রণিতা গোস্বামী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সফল অভিনেত্রী হিসাবেই কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকতেই বিয়ে, সন্তান। সাংসারিক দায়িত্ব পালনের জন্য অবলীলায় ফিরিয়েছেন ৫-৬টা ছবির প্রস্তাব। সন্তানকে সময় দেওয়ার জন্য প্রায় ৭ বছর অভিনয় জগত থেকে স্ব-ইচ্ছায় থেকে দূরে ছিলেন। পরে আবারও যখন পর্দায় ফিরলেন, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় তখন হয়ে উঠলেন ভিন্ন ধারার অভিনেত্রী। যখন যেটাই করেছেন ভালোবেসে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করেছেন। অন্যের পরিচয়ে নয়, নিজের শর্তে বাঁচার পক্ষপাতী তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি  দিল্লিতে নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠাও করেছেন। সেখানেও তিনি সফল উদ্যোগপতি। তাঁর এই পরিচয়টা অবশ্য কম লোকেই জানেন। সম্প্রতি, Zee ২৪ ঘণ্টা ডট কমের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে খোলামেলা আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন সমাজের ক্লিশে হয়ে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, স্বকীয়তা আর সাফল্যের মিশেলে তৈরি তাঁর নিজস্ব ফ্রেমেই তাঁকে দেখতে হবে।


সম্প্রতি তোমার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ক্ষেত্রে একটা বদল দেখা দিয়েছে। অনেক বেশি পজিটিভ, অনেক বেশি স্ট্রেট ফরোয়ার্ড।এর কারণটা ঠিক কী?


অর্পিতা : হ্যাঁ, এটা ঠিকই খেয়াল করেছ। এখন আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল নিজেই দেখি। আমার মেন্টর, 'ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড' আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সেকারণেই হয়ত এই পরিবর্তন তোমার নজরে পড়ছে।


তোমার মেন্টার কে, জানতে পারি?


এবিষয়ে তোমার সঙ্গে অন্য একদিন  গল্প করব... (হাসি)। 


এটাই কি প্রকৃত অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়?


অর্পিতা :  হ্যাঁ, একেবারেই (জোর দিয়ে...)। আমি সবসময়ই এই রকমই ছিলাম। তুমি যদি আমার টুইটারের স্টেটাস দেখো তাহলেই বুঝবে। সেখানে একটুও ভুল লেখা নেই। (অর্পিতার টুইটারের ক্যাপশানে লেখা, ''স্বাধীনচেতা, দৃঢ়চেতা, নিজস্ব মতামত প্রকাশে বিশ্বাসী, নিজের বিবেকের কথা শুনি। বর্তমানে অভিনয় ও ব্যবসাই আমার বেঁচে থাকার রসদ'') ওখানে যেভাবে আমি নিজেকে ব্যক্ত করেছি, আমি ঠিক সেরকমই। এটাই প্রকৃত অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।



আরও পড়ুন-'নেপোটিজম' নাকি 'কাউন্টার নেপোটিজম' অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে কোনটা সত্যি?


তোমার কথায়, মহিলাদের নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বাঁচা উচিত। একথা কি তুমি সামগ্রিকভাবে মহিলা সম্প্রদায়ের হয়ে কথাটা তুলে ধর?এই ভাবনার পিছনে তোমায় কে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?


অর্পিতা : দেখো এটা বরাবরই ছিল। আমার বড় হওয়াটা একেবারেই সাধারণ, মধ্যবিত্ত পরিবারে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সর্বত্রই দেখেছি, এখানে মহিলাদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হয় না। কখনও সে কারোর মা, কারোর মেয়ে, কিংবা কারোর স্ত্রী, এটাই যেন পরিচয়। অথচ তাঁদের সবক্ষেত্রেই যে বড় ভূমিকা রয়েছে, সেটা যেন মানাই হয় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাই আমাদের সমাজের ধারা হয়ে গিয়েছে। মহিলাদের নিজস্বতাকে যে সম্মান দেওয়া উচিত, সেটা কারোর মাথাতেই আসে না। সবসময় যে ইচ্ছাকৃতভাবে অসম্মান করা হয় এমনটা নয়, আসলে এটাতেই যে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। তা এই বিষয়টা আমায় সবসময়ই কষ্ট দিত। আমি কোনওদিনই এটাকে মানতে পারি না। আর একজন মহিলা যখন নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করেছে, কেন তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটা দেওয়া হবে না? কেন তাঁকে অন্যের স্ত্রী, অন্যের মা, মেয়ের পরিচয়ে তুলে ধরা হবে? 


হ্যাঁ, যদি কেউ নিজের সুবিধার জন্য অন্যের পরিচয় ব্যবহার করে, তারপরেও যদি সে নিজের পরিচয় দাবি করে, সেটা অবশ্যই স্ব-বিরোধীতা। আমি অন্তত কোনওদিনই ব্যক্তিগতভাবে সেটা করিনি। আমি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যাযয়ের স্ত্রী, এই পরিচয় ব্যবহার করে কখনওই কোনও সুযোগ নিইনি।  সেটা নিশ্চয় জানো...।আমি অর্পিতা, এই পরিচয়টাই আমার কাছে গর্বের। আমি নিজের কাজ, নিজের কৃতিত্বের মধ্যে দিয়ে পরিচিত হতে পছন্দ করি। আমাকে তৈরি করার অবদান আমার গুরুদের এবং আমার বাবা-মায়ের। 



তুমি উল্লেখ করেছ, বাংলা মহিলাদের সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও এগিয়ে? তোমার এটা কেন মনে হয়েছে?


অর্পিতা : কারণ, বাংলায় শিক্ষা, সংস্কৃতির দিকটা অন্যান্য জায়গার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। এক্ষেত্রে শিক্ষার একটা বড় ভূমিকা ও মূল্য দুটোই রয়েছে। এটা তো মানতেই হবে। সেকারণে এখানকার মহিলারাও নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে কিছুটা হলেও বেশি সচেতন।


তোমার তো দিল্লিতে ব্যবসা রয়েছে।  তুমি একজন উদ্যোগপতি এটাও তো তোমার একটা পরিচয়...


অর্পিতা : একদমই। সেটা তো বটেই। আমার পরিচয় তো শুধু অভিনেত্রী নয়। দিল্লিতে আমার যে কোম্পানি রয়েছে , সেটা প্রায় ৬ বছর হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সেই কোম্পানি এখন একটা বড় গ্রুপ অধিগ্রহণ করতে চলেছে। এই হস্তান্তরটা হয়ে গেলে আবারও নতুন কিছু। তবে এর সবটাই দিল্লিতে। এবিষয়টা খুব শীঘ্রই জানতে পারবে। 


কলকাতা ও দিল্লির কাজের পরিবেশে কি কিছু পার্থক্য রয়েছে? কী মনে হয় তোমার?


অর্পিতা : হ্যাঁ, সে তো অবশ্যই রয়েছে। ওই যে আমি তখন বললাম, বাংলায় যেমন শিক্ষার বিষয়টাতে বেশি জোর দেওয়া হয়। দিল্লিতে কিন্তু টাকাটা (Money Matters) ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ (হাসি)। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই কাজের পরিবেশটাও তাই বদলে যায়। 


সমস্ত মহিলাদের উদ্দেশ্যে তুমি কী বার্তা দিতে চাইবে?


অর্পিতা : আমি তো বলব, সব মহিলাদেরই নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বাঁচা উচিত। আর এটার জন্য তাঁদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। নিজেকে সম্মান করতে হবে। নিজের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিতে হবে। নিজেকে প্যাম্পার করতে হবে। কর্মই যখন মানুষের পরিচয়। তখনই সেটাই তাঁদেরও পরিচয় হয়ে ওঠা উচিত।