Kingshuk Chatterjee: চাঁদের বান্ধবীর হাত ছেড়ে চলে গেলেন কিংশুক...
Kingshuk Chatterjee Death: চলে গেলেন গীতিকার কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। ও আমার বৌদিমণির কাগজওয়ালা, ও চাঁদ থেকে শুরু করে একাধিক জনপ্রিয় গান উঠে এসেছে তাঁরই কলম থেকে। বুধবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তে, তাঁকে কাছ থেকে দেখা ও চেনার স্মৃতি শেয়ার করলেন তাঁর বন্ধু।
সন্তু ধর: 'দিগন্ত টপকে যায় যে ভ্রমণ, গন্তব্য বিহীন তার মায়া...' আর এই মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে রাখি বন্ধনের সকালে তাঁর 'আনন্দের গান, দেখার বাগান'-এর উদ্দেশে পাড়ি। বাংলা গানের জগত তাঁকে চেনে 'চাঁদের প্রেমিক' নামে তিনি কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। কোনও দিন ভাবিনি তাঁর চলে যাওয়া নিয়ে কিছু লিখতে হবে। বাংলা শব্দের সঙ্গে সকাল-বিকাল যাঁর ওঠা বসা একসময় ঈর্ষান্বিত করত, হ্যাঁ যে সাধনা তাঁর ছিল তা স্পর্শ করার মতো ক্ষমতা অনেকেরই নেই। অনেকটা সময় ধরে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখা। সে কেমন সেটা তাঁর কবিতাতেই সে বলেছে ‘ঘরের খাই আমি বনেও যাই, বনের পথে পথে মোষ চড়াই, দারুণ ঝর্ণায় ভিজিয়ে আলজিভ সন্ধে হব হব ঝিঁঝিঁ রা উদাসীন-জড়িয়ে ভরপুর খুশির ল্যাদ খাই’।
সালটা ২০০৫, বারাসাত গর্ভমেন্ট কলেজের ক্যান্টিনে টেবিল বাজিয়ে গান গাইছি, এমন সময় একমুখ দাঁড়ি ফাঙ্কি চেহারার এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন, ‘গানটা কার লেখা?’ প্রথমে পাত্তা দিইনি, সে আমার টেবিলের সামনে এসে বসল, তারপর বলল ‘গানটা নিজের লেখা হলে চল আমার সঙ্গে। এখানে গেয়ে লাভ নেই। বেচতে শেখ।’ খুব রাগ হয়েছিল। পরে সিগারেট অফার করে বলল, ‘আমি কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। ও আমার বৌদিমণির কাগজওয়ালা গানটা আমার লেখা।’
এরপর কলেজের বাইরে কখনও মাসির চায়ের দোকানে তো কখনও হাটখোলার জুভেনাইল হোমের উল্টোদিকে কালুদার চায়ের দোকানের বেঞ্চে আড্ডা শুরু হল। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাবশিষ্য বলতেন নিজেকে। দিনযাপনও ছিল শক্তিরই মতো। একদিন সকালে সারা গায়ে কাদা মেখে ঠেকে এল, বললাম, ‘কী হয়েছে?’ বলল, ‘সারারাত কচু বাগানে পড়ে ছিলাম, চাঁদ খুঁজব বলে।’
চাঁদ ও মেঘের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ ছিল, যে কারণে ওঁর অধিকাংশ লেখাতেই চাঁদ ও মেঘ, এই দুই শব্দের ছড়াছড়ি, সেটা ‘ও চাঁদ তোর বান্ধবীদের সঙ্গে যাব’ বা ‘মেঘ হলে মন বিকেল বেলা একলা যাব মেঘের বাড়ি’ গানে হাজার হাজার মানুষের মন ছুঁয়ে গেছে।
লেখা নিয়েই বাঁচব, লেখাকেই পেশা করব, এটাই ছিল ওঁর জীবনের লক্ষ্য। জীবনযুদ্ধে আমরা কয়েকজন বন্ধু যখন ভিন্ন পেশার খোঁজে তখনও ও ওঁর বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় বসে লিখে চলেছে একের পর এক গান- ‘উটের দুধের পায়েস রেঁধে দিল হরির বউ, আহ্লাদে প্রাণ আটখানা তাই হরি নাচছে ছৌ...’ স্বপ্ন ছিল প্রপার সাউন্ড ডিজাইন করে নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে রিলিজ করা, কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ‘...বনের পথে ক্রমশঃ কুয়াশামাখা পৃথিবীর ভালো চাওয়া-মালিদের পাড়া’ পেরিয়ে অনেক দূর।
গান কীভাবে তৈরি হয় তা নিয়ে ছোট্ট একটি ডকুমেন্টারি করেছিলাম। সেসময় ওর কাছে পোষ্য ছিল সাদা ইঁদুর, তাদের হাতে নিয়েই বলে উঠেছিল কীভাবে তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় চাঁদ গানটা। আমায় বলেছিল , ‘সন্তু, পারলে আমার মতো অনেক গীতিকার রয়েছে, তাঁদের গান তৈরির গল্পও ক্যামেরাতে ধরিস।’ একথা বলার পরেই বলে উঠল ‘বুঝিনি বিষের থেকে দামি খাঁটি জ্যোৎস্না, মুর্খেরা পাগল হওয়ার আগে চাঁদ দেখে মরে’।
আরও পড়ুন- Shah Rukh Khan: বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে শাহরুখ, জওয়ান মুক্তির আগে মায়ের মন্দিরে কিং খান
সম্প্রতি চন্দ্রযান পৌঁছেছে চাঁদে, আর তার কয়েকদিন পরেই সেই চাঁদের খোঁজেই ‘খ্যাপা’ চাঁদে দিল পাড়ি। অজস্র লিটিল ম্যাগাজিন থেকে জনপ্রিয় দৈনিকে লিখে গিয়েছে অজস্র লেখা তবুও ও বলে গেল 'তেমন মাঝি হতে পারলাম কই'।
(কলমে কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু ও গীতিকার সন্তু ধর)