সুমন মহাপাত্র


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

"ফ্যাতাড়ু" কে জানেন?  এরা হিরো।  এরা উড়তে পারে এমন মানুষ। না, ঝাঁ চকচকে পোশাক এরা পরে না। তবে এরা শহুরে প্রান্তিক মানুষের হয়ে আওয়াজ তোলে। এরা ওদের নেতা।


"তখন আমৃত্যু লিখে যাব প্রতিবাদ/ উন্মত্ত হিংস্র নিরবধি/ এ যদি সমাজ হয়/তবে আমি সমাজবিরোধী" - প্রথা বিরোধের ফিনিক্স পাখি নবারুণ ভট্টাচার্য একবার বলেছিলেন, "ফ্যাতাড়ুরা আমার প্রিয় চরিত্র, আমার মনের কথা ওরা বলে।" ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাই সাই বলে উড়ে বেড়ায় তা জানি। আর কী বলে?  ওরা যেমন বলে তেমন করে। পুঁজিবাদ, শোষণ এ সবের বিরুদ্ধে ওরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আর যদি ওদের পাশে "চোক্তার" এসে জোটে তাহলে তো কথাই নেই, একেবারে যুদ্ধ পরিস্থিতি। চোক্তার কে? এরাও নিম্নবর্গের নেতা। চোক্তার আর ফ্যাতাড়ুদের যদি মহামিলন হয় তাহলে সর্বশক্তিমানকেও ওরা মুন্ডহীন করে দিতে পারে। এভাবেই গিমিক দিয়ে সুগভীর রাজনৈতিক কথা বলতেন নবারুণ।


যার লেখায় আয়নার মতো স্বচ্ছ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, প্রতিঘাত। যে দীপ্তস্বরে চেঁচিয়ে বলতে পারে "এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।" একজন আগাগোড়া বিপ্লবী রাজনৈতিক লেখক বলছেন, "বিনুর মৃত্যু আমি দেখতে পারব না।" বিনু হলো "হারবার্ট" উপন্যাসের নকশালপন্থী সেই তরুণ, যে বলতো "পুলিসের লাঠি ঝাঁটার কাঠি/ ভয় পায় না কমিউনিস্ট পার্টি।" এক নকশাল ছেলের মৃত্যু দেখতে পারবেন না স্রষ্টা। এটাই কি তাঁর চরিত্রের প্রতি ভালোবাসা, মতাদর্শের প্রতি আকর্ষণকে ইঙ্গিত করে না!



"মৃতের সহিত কথোপকথন!" এ নেহাত বুজরুকি। বুজরুকি না স্বপ্নাদেশ, তার পর্যোলোচনা না করলেও এখানেই কালজয়ী হারবার্ট সরকার একজনকে বলেছিল, "জল না পেয়ে মরাপানা হয়ে যাচ্চে গো!" একটি চাঁপা গাছ জল না পেয়ে মরে যাচ্ছে, তা চাঁপা গাছ নাকি বিপ্লব, জল অর্থাৎ রসদ না পেয়ে নুইয়ে পড়ছে! তা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু এভাবেও যে বলা যায় তা নবারুণ না থাকলে হয়তো আলোকিত হত না। তবে যে গল্পকার, ঔপনাস্যিক, কবি সারা জীবন "মানছি না, মানব না" শোর তোলেন সে কিন্তু বিশ্বের এই রঙ্গমঞ্চে ছোট ভাবে অনেক বড় কথা বলে গিয়েছেন। "খোঁচড়" গল্পে নকশাল ছেলের পুলিসের গুলিতে মৃত্যু হচ্ছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে, তবু শাসক বলছে "জলসা ফলসা থামানো যাবে না, গান হোক, গান চলুক।" অর্থাৎ এ বিশ্বে নৃশংসতার আগুনেই উৎসব চলে। তা এত পরিষ্কার ভাবে হয়তো কেউ বলেনি। নবারুণ বলেছেন।


তাঁর গল্পের অন্যতম নায়ক ডিএস, মদন ও কবি পুরন্দর ভাট। না এরা ভাট বকে না। হকের কথা বলে, অন্যভাবে। এই ধরুন আইপিএলে হানা দিল কিংবা বসন্ত উৎসবে ব্যাগড়া করল। কিংবা এই ফ্যাতাড়ুরা মিলে ফ্লোটেলে পচা আলু, সেলুন থেকে আনা কাটা চুল, বাতিল টুথব্রাশ ছুড়ে মারল। নবারুণ কবি পুরন্দর ভাটকে দিয়ে বহু কবিতা বলিয়েছেন যেমন, "বড়লোকের গাড়ির টায়ার/ ফুটো করে লাগাও ফায়ার/ নজরটুকু রাখবে যেন/ আঁচটুকু না লাগে আয়ার", এ-ও কিন্তু প্রতিবাদ।


বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী মুখ নবারুণ। তথাকতিত অমান্য ভাষায় তাঁর সৃষ্টি। তাঁর গল্প উপন্যাস নিয়ে নাটক হয়েছে, ছবি হয়েছে, বিতর্কও হয়েছে। বাঙালী সবসময় "রিফাইনড মিডিওক্রিটি" পছন্দ করে কিন্তু তিনি "ভাতঘুম উপন্যাস" লেখেন না। তাই সমাজের সম্মান চান না। জোরালো কলমের আঘাত হয়তো নবারুণের কলমকেই বলে। তিনি বিপ্লব লেখেন। "লুব্ধক","কাঙাল মালসাট" এই অন্যরকম ক্ষেতেরই ফসল। তিনি সবার থেকে আলাদা। তিনি নবারুণ। আজ জন্মদিনে ফ্যাতাড়ুর স্রষ্টাকে শ্রদ্ধার্ঘ।