নিজস্ব প্রতিবেদন:  বাংলা ছবির প্রতি ভালোবাস, টান থেকে ফের কলকাতায় ফিরলেন ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেত্রী তনুজা। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত 'সোনার পাহাড়' ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন এই কিংবদন্তী। আর তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন ২৪ ঘণ্টার প্রোগ্রামিং হেড শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায়। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভারতীয় সিনেমা জগতে স্পষ্টভাষী মহিলা আর তনুজা শব্দটা সমর্থক, আর আপনি নারীবাদী বলেই পরিচিত। 


তনুজা- থামিয়ে দিয়ে, হ্যাঁ আমি স্পষ্টবাদী, নারীবাদী। (হাসতে হাসতে)


আপনার অভিনীত 'তিন ভুবনের পারে' বাঙালিদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। যাইহোক, কলকাতায় এসে কেমন লাগছে?


তনুজা- খুব ভালো লাগছে(হাসি)। বাংলা ছবিতে কাজ করতে এসেছি এটা আরও ভালো লাগছে। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, একজন ভালো পরিচালক, (একটু থেকে) আমি ভীষণ খুশি। 


ছয়ের দশকে যখন কলকাতায় ছিলেন, বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো তখনকার বাংলা ছবির তারকাদের সঙ্গে। আর এখন আবার কলকাতায় ফিরলেন, তো সে দিনগুলোর কথা কি কিছু মনে পড়ে? সেসময়কার শ্যুটিং আর এখনকার, কী পরিবর্তন হয়েছে?


তনুজা- আসলে শ্যুটিং-একই থাকে। প্রযুক্তিতে পরিবর্তন এসেছে। মানুষগুলোর মধ্যে পরিবর্তন আসে। আমি যদি বদলাই, তো আমার চারপাশের মানুষগুলোও বদলাবে। তবে যোগাযোগগুলো একই থাকে। পুরোটাই উভমুখী প্রক্রিয়া। তুমি কিছু পাচ্ছো, আবার কিছু দিচ্ছো।  


আপনার পরিবারের দীর্ঘ দিন ধরে সিনেমার জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আবার বিয়ের পর যে পরিবারে গিয়েছেন সেই পরিবারেরও ভারতীয় সিনেমায় একটা বড় অবদান আছে। তবে এখন সিনেমার বিষয়, ভাবনা একেবারেই বদলে গেছে। এই পরিবর্তনটা কীভাবে দেখছেন? বিশেষ করে বলিউড ফিল্মে।


তনুজা- আমি মনে করি পরিবর্তনটাই ধর্ম। যদি এটা না হয় তাহলে কোনও উন্নতিই হবে না। একটা সময় ছিল বাংলা ছবি থেকে নিয়ে হিন্দি সিনেমা তৈরি হতো। আর এখন হিন্দি সিনেমা থেকে নিয়ে বাংলা ছবি তৈরি হয়। এই যে আইডিয়ার আদানপ্রদান, এটা তো ভালোর জন্য, উন্নতির জন্য।
তবে বাংলাতেও এখন বেশকিছু ভালো বিষয় নিয়ে সিনেমা তৈরি হচ্ছে। যেমন আমিই যে এই সিনেমাতে কাজ করছি, সেটার বিষয়টাই অসাধারণ।
এইচআইভি এবং এইডস এর মতো বিষয়। আর আমার তো মনে হয় মানুষের জানা উচিত যে এইচআইভি আর এইডসের মধ্যে পার্থক্য কী? শিশুরা কেন ভুগবে এজন্য?


আচ্ছা, এই সিনেমাতে একটা শিশুশিল্পীর চরিত্র রয়েছে, শ্রীজাত।  প্রায় আপনার নাতির মতোই, তো শ্রীজাতর সঙ্গে এই যে আপনার সম্পর্কটা কি আপনার নাতির মতোই?


তনুজা- আমার নাতির আবার অন্যরকম, আপনি ওকে একেবারেই শ্রীজাতর সঙ্গে তুলনা করতে পারবে না।
শ্রীজাত  শ্রীজাতই, আর আমার নাতি নাতিই। দুজনের বয়সই ৭ বছর, এক মাসের এদিক ওদিক শ্রীজাতর অগস্ট, আর আমার নাতির সেপ্টেম্বর। তবে আমি তো শ্রীজাতর সঙ্গে কথা বলেছি, ও আমার নাতির বয়সই। ওর চিন্তাভাবনা আমার সঙ্গে মেলে, ভীষণ ইন্টেলিজেন্ট। সব কিছু লক্ষ্য করে, আর প্রশ্ন করতে থাকে। ওর সঙ্গে আমার একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তবে আমার নাতি ওর থেকে আলাদা, ও অন্যভাবে বড় হচ্ছে। তবে আমি তো দু'জনের সঙ্গে কথা বলেছি, সাধারণ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেশ ভালো দিকেই এগোচ্ছে।


আপনি যে ধরণের সিনেমায় অভিনয় করেছেন তাতে আপনার ইমেজ ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ের। তবে 'অনুভব' (১৯৭১) এর এমন একটা সিনেমা, যেটা সেই সময়ে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক এগিয়ে। তো কীভাবে সিনেমা বাছতেন? আপনি নিজেই বাছতেন, নাকি সেসময় যেমন সিনেমা আপনার কাছে এসেছে আপনি করেছেন?


তনুজা- যখন আমি প্রথম সিনেমায় আসি, সেটা ৬-এর দশক। আমি তখন সুইত্জারল্যান্ড-এ পড়ছি। আমার মা ফোন করে বলল, যে অর্থনৈতিকভাবে একটু সমস্যা চলছে, তো তোমাকে ফিরতে হবে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যেই তোমার জন্য তিনটে সিনেমার অফার রয়েছে তো ফিরে এসো। একবছর পর তুমি আবার পড়াশোনায় ফিরতে পারো।
তবে আমি ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম, আমার ইচ্ছে ছিল আমি রাষ্ট্রসংঘের দোভাষীর কাজ করব। কিন্তু আমায় ফিরতে হল। আমার প্রথম ছবি ছিল 'হামারি ইয়াদ আয়েগি'। তবে একবার সিনেমার জগতে ঢুকে পড়লে বেরোনো খুব মুশকিল। অর্থনৈতিকভাবে  স্বাবলম্বী হওয়ার পরেও। তাছাড়া আমার ভাইবোনের প্রতি আমার দায়িত্ব, কর্তব্য ছিল। তাই আমি তখন যেটা করছিলাম সেটা ভালোবেসেই করতে শুরু করলাম। 
প্রথমে তাই যেটা পেয়েছি সেটাই করেছি। তারপর যখন একটু স্টেবেল হলাম, তখন ঠিক করলাম আমি বছরে ৫টা করে ছবি করব বেছে বেছে। আর 'অনুভব' তাদের মধ্যেই একটা।


একই ভাবে আপনি যখন বাংলা ছবিতে উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে কাজ করছেন তখন সেই ৭-এর দশকের 'তিন ভুবনের পারে'র মতো সিনেমাও সময়ের থেকে অনেক এগিয়েছিল।


তনুজা- (থামিয়ে দিয়ে) সেসময় বাংলা ছবি অনেক কিছুই শিখিয়েছিল। আমি তপন সিনহার মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি। অসাধারণ পরিচালক। তখনকার মানুষগুলোও অসাধারণ ছিল। সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি'র পরিচালক, 'দোলনা'র পরিচালক পার্থ (পার্থ মুখোপাধ্যায়) অসাধারণ সকলে। পার্থ মনে করত আমি চাইলে বাংলা বলতে পারব। তো আমি বাংলা শিখলাম শুনে শুনে 'দোলনা'র ডাবিং করেছিলাম। আমি এখনও বাংলা পড়তে, লিখতে পারি, খুব ভালো করে বলতেও পারি।


বাংলা ছবি আপনি এতটা সফল। বক্স অফিসের দিক থেকেই বলুন আর অভিনয়ের দিক থেকে, মানুষ আপনাদের এতোটা ভালোবেসেছে। তারপর আর আমরা বাংলা ছবিতে আপনাকে পেলাম না। কেন?


তনুজা- তারপর আমার কাছে আর কেউ আসেনি। আমি কোনো অফার পাইনি। 


কঙ্কনার (কঙ্কনা সেনশর্মা) সঙ্গে ' অ্যা ডেন ইন দ্যা গঞ্জ' কাজ করে আপনার কেমন লেগেছে?


তনুজা-  অসাধারণ। অসাধারণ অভিনেত্রী, অসাধারণ পরিচালক, জাস্ট অসাধারণ। আমার তো মনে হয় ও ওর মা-কেও ছাপিয়ে যাবে (সরি অপর্ণা)।  ও এত সুন্দর চিত্রনাট্য বোঝায় যে যেকেউ চিত্রনাট্যটা চোখের সামনে দেখতে পায়।  এমনটা আমার জীবনে আর কখনও হয়নি।  তবে তপন সিনহার মধ্যে এই বিষয়টা ছিল। ওনার পর কঙ্কনার মধ্যে গুনটা পেলাম। 


এই যে বাংলা ছবিতে আবারও ফেরা, তাহলে কি এর পরেও আপনি আবারও বাংলা ছবি করবেন?


তনুজা- অবশ্যই, ভালো চিত্রনাট্য, চরিত্র পেলে অবশ্যই করব। 
সাম্প্রতিক কোনও বাংলা ছবি দেখেছেন?


তনুজা- সম্প্রতি আমি 'বেলাশেষে' (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) দেখলাম। আমি সুমন ঘোষের 'কাদম্বরী' দেখব ভাবছি। কেননা, এই বিষয়টার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ রয়েছেন, আর কঙ্কনা কাদম্বরীর চরিত্রে অভিনয় করছে।


আচ্ছা কলকাতার কোন বিষয়টা আপনার ভালো লাগে?


ইলিশ মাছ আর ভাত, আমি ভীষণ খেতে ভালোবাসি (হাসতে হাসতে)। এমনকি গতকালই আমি ইলিশ মাছ খেয়েছি।