নিজস্ব প্রতিবেদন: ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক যুগের অবসান ঘটিয়ে রবিবার সকালে চলে গেলেন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক মৃনাল সেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস মৃণাল সেন নিজেই একজন প্রতিষ্ঠান ছিলেন। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, ও মৃণাল সেন এই তিনটি নাম ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে ট্রিলজি বললেও বোধহয় ভুল হবে না। ভারতীয় সিনেমার অন্যতম পথিকৃৎ মৃণাল সেনের প্রয়াণে তাঁকে স্মরণ করেছেন অমিতাভ বচ্চন, মহেশ ভাট, নন্দিতা দাসের মত ব্যক্তিত্ব।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, ''মৃণাল সেন আর নেই। উনি সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের সমতুল্য একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি একজন শিল্পী আবার বন্ধুও। আমি ওনার সিনেমা 'ভুবন সোম'-এ প্রথম গলা দিয়েছিলাম। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি। ''



শুধু অমিতাভ বচ্চনই নয়, সিমেমা নির্দেশক তথা অভিনেত্রী নন্দিতা দাস, মহেশ ভাট, মধুর ভান্ডারকর, সুজিত সরকার সকলেই প্রথিতযশা পরিচালকের মৃত্যতে শোকজ্ঞাপন করেছেন। নন্দিতা দাস লিখেছেন, '' এখন থেকে মৃণালদা কথা এবার থেকে পাস্ট টেনসে লিখতে হবে ভাবতেই পারছি না। তবে আমি আগে থেকেই জানতাম এটা ঘটতে চলেছে। আমি গত গত ১১ নভেম্বর ওনাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখনই তাঁর শরীর ভেঙে গিয়েছিলাম, তবও উনি আমার হাত ধরে ছিলেন। মৃণালদা নিজেই একটা পৃথিবী। আমার পৃথিবীও মৃণালদাকে ছাড়া সম্পূর্ণ নয়। ''



রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন উদ্ধৃত করে চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ ভাট লিখেছেন, '' পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহ ভাই, সবারে প্রণাম করে যাই।'' মহেশ