দেশের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা Hiralal Sen-র বায়োপিক এবার বড় পর্দায়
তাঁর জীবন নিয়েই এবার সিনেমা বানিয়ে ফেলেছেন পরিচালক অরুণ রায়। ছবির নাম হীরালাল।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ভারতীয় সিনেমার জনক হিসাবে সকলে জানেন দাদাসাহেব ফালকের নাম। অথচ প্রথম ভারতীয় সিনেমা যিনি বানিয়েছিলেন তিনি একজন বাঙালি। নাম হীরালাল সেন। তাঁর জীবন নিয়েই এবার সিনেমা বানিয়ে ফেলেছেন পরিচালক অরুণ রায়। ছবির নাম 'হীরালাল'।
এবিষয়ে পরিচালক অরুণ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ''ফাদার অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা হিসাবে গোটা ভারতবর্ষ চেনেন দাদাসাহেব ফালকেকে। যেটা ভীষণই ভুল। এদেশে প্রথম সিনেমা বানিয়েছিলেন হীরালাল সেন। আমার এই সিনেমাটা বানানোর কারণই হল এই ভুল ভাঙানো। কীভাবে দাদাসাহেব ফালকের নাম ছড়িয়ে গেল ভারতীয় সিনেমার জনক হিসাবে, কেন সেটা হীরালাল সেন নয়? এটা নিয়ে আমার অনেক প্রশ্ন আছে। আর তাই ছবিটা বানিয়েছি। দাদা সাহেব ফালকে 'রাজা হরিশচন্দ্র' বানিয়েছিলেন ১৯১৩ সালে। অথচ তার বহু আগে ১৯০১-০২ সালে হীরালাল সেন ততদিন পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়ে ফেলেছেন। যে কাজটা একজন আগেই করে ফেলেছিলেন ওঁর নাম আমরা পুরোপুরি কীভাবে ভুলে গেলাম! বাঙালিদের এনিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। প্রথম বিজ্ঞাপন বিষয়ক ছবি, ডকুমেন্টরি সবই ওঁর হাত ধরে। আজ যে আমাদের এত বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সেটাও তো হীরালাল সেনের হাত ধরে। ফিল্মের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রটিও উনিই শুরু করেছিলেন। অনেকে হীরালাল সেনের নামই জানেন না। এটা কেন হবে?''
৫ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে 'হীরালাল' ছবিটি। ১৯ জানুয়ারি, শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে 'হীরালাল' ছবির ট্রেলার...
ছবিতে হীরালাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করছেন কিঞ্জল নন্দ। এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অনুষ্কা চক্রবর্তী, তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস, পার্থ সিনহা সহ আরও অনেকে। এই ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন, পরিচালক অরুণ রায় নিজেই। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ময়ূখ-মৈনাক। আগামী ৫ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে 'হীরালাল' ছবিটি।
প্রসঙ্গত, ১৮৬৬ সালে অধুনা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন হীরালাল সেন। এক অত্যন্ত ধনী পরিবারে বড় হয়েছিলেন তিনি, তাঁর জীবনের অন্যতম নেশা ছিল স্থিরচিত্র তোলা। ১৮৯৮ সালে কলকাতা স্টার থিয়েটারে গিয়ে চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়েন। ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করেন ক্যামেরা এবং তাঁর ভাই মতিলাল সেন খোলেন ছবি প্রযোজনার সংস্থা। নাম ছিল 'রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি'। নান্দনিকতা এবং বাণিজ্য, দুইয়ে মিলে পরের কয়েক বছরে মধ্যে এই কোম্পানির সঙ্গে মিলে বিজ্ঞাপনের ছবি, ডকুমেন্টারি ও থিয়েটারের দৃশ্য চলচ্চিত্রায়িত করে এক ভিন্ন মাত্রা দেন হীরালাল সেন। কিন্তু হীরালাল ছিলেন শিল্পী। জানা যায়, তাঁর বাণিজ্যিক বুদ্ধির অভাবে ১৯১৩ সালেই বন্ধ হয়ে যায় তাঁর কোম্পানি। ১৯১৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় হীরালাল সেনের। তারই কিছুদিন আগে তার ওয়্যার হাউসে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁর সারা জীবনের কাজ।