আন্তর্জাতিক নারী দিবস, লিখলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী, গায়িকা, সমাজকর্মী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা...


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রতিবছরই তো নারী দিবস পালন করছি। অথচ, World Economic Forum-এর হিসাবে আমরা এখনও নারী-পুরুষ সমতা থেকে প্রায় ১০০ বছর দূরে। নারী-পুরুষ সমতায় এই ফাঁকটুকু কমুক। তার জন্য যেন আরও ১০০ বছর অপেক্ষা করতে না হয়। আমরা তো কাজ করে যাচ্ছি, হয়তবা ধীরে ধীরে এই ফাঁকটা কমছে। অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। তবে আমার মনে হয়, আরও অনেক পরিসরে নারীদের আরও অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। এখনও শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা অনেকটা পিছিয়ে। এখনও 'চাইল্ড ম্যারেজ' একটা বড় ইস্যু। এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কন্যা ভ্রূণ হত্যা হয়ে চলেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় নারী-পুরুষ সমতার ভাবনাটা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া প্রয়োজন। পরিবার থেকেই এই মূল্যবোধটা তৈরি হয়। পরিবারে হয়ত বাবা-মা, ভাই-বোনের ক্ষেত্রে আলাদা আচরণ হচ্ছে। সেখান থেকেই একজন শিশু সেটা ধারণ করে বড় হয়। বড় হয়ে বিভিন্ন কাজে সেটারই প্রতিফলন ঘটে। আমার মনে হয় পরিবার থেকেই নারী-পুরুষ সমতার শিক্ষাটা শুরু করা উচিত। একজন শিশুর কাছে আমাদের বাবা-মায়েদের উদাহরণ তৈরি করতে হবে। যেন তাঁদের মাথায় এই বৈষম্যের বিষয়টাই না আসে। তাহলে সেই শিশু যখন বড় হচ্ছে, তার মাধ্যমেও পরিবারে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে সেই সমতার প্রতিফলন ঘটবে। এভাবেই হয়ত ধীরে ধীরে সমতায়নের পথে আমরা এগোতে পারব। আমার বাড়ির কথা যদি বলি, তাহলে বলব আমার বাবা-মা হয়ত অত সচেতনভাবে এই নারী-পুুরুষ সমতার বিষয়টা শেখাননি। তবে তারপরেও আমি আমার পরিবারে এই সমতা দেখেছি। আমার বাবা কিন্তু বাড়ির কাছেও নিপুণ। আমার বাবা-মাকে দেখেছি বাড়ির কাজগুলো ভাগ করে নিতে। আমি যখন স্কুলে যেতাম, দেখেছি আম্মু হয়ত নাস্তা বানাচ্ছেন, আব্বু হয়ত চুল বেঁধে দিচ্ছেন। এবিষয়গুলো দেখেছি বলেই হয়ত এটা আমার জীবনে প্রভাব ফেলেছে।



কর্মক্ষেত্রে আমি একজন সমাজকর্মী হিসাবে কাজ করছি, আমার কাজও মহিলা ও শিশুদের নিয়েই। নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টা আমায় মাথায় রাখতে হয়। আমি আমার মেয়েকেও ওইভাবেই বড় করার চেষ্টা করছি। শিশু সন্তান যদি ছেলে হয়, তার জন্য আলাদা ভাবনা, মেয়ের জন্য আলাদা ব্যবহার সেটা যেন আমার মেয়ে না দেখে বড় হয়, সেটা মাথায় রাখি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলেরা ঘরের কাজ না করেই বড় হয়। তাই অনেক পুরুষ হয়ত ওই কাজগুলো পারেননা বা কখনও করেননি। তাহলেও একটু একটু করেই পরিবারের মধ্যে এই পার্থক্যগুলো ভাঙা উচিত। আমার পরিবারেও সেটাই চেষ্টা করি। আমি আর সৃজিত (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) দুজনেই ব্যস্ত, তবুও যতক্ষণ দুজনে বাড়িতে থাকি কাজটা ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করি। সৃজিত হয়ত breakfast বানালো, আমি হয়ত বাকি কাজ করলাম। আমার মেয়ে এটা দেখছে এবং শিখছে। আবার বাড়ির বাইরে কাজের ক্ষেত্রেও আমার মেয়ে আমার সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ঘোরে, দেখে আমার ভূমিকাটা ঠিক কী? তাই আশারাখি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মে নারী-পুরুষ সমতায় এই যে ফাঁকটা আরও কিছুটা কাটবে। 


রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেখি, অনেক নারীই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও একজন মহিলা। তারপরেও আমি বলব এখনও অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের জায়গায় নারীদের উঠে আসতে হবে। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও দেখা যায় নারী পরিচালক তুলনায় অনেক কম। সিনেমার গল্পও পুরুষকেন্দ্রিক। মহিলাদের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় কমই দেখা যায়। গল্পগুলিই আসলে তেমন হয়। সেই জায়গাতেও উদাহরণ তৈরি করতে হবে। কেউ একজন এগিয়ে এলে অন্যেরাও তাঁকে দেখে এগোবে।