শেষ হয়ে যাক। চেয়েছিলাম ও জিতে ফিরুক। ঐন্দ্রিলা তো অনেক লড়াই করেছে। ঈশ্বর কেন ওকে ফিরিয়ে দিলেন না। আমার এখন কী মনে হচ্ছে, সেটা বলার মতো অবস্থাতে আমি নেই।'
১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই থেকেই হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। ফিরে আসার অদম্য চেষ্টা করেছেন। ঐন্দ্রিলা তাঁর জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে সবসময় পাশে পান বন্ধু, প্রেমিক, অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীকে। সর্বক্ষণ ঐন্দ্রিলার পাশে পাশে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। তবে সেই সব চেষ্টা, বিগত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রার্থনা সব আজ ব্যর্থ।