রণিতা গোস্বামী: মুক্তি পেয়েছে 'কবীর'। ছবি মুক্তির দিনই প্রযোজক ও অভিনেতা দেব এবং 'কবীর'-এর শ্যুটিং নিয়ে Zee ২৪ঘণ্টার সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। স্টার দেবের  সঙ্গে এটাই তাঁর প্রথম কাজ। কিন্তু, অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতায় কে এগিয়ে, মানুষ দেব নাকি অভিনেতা দেব? কথা বললেন রণিতা গোস্বামীর সঙ্গে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রথম দিকে 'ছ এ ছুটি', 'গোড়ায় গণ্ডোগোল' এর মতো কমেডি ছবি বানিয়েছেন। অথচ, তার পরের দিকের সিনেমাগুলির বিষয় অনেকটাই গুরুগম্ভীর। এখন আবার 'কবীর'-এর মতো সিনেমা বানাচ্ছেন যার বিষয়বস্তু সন্ত্রাসবাদ। এই যে ধারা পাল্টাচ্ছেন, এটা নিয়ে কী বলবেন?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- এটা খুব স্বাভাবিক। আমি একই জনারে সিনেমা বানব কেন? আমি কমেডি পছন্দ করি, আমি থ্রিলার পছন্দ করি, আমি পলিটিক্যাল সিনেমা বানাব, আমি আবার একটা কমেডি সিনেমা করছি এরপরেই, তারপর একটা বায়োপিক বানাতে চলেছি। আমার জনারটা ওই বালিগঞ্জ সার্কুলার থেকে বালিগঞ্জ প্লেস পর্যন্ত 'আমি, তুমি সে ও সখা'র মত সিনেমা করেই যাব, করেই যাব এমনটাও নয়। বিভিন্ন জনারের ছবি বানাব, কখনও কোনোওটা ভালো লাগবে, কখনও লাগবে না। কিন্তু আমি ছবিটা বানাই আমার মনের আনন্দে, তাই সে জন্য বিভিন্ন ধরনের বিষয় বেছে নেব।


পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এর আগে সাংবাদিকতা করেছেন। ফলে, এই প্রশ্নটা উঠে আসে যে পরিচালনা নাকি সাংবাদিকতা, কোনটা বেশি পছন্দের?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- না, আসলে আমি যে সাংবাদিকতা করেছি সেটা আমাকে ছবি বানাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, আমি যে প্রচণ্ডভাবে বেড়াতে ভালোবাসি, খেতে ভালোবাসি সে সবই আমার ছবির মধ্যে রিফ্লেক্টেড হয়। ছবি একটা মিলিত বিষয়। তবে যদি সাংবাদিকতার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে, তাহলে পর্যবেক্ষণ অনেক বেশি থাকে। ফলে সেটা ছবি বানাতে অনেক সাহায্য করে।
অভিনেতা দেব বা প্রযোজক দেব উভয়ের সঙ্গেই 'কবীর'-এ আপনার প্রথম কাজ। ছবি বানানোর সময়টা জুড়ে অভিনেতা দেবকে আপনি কীভাবে দেখেছেন?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- অভিনেতা দেবের সবথেকে একটা ভালো বিষয় হল ভীষণ মন দিয়ে কথা শোনার চেষ্টা করে, বোঝার চেষ্টা করে এবং সেইমত কাজটাও করার চেষ্টা করে।  যতটা সময় ও ওয়ার্কশপ করেছে এই ছবিটার জন্য সেটাতো আমি নিজেও কখনও ভাবিনি। ও যে এই ছবিটার জন্য এতটা খাটবে তা আমার ধারনার বাইরে ছিল। এই ছবি দেখার পরে ওর অভিনয় নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন করতেন, তাঁরা আশা করি জবাব পেয়ে যাবেন।


যদি অভিনেতা হিসাবে দেবকে ৫ এর মধ্যে নম্বর দিতে বলি তো কত দেবেন?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- আমি অভিনেতা দেবকে ৫-এর মধ্যে ৪ দেব, কিন্তু ৫-এর মধ্যে ৭ দেব প্রযোজক দেবকে।


