অনেক জটিল প্রশ্নেরই সমাধান- মাসান
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: মাসান
রেটিং- ****
ঈদের পরের শুক্রবারে বিগ ব্যানারের প্রডাকশন হাউস একটু চুপচাপই থাকেন, তাই ছোট বাজেটের ছবিরই প্রবেশ দ্বার খুলে যায়। এই সুযোগেই বলিউডের দুটো ছবি মুক্তি পেল। মাসান আর অ্যায়সা ইয়ে যাঁহা।
এই দুটো ছোটবাজেটের ছবি নিয়ে একটা আর্টিকেল লেখা যেতে পারে, যার নাম হবে হল পেল না যারা। কান ফেস্টিভ্যালে ফিপ্রেসকি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি মাসান। বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক ফেস্টিভ্যালে স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছে, কিন্তু এই মুহূর্তে বেশিরভাগ হলে রমরম করে চলছে বজরঙ্গী ভাইজান আর বাহুবলী। তারই প্রতিঘাত সহ্য করতে হচ্ছে এই দুটো ছবিকে। কলকাতা শহরে একটি মাত্র হল ছাড়া আর কোথাও মুক্তিই পায়নি অ্যায়সা ইয়ে জাঁহা।
পরিচালক নীরজ ঘায়ওয়ানের প্রথম ছবি একটা বড়সড় চিরন্তন প্রশ্নের একটি সহজ, কিন্তু বজ্রের মতো কঠিন উত্তর। অনেক গভীরে গিয়ে যে উত্তরটা বের করে আনলেন পরিচালক, আমরা কেউ কেউ সেটা জীবনের শেষ ভাগে খুঁজে পাই, আত্মবীক্ষণের মাধ্যমে। আবার কেউ বা সারা জীবনেও খুজে পাই না। মাসান শব্দের মানে- শ্মশান। প্রবহমান গঙ্গা নদী এই ছবির প্রাণকেন্দ্র। সারা ছবি জুড়ে প্রতীকী আর বাস্তব, দুটি অর্থই বহন করে গঙ্গা। এই নদীর ধারে বিভিন্ন শহরে শুটিং করা হয়েছে।
ছবির নায়িকা রিচা চাড্ডা, যাঁকে আমরা গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ছবিতে এক শক্তিশালী ভূমিকায় দেখেছিলাম। এখানে তিনি এক সংস্কৃত শিক্ষকের মেয়ের ভূমিকায়। তাঁকে দেখা যায় ল্যাপটপে blue film দেখতে। এর পর সালোয়ার-কামিজ আর ব্যাকপ্যাক নিয়ে সে বেরিয়ে যায়। তাকেই আবার দেখা যায় সুলভ শৌচালয়ের ভেতরে পোশাক পাল্টে নিতে। এরপর এক সস্তার হোটেলে বয়ফ্রেন্ড পীযুষ, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌরভ চৌধরী, তারই সঙ্গে একান্ত অবস্থায় তাকে আবিষ্কার করছে পুলিস। থানায় তলব করা হল তার বাবাকেও। এখান থেকেই কাহিনির শুরু। শেষ এক অভিনব বিস্তৃত, অন্য পৃথিবীতে। এমন একটা চিত্রনাট্যের জন্য চিত্রনাট্যকার বরুণ গ্রোভার অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন।
সংস্কৃত শিক্ষক বিদ্যাধর পাঠকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সঞ্জয় মিশ্র। ভারতীয় ছবির এক বিরল শ্রেণির অভিনেতা ইনি। যে-অভিনয়টা সচরাচর আজকের দিনে স্ক্রিনে পাওয়া যায় না। আঁখো দেখি-র মতো ছবিতে তিনি দেখিয়েছিলেন সঠিক অভিনয়ের ছোঁয়া কতটা স্বর্গীয় হতে পারে। মাসান ছবিতেও কন্যাদায়ে জর্জরিত বাবার ভূমিকায় তাঁর অভিনয় বহুদিন মনে থাকবে। শিশু অভিনেতা নিখিল সাহনির চরিত্রও চোখে পড়বে।
রিচা চাড্ডার গল্পটা টালমাটাল, বৈধ-অবৈধ নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি। তারই পাশাপাশি একটা মিষ্টি প্রেমের সমান্তরাল কাহিনি। যে প্রেমের ভিতরেও এক প্রকান্ড সামাজিক ব্যবধান। জাতিভেদ। এই বিষয় নিয়ে বহু ছবি হয়েছে বলিউডে, এই ছবিতে তার একটা অন্যরকম সমাধান দেওয়া হয়েছে, যেটা আপনারা অনুভব করতে পারবেন ধীরগতিতে।
অবিনাশ অরুণের ক্যামেরাও এখানে অন্যতম। যার গুণে নদীও চরিত্র হয়ে উঠেছে। এ ছবির বিভিন্ন মোড়ে বার বার যে ফিরে আসে, সে এই গঙ্গা নদী। প্রেম কিংবা অবক্ষয়, স্বার্থ কিংবা পরার্থপরতা, সবকিছুরই সাক্ষী হয়ে থেকে এই প্রবহমানা গঙ্গা। শেষ দৃশ্য এলাহাবাদে, গঙ্গার সঙ্গমস্থানে। বাড়তি পাওনা অবশ্যই ইন্ডিয়ান ওশানের মিউজিক। ছবি দেখে বেরনোর পরেও একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া থাকে। যাঁরা ভিন্নধারার ছবি দেখতে ভালবাসেন, তাঁদের কাছে এ ছবি দেখার মতো, এবং মনে থাকার মতো।