রণিতা গোস্বামী:  চ্যাম্প, ককপিট, এর পর 'দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেনচার্স'-এর 'কবীর' নিয়ে আগ্রহ ছিল। টালিগঞ্জের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছিল নানান আলোচনা। প্রযোজনা সংস্থার তরফে এবং পরিচালক, অভিনেতাদের তরফে বারবার বলা হয়েছে এটা কোনও মেলোড্রামাটিক নয়, এক্কেবারে রিয়েলিস্টিক সিনেমা, অন্যরকম সিনেমা যা বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আগে কখনও হয়নি। তাই আগ্রহটা আরও বেড়ে যায়। অবশেষে Friday the 13th (2018) মুক্তি পেয়েছে দেবের 'কবীর'।  তবে আদপে কেমন হয়েছে সিনেমাটি? আনলাকি 13 কি দেবের জন্য লাকি হল, নাকি এক্কেবারেই না? চলুন দেখে নেওয়া যাক...


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সিনেমার গল্প 


শহরে পর পর বিস্ফোরণ, এমন অবস্থায় রাস্তায় গাড়ি পাওয়া ইয়াসমিন খাতুনের পক্ষে বড়ই দুস্কর হল। মুম্বই থেকে হাওড়া যাওয়ার দুরন্ত এক্সপ্রেস ধরবেন ইয়াসমিন (রুক্মিনী মৈত্র)। তাড়াহুড়ো আছে। অথচ ট্যাক্সি মিলছে না। অবশেষে, ট্যাক্সি মিললেও তাতে বেশিদূর যাওয়া গেল না। মাঝ রাস্তাতেই নেমে পড়তে হল। কী করে পৌঁছবেন স্টেশন? ইয়াসমিন ( রুক্মিনী মৈত্র) হাত দেখানোয় অবশেষে একটা গাড়ি দাঁড়ালো। কাচ সরাতেই দেখ মিলল 'কবীর' (দেব) এর। সেই ইয়াসমিনকে(রুক্মনী মৈত্র) স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিল। ঘটনাচক্র ট্রেনেও ইয়াসমিনের সহযাত্রী হল কবীর। তারপর তো একের পর এক ঘটনা। সিনেমার গল্পটা না হয় এই পর্যন্তই জানলেন, পুরো গল্পটা খোলসা করলে এমন একটা সাসপেন্স থ্রিলারের মজাটাই চলে যায়, তাই নয় কি?


বিশ্লেষণ


এটুকু হলফ বলতে পারি সিনেমাটা দেখলে আপনিও যে  প্রথমেই সবটা বুঝে যাবেন, তেমনটা এক্কেবারেই নয়। প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত আপনি নিঃশব্দে হলের মধ্যে বসে থাকবেন টানটান উত্তেজনা নিয়ে। আর মনে মনে আসলে কী হচ্ছে, বা হতে চলেছে তা বোঝার চেষ্টা করবেন। যতবারই উত্তর মেলানোর চেষ্টা করবেন ততবারই ঘেটে যাবেন, দেখবেন যেটা ভাবছিলেন তেমনটা বিন্দুমাত্র নয়। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এখানে উল্টোদিক থেকে গল্পটা বলেছেন।  বর্তমান প্রেক্ষিতে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে ফিরে গেছেন ফ্ল্যাশব্যাক-এ। কে যে আসল অপরাধী কিছুতেই বুঝে উঠতে পারবেন না।


মুম্বই বিস্ফোরণ, কলকাতা, বড়বাজার, ইমতিয়াজ, নাশকতার পরিকল্পনা, এসটিএফ, কমান্ডো, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নানান সব শব্দ ঘোরাফেরা করেছে সিনেমার মধ্যে। আর এই সমস্ত শব্দ যত এসেছে ততই বেড়েছে উত্তেজনা, সাসপেন্স। 


আরও পড়ুন-দেব কেমন মানুষ? এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকারে খোলসা করলেন পরিচালক অনিকেত



ত্রুটি


সিনেমার বিষয়বস্তু প্রায় পুরোটাই ট্রেনের মধ্যে আবর্তিত হয়েছে। ঘটনাক্রেমে মুম্বই বিস্ফোরণ, কলকাতার বড়বাজার এলাকায় বিস্ফোরণ দেখানো হলেও কোথাও যেন মনে হয়েছে এই ঘটনাগুলি আরও একটু বিস্তারিত দেখালে বোধহয় ভালো হত। 


অভিনয়


এখানে 'কবীর'-এর চরিত্রে দেবের অভিনয় বেশ সবলীল। রুক্মিনী যে এই ছবিতে নিজের সেরাটা উজার করে দিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। অন্যান্য চরিত্রগুলির মধ্যে ইমতিয়াজের ভূমিকায় নতুন মুখ অর্ণ মুখোপাধ্যায় এবং সতাফ ফিগার, প্রিয়াঙ্কা সরকারের অভিনয়ও বেশ প্রশংসার দাবি রাখে।


চিত্রনাট্য, সিনেমাটোগ্রাফি ও এডিটিং


পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের এই ছবির চিত্রনাট্যও বেশ টানটান, সাসপেন্সে ভরা। বেশ বোঝা যাচ্ছে সিনেমার প্রেক্ষাপট তৈরিতে আসল ঘটনাক্রম নিয়ে রিসার্চ করা হয়েছে। আর তাতেই চরিত্রগুলিও অনেকটাই জীবন্ত হয়ে উঠেছে। 'কবীর'-এর হরেন্দ্র সিংয়ের সিনেমাটোগ্রাফি নিয়েও প্রশ্ন তোলার যে কোনও জায়গা যে নেই তা বলাই বাহুল্য।


এই ছবির সম্পাদনা (এডিটিং) করেছেন রবিরঞ্জন মৈত্র। যিনি কিনা এর আগে 'মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার', 'ফিফটিন পার্ক এভিনিউ', 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান', 'চাঁদের পাহাড়', 'গয়নার বাক্স', 'পাগলু', 'মেঘে ঢাকা তারা', 'চতুষ্কোণ', 'চিরদিনই তুমি যে আমার ২', 'দ্য জাপানিজ ওয়াইফ'- এর মত সিনেমার সম্পাদনা করেছেন। বলিউডের 'একলব্য' (অমিতাভ বচ্চন, সইফ আলি খান) ছবিও তাঁরই সম্পাদিত; সেই রবিরঞ্জন মৈত্রই এই ছবির সম্পদনা করেছেন তাই তাঁর সম্পদনা নিয়েও প্রশ্ন তোলা অপ্রসঙ্গিক।


ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক


এই ছবিতে গানের সংখ্যা একেবারেই কম। তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমার মত নায়ক নায়িকার, গান নাচ একেবারেই নেই। এখানে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের করা ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিকও একেবারে যথাযথ জায়গাতেই ব্যবহার করা হয়েছে। যা সিনেমাকে একটা অন্যমাত্রা দিয়েছে।


সবশেষে প্রযোজক হিসাবে 'কবীর'-এর জন্য দেব যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে একথা না বললেই নয়। সবমিলিয়ে 'কবীর'কে আমি ৫-এর মধ্যে ৪ দেওয়ার পক্ষপাতী। যাঁরা এখনও সিনেমাটা দেখেননি তাঁরা চটপট হলে গিয়ে অবশ্যই 'কবীর' দেখে আসতে পারেন।


আরও পড়ুন- 'কবীর' দিয়েই কি বাজিমাত! টলিউডের হাল হকিকত নিয়ে খোলামেলা দেব