Subhamita Banerjee : `বিচারকের আসনে বসার হয়ত যোগ্যতা নেই, তাই রিয়্যালিটি শো আমায় ডাকে না...`
আমার যে পারিশ্রমিকটা পাওয়া উচিত্ তা যদি না দেওয়া হয় আমি কোনও শোতে যাই না, আমার মনে হয় সেই পারিশ্রমিক না পেলে আমার সময় নষ্ট হবে।
Shuvomita, অনসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায়: সঙ্গীত জগতের উল্লেখযোগ্য একটি নাম শুভমিতা ব্যানার্জি। নব্বইয়ে দশকে বাংলা আধুনিক গান নিয়ে কাজ করেছেন চুটিয়ে। ছবিতে তাঁর কণ্ঠস্বরও ব্যবহার করেছেন পরিচালকেরা। রিয়্যালিটি শোয়ের মাধ্যমেই তাঁর জার্নি শুরু হয়েছিল। বর্তমান রিয়্যালিটি শো নিয়ে কী ভাবনা তাঁর? কেন তিনি কিছুটা আড়ালে থাকতেই পছন্দ করছেন এই সময়? সম্প্রতি স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে তাঁর দেখা মিলল। মন খুলে কথা বললেন জি ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে।
প্রতিনিধি: কেমন আছেন?
শুভমিতা: এই ভালই আছি। মাঝে একটু শরীরটা বিগড়েছিল, এখন ঠিক আছি। আজ স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালে এসেছি। এই অনুষ্ঠানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সঙ্গীত জগতের জন্য।
প্রতিনিধি: এই অনুষ্ঠানে আজ ঘোষণা হল ওস্তাদ আলি আকবর খানের নামে রাস্তা তৈরি হতে চলেছে, এই খবর শুনে কেমন লাগল?
শুভমিতা: আমাদের জন্য অনেক বড় পাওনা। পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় ওঁর নামাঙ্কিত রাস্তা, ওই রাস্তাটা বারবার দেখতে ইচ্ছে করবে। আর এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানাই। এই কনফারেন্সও খুব হওয়া দরকার। নতুন প্রজন্মের জন্য বিশেষ করে,আমরা ছোট থেকে ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স শুনে বড় হয়েছি। গান বাজনা কী জিনিস, ঠিক কী পর্যায়ে পৌঁছলে গান বাজনা করা যায়, সেটাকে অনুধাবন করতে হবে তো? সেই ধাপগুলো হয়ত এই কনফারেন্সগুলো। সেটাকে যে অনুধাবন করতে পারবে পারবে, যে পারবে না তাঁর হবে না।
প্রতিনিধি: এই প্রজন্মের গায়ক বা গায়িকাদের মধ্যে কী মিসিং বলে আপনার মনে হয়?
শুভমিতা: ডেডিকেশন, শিক্ষা, রেওয়াজ সবটাই মিসিং এখনকার উঠতি সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে। অনেক বেশি করে স্টেজ শো করার প্রবণতা, অনেক বেশি গান গাওয়ার প্রবণতা, এই তিনটি বিষয়ের সময় কমিয়ে দেয়। একবার শুনেছিলাম এই বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীর মায়ের গল্প, সেই শিল্পীর তখন বেশ নাম-ডাক। তাঁর মাকে বিশদে অনুষ্ঠানের দিনগুলো বোঝাচ্ছিলেন। মাসে হয়ত ১০টি অনুষ্ঠান। তবুও তাঁর মা প্রশ্ন করেছিলেন যে মাসে ১০ দিন অনুষ্ঠান করবে, এছাড়াও যাতায়াতের সময় নষ্ট হবে। তুমি রেওয়াজটা করবে কখন? এইটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সময় দিতে হয় নিজেকে, অধ্যবসায় প্রয়োজন, এটা অতটা সহজ জিনিস নয়।
প্রতিনিধি: এটা আপনার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, আপনি এখনও এক টানা অনুষ্ঠান করেন না। এটা কেন?
শুভমিতা: আমি এখনও এটা মেনে চলি। আমার একটানা অনুষ্ঠান করতে সেই মজাটা লাগেনা। তাই একটু গ্যাপ দিয়ে দিয়ে অনুষ্ঠান করি। স্টেজে গিয়ে মজা না পেলে কীভাবে মানুষকে আনন্দ দেব? স্যাটিসফেকশন না পেলে গান গাওয়া যায় না। টাকা রোজগারের জন্য গাই নিশ্চয়ই, এটা আমার পেশা কিন্তু তাই বলে নিজে স্যাটিসফায়েড না হলে গান গাওয়া যাবে না।
প্রতিনিধি: বর্তমানে রিয়্যালিটি শো কতটা আলাদা বলে আপনার মনে হয়?
শুভমিতা: রিয়্যালিটি শো-তে গান বাজনার মান ভাল হচ্ছে, কিন্তু তারপর কোথায় যাচ্ছেন তাঁরা? কেন টিকে থাকছেন না কেন নতুন প্রতিভা? শিক্ষা-তালিম-রেওয়াজ-ডেডিকেশন-মনন প্রয়োজন। শিখে যেতে হবে। আজ আমি রিয়্যালিটি শোয়ের চ্যাম্পিয়ন মানে আমি বিশাল কিছু করে ফেলিনি। এটা শেখাতে হবে। এটা বাড়ির পরিবেশ, বা যে মঞ্চে তাঁরা গাইছেন শেখান থেকেই শেখাতে হবে।
প্রতিনিধি: সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রচুর ট্রোলিং হয়, সেখানেও নানা মন্তব্য আসে। অনেক ক্ষেত্রে কোনও প্রতিযোগীদের ভুল শুধরে দিলে কটাক্ষের মুখে পড়তে হচ্ছে, সমালোচনাও হচ্ছে। এর প্রভাব কী এই রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চে পড়ে বলে মনে হয়?
শুভমিতা: কোনওকিছুরই অতি ব্যবহার ভাল না। সোশ্যাল মিডিয়া অনেক কিছু নষ্ট করে। আর আমার গানের সমালোচনা কে করছেন সেটাও দেখার। আমি কাউকে বেসুরো বললে তো জেনেই বলব। একজন যোগ্য মানুষ সত্যি বললে তা নিয়ে কটাক্ষের মুখো পড়ার কোনও মানে নেই। পুরোটাই এড়িয়ে যাওয়া উচিত্ বলে আমার মনে হয়। আমার যদিও সেই ভাবে রিয়্যালিটি শো দেখা হয়না, যাই ও না। তবে যখন যখন দেখি মনে হয় ভাল কে ভাল আর খারাপ কে খারাপ বলার সাহসটা থাকতে হবে, না বলতে পারলে প্রতিযোগীদের শিক্ষায় ফাঁক থেকে যাবে। আবার প্রতিযোগীদেরও বুঝে নিতে হবে , শও-অফ করলে হবে না।
প্রতিনিধি: আপনার কাছে তো ডাক আসে বিভিন্ন টেলিভিশন শো থেকে...
শুভমিতা: না না সেরকম একেবারেই নয়। ডাক আসে বললে ভুল বলা হবে। সেইরকম ডাক আসে না। আবার আমিও প্রফেশনাল কারণে যাইও না। কারণ আমার যা মনে হয় যে পারিশ্রমিকটা পাওয়া উচিত্ আমার তা যদি না দেওয়া হয় আমি যাই না, আমার মনে হয় সেই পারিশ্রমিক না পেলে আমার সময় নষ্ট হবে। হয়ত আমায় খুব একটা কেউ রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারকের আসনে বসার যোগ্য বলে মনে করেন না। তাই হয়ত ডাকেন না।