দেবযানী রায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

লাজ-লজ্জা ভুলে গভীর রাতে অভির্ভুতা হয় দেবদাস এর দ্বারে। নি:সংকোচে স্বীকৃতির দাবি জানায়। দেবদাস এর দ্বারা চিহৃত যে কোনো পথেরই পথচারিনী হতে অঙ্গীকারী হয়।


কিন্ত প্রণয়ের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় দেবদাসের ব্যবহারে। সংকল্পহীনতা ও দৃঢ়তার অভাবে দোলাচালে সে। পরিবারবিরুদ্ধ হতে সে অপারগ। শিক্ষার আলোকপ্রাপ্তি ও পরিণতমনস্কতার সাক্ষর রাখতে সে অক্ষম। পরিবারের কল্পিত অবমাননার কারণ হতে অনিচ্ছুক। স্বাভাভিকভাবেই, চারিত্রিকভাবে দৃঢ়মনস্ক ও অভিমানিনী পার্বতীও নিজের পরিবারের সন্মান রক্ষাকে অপরিহার্য মনে করে। প্রণয়ের মোহজ্বাল ছিন্ন করে জন্ম নেয় চিরসংগ্রামিনী নারী --- পুরুষ ও পরিবারের কল্যাণার্থে যে কখনো সখী, কখনো প্রিয়া, কখনো জায়া, কখনো জননী ও কখনো দুহিতা। শরৎচন্দ্রের লেখনীতে তৎকালীন শৃঙ্খলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে পার্বতীর চরিত্রের এই দ্যুতিময় ব্যঞ্জনা প্রতিটি নারীমনকে আজও করে গর্বিত। ফের প্রমানিত হয় সেই চিরসত্য --- নারী সর্বংসহা, চির কল্যাণময়ী।


দুর্বল, অক্ষম নিষ্ফলতা প্রতিফলিত হয় দেবদাস চরিত্রে। পার্বতীকে স্বীকার করতে ক্ষমতাহীন সে। ব্যর্থ পৌরুষের আস্ফালনে পার্বতীর কপালে এক চিরস্থায়ী ক্ষতচিহ্ন অঙ্কন করেই সে তৃপ্ত। ওই চিহ্নটি তার কাছে তার চিরদাবির প্রতীক। নিরাশা ও অবক্ষয়ের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেয় দেবদাস।


তার হতাশা সহানুভূতির ঢেউ তোলে চন্দ্রমুখীর মনে। সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্না এই নারী আপ্রাণ চেষ্টা করে স্ব্খাত্সলিল নিমজ্জমান দেবদাসকে টেনে তোলার। সাহায্য, সেবা, সাহচর্য, ত্যাগ ও প্রত্যাশাহীন প্রেমের জ্যোতিতে সবাকার মানসপটে চিরগৌরবান্নিতা এই কলঙ্কিতা বারবণিতা। জীবনযানের দুই প্রান্তে দুই সুদৃঢ় নোঙ্গর পেয়েও অসফল দেবদাস। সামাজিক এই দলিলে যেমন প্রতিবিম্বিত হয় শাশ্বত প্রেমের মাধুর্য, ঠিক তেমনই তা তুলে ধরে দুর্বলচিত্ত পুরুষের গ্লানিকে --- জীবনতরণীকে সক্ষমভাবে পরিচালনা করতে সে অক্ষম --- সুযোগের অভাবে নয়, দৃঢ়মনস্কতার অভাবে। সব বন্ধন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চাওয়া পার্বতীকে সে অস্বীকার করে, নিস্বার্থ প্রেমে ঝংকৃত চন্দ্রমুখীকে সে ফিরিয়ে দেয়। তার ব্যর্থ জীবন উদ্ভাসিত হয়ে থাকে চন্দ্রমুখীর ত্যাগে ও পার্বতীর তিতিক্ষায়। এই দুই নারীর উদ্বেলিত ও দ্যর্থহীন প্রেমের দীপ্তিময় প্রকাশই শুধুমাত্র সার্থক করে তাকে। পরিবারের ভয়ে প্রিয়াকে অস্বীকার করে সে; সেই পরিবারকেই দ্বিধাহীনভাবে ত্যাগ করে; মৃত্যুতে প্রিয়াকে রেখে যায় অজস্র প্রশ্নের সন্মুখীন করে --- দেবদাসের  চরিত্রের এই দোটানা ও অবশম্ভাবী ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি কিছুক্ষেত্রে পাওয়া যায় আজকের যুবসমাজেও। তবে গৌরবের কথা এই যে প্রতিবাদ ও সংগ্রামের পরিচয়ও দিচ্ছে যুবমানস --- পরিণতি পাচ্ছে প্রেম। ত্যাগের সৌন্দর্য, প্রেমের মাধুর্য ও দৃঢ়তার প্রয়োজনীয়তায় তাই চিরকালীন, হৃদয়গ্রাহী, মর্মস্পর্শী হয়ে থাকবে 'দেবদাস'। দেখতে ভুলবেন না। দ্য বিমল রায় ফেস্টিভাল উপস্থাপনায় বোমান ইরানি। সিরিজের দ্বিতীয় ছবি