অভিনেতা বাদ দিয়ে যদি মানুষ দেবকে নিয়ে প্রশ্ন করি তাহলে কী বলবেন?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- কী বলব, অসম্ভব ভালো একটা মানুষ। আমি না ভয়ের চোটে একজন অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর রেখেছিলাম এই ছবিতে। ভেবেছিলাম, সুপারস্টারের হয়ত কতরকম নখরা থাকতে পারে! কিন্তু, ও এতটাই নমনীয় যে কী বলব। ৫৭ ঘণ্টা একটা ট্রেন চললে সেই টয়লেটের অবস্থা কী ভয়ানক হয় তো বুঝতেই পারছ। সেটায় আমরা কেউ যেতে পারছি না। অথচ ও সেখানে ঢুকে অবলীলায় অভিনয় করেছে। ও মানুষ হিসাবে এত খোলামেলা যা ভাবাই যায় না।
মানুষ হিসাবে দেবকে ৫ এর মধ্যে নম্বর দিতে বললে ৪০ দেব। বড্ড ভালো মানুষ ও।


শুনেছি 'কবীর' এর শ্যুটিং না কি বন্দুক নিয়ে হয়েছে এবং তাতে কি সত্যি সত্যিই গুলি ছিল? 


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- আসলে একদিন কমান্ডো এসছিল আমাদের সাপোর্ট করার জন্য। কিছুটা শ্যুটিং করার পর জানতে পারলাম তাতে সত্যি সত্যিই গুলি রয়েছে। তখন ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, হাত ফসকে একটা গুলি চলে গেলে কী হত! একে ৪৭ থেকে তো একটা গুলি চলে না, চলতেই থাকবে! জানার পর সেগুলি থেকে গুলি বের করা হল তারপর শ্যুটিং হল।


শ্যুটিংয়ের একটা অভিজ্ঞতা বলুন যেটা আপনার মনে দাগ কেটেছে।


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- কোনটা বলব, অনেক অভিজ্ঞতা। সবথেকে যেটা বলার মত সেটা হল, ট্রেনে শ্যুটিং। ট্রেনের মধ্যেই টানা শ্যুটিং, এক একটা আলাদা আলাদা শট নেওয়া এবং তার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে তৈরি হওয়া। ট্রেন চলার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে বাইরেটা চেঞ্জ হচ্ছে সে ভাবে সবকিছু পরিবর্তন করা। আলো বদলাচ্ছে তার সঙ্গে আমরাও আলো চেঞ্জ করছি। আরও কত কী! এগুলো একটা সাংঘাতিক ব্যাপার। একটা চলন্ত ট্রেনে ছবিটার ৫০ শতাংশ শ্যুট করা হয়েছে। সবথেকে বড় কথা, ছবিটার বেশিরভাগ শ্যুটিং অরিজিনাল লোকেশনে হয়েছে। একদম ন্যাচরাল আলোয় ছবির শ্যুট হয়েছে। তার উপর ক্যামেরা স্ট্যান্ডে ছিল না, সারাক্ষণ হাতে হাতে ঘুরেছে। এই ব্যাপারটা খুবই কঠিন ছিল।


'কবীর' বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন কী দেবে?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- দেখো বাংলা সিনেমায় এর আগে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ছবি হয়নি। তার উপর 'কবীর' যে মানে বানানো হয়েছে, তা একটা হিন্দি ছবিকেও টেক্কা দিতে পারে।  সেই পর্যায়ে ছবিটাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে। তাছাড়া এই ছবিটা যে সময় বানানো হল, সেই সময় ধর্মের নামে মানুষকে ভাগাভাগি করা হচ্ছে। তাই এই ছবিটা এই সময়ের সঙ্গে খুব প্রসঙ্গিক। এখানে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ আর ধর্ম কখনও এক হতে পারে না।


আপনার পরবর্তী ছবি কি সুভাষিণী মিস্ত্রির বায়োপিক?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- না, হৈচৈ আনলিমিটেড আমার পরের ছবি, তারপর সুভাষিণী মিস্ত্রির বায়োপিক।


'কবীর'এর দর্শকদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?


অনিকেত চট্টোপাধ্যায়- দর্শকদের এটাই বলব যে, ছবিটা দেখুন। এটা বোঝার চেষ্টা করুন, ভারতবর্ষের ভিত্তিটা কী? এই দেশে আমরা একসঙ্গে থাকার জন্য এসেছি। সব ধর্মের মানুষের মধ্যে যাতে সম্প্রতি থাকে সেটাই এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে।


আরও পড়ুন- 'কবীর' দিয়েই কি বাজিমাত! টলিউডের হাল হকিকত নিয়ে খোলামেলা দেব


আরও পড়ুন-পরমেশ্বরী হয়ে মাথা ঘুরে গিয়েছে, অহঙ্কার হয়েছে, অকপট কনীনিকা