নিজস্ব প্রতিবেদন : প্যান্টের জিপ খুলে রাখা অথবা যৌনাঙ্গ দেখানো যৌন নির্যাতনের আওতায় পড়ে না। সম্প্রতি, পকসো আইনের অধীনে এমনই রায় দিয়েছে বম্বে হাইকোর্ট।  পাশাপাশি জোর করে হাত ধরে রাখলে সেটিও যৌন নিগ্রহের আওতায় পড়ে না বলে রায় দিয়েছেন নাগপুর বেঞ্চার বিচারপতি পুষ্পা গানেদিওয়ালা। আদালতের এমন রায়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কী বলছেন বুদ্ধিজীবীরা?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


অনির্বাণ গুহঠাকুরতা (আইনজীবী) - দেখুন এই রায়ে আমি হতবাক। আদালতের এধরনের রায় সমাজে চাঞ্চল্য তৈরি করছে। উদ্দেশ্যই হল আসল বিষয়। সেটা যদি ঘৃণ্য হয় তার সাজা হওয়া উচিত। সেখানে কীভাবে ঘটনা ঘটল তা অমূলক হয়ে যায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে বারবার মহামান্য আদালতের রায় কেন এমন হবে? আদালতের কাছ থেকে এধরনের রায় আমরা আশা করি না। এই রায়ের পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। এক্ষেত্রে হয়ত আবারও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ করবে। 



শতরূপা সান্যাল (পরিচালক) এটা যৌন নির্যাতন তো বটেই। আমার মনে হয় কোনও একটা জায়গা থেকে প্রভাবিত হয়ে তাঁরা এই রায় দিচ্ছেন। তাঁরা হয়ত ভাবছেন, শিশুরা হয়ত যৌন হেনস্থার বিষয়টা বুঝতে পারে না। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, শিশুরাও কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ বেশ বুঝতে পারে। যৌন হেনস্থাও বুঝতে পারেন। বড়রা সেটা বুঝতে পারছেন না সেটাই দুর্ভাগ্য়। আইন যথেষ্ট কড়া। এক্ষেত্রে শিশুদের যৌন হেনস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য় যে নির্দেশিকা, সেটা কি লঘু হয়ে যাচ্ছে না? বিষয়টা ইনসেনসেটিভ ভাবে দেখা হচ্ছে। যেকোনও বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই শিউরে উঠবেন। কড়াভাবে আইন যদি শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি না দেখে সেটা খুবই আতঙ্কের বিষয়।



দেবলীনা দত্ত (অভিনেত্রী) যিনি দুদিন আগে বলছিলেন skin to skin স্পর্শ না হলে molestation হিসাবে ধরা হবে না। তার মানে যদি কেউ কন্ডোম পরে ধর্ষণ করে, তাহলে সেটা ধর্ষণ হল না? এখন আবার তিনি বলছেন, যৌনাঙ্গ দেখানো হলে সেটা molestation হিসাবে ধরা হবে না। তার মানে যদি কেউ বাচ্চাকে ভুলভাল বুঝিয়ে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করেন, বা হস্তমৈথুন করেন তাহলে সেটা molestation হল না! যদি মানসিক ভারসাম্য হীনকে যৌনাঙ্গ দেখিয়ে কেউ কিছু করলে সেটাও molestation হল না! আমার মনে হয় ওনাকে পাগলা গারদে বন্ধ করে দিলে ভালো হয়। উনি সমাজের জন্য় খুবই বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছেন। 



সুদীপ্তা চক্রবর্তী (অভিনেত্রী) 


এই শব্দের জাগলারিগুলো চলবে। যৌন হেনস্থা আর যৌন নির্যাতন এই দুটোর মধ্যে অভিধান অনুযায়ী একটা পার্থক্য তো রয়েই গিয়েছে। এই শব্দের খেলাধুলো করেই এই রায়গুলো দেওয়া হচ্ছে। যদি সুক্ষ বিচারে দেখি তাহলে হয়তবা ঠিকই বলছেন, it is not a sexual act, it's abuse, সেটাই হয়ত তিনি বলতে চেয়েছেন। সেই হেনস্থাটুকু স্বীকার করুক, তাহলেই হয়। এমনিতেই অভিভাবকদের চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই বিষয়টা সেই চিন্তা আরও বাড়াবে। 


আরও পড়ুন-'প্যান্টের জিপ খুলে যৌনাঙ্গ দেখানো যৌন নির্যাতন নয়', বম্বে হাইকোর্টের রায়ে বিতর্ক অব্যাহত



রূপাঞ্জনা মিত্র (অভিনেত্রী) আমি তো নিজেও একজন সন্তানের মা। যদিও সেটা পুত্র সন্তান। তবে আমার নিজের এই রায়ের প্রতি খারাপ লাগা তৈরি হয়ে গিয়েছে। যেখানে   শিশুদের যৌন হেনস্থার বিষয়, সুরক্ষার বিষয়, সেখানে এই রায়কে পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে আমার মনে হয়। মা হিসাবে আমি রায়টা মেনে নিতে পারছি না। বেশিরভাগ মহিলাকেই কমবেশি এধরনের অত্যাচার শিকার হতে হয়। আমাদের স্মৃতিতে সেটা খুবই খারপভাবে থেকে যায়। এখানে মেয়েটার মা চলে এসেছিল বলে ধর্ষণ অবধি পৌঁছয় নি, কিন্তু উদ্দেশ্য তো সেটাই ছিল। আমার মনে হয় মেয়েটার সুবিচার হওয়া উচিত। আমি মা হিসাবে, সচেতন নাগরিক হিসাবে রায়ের পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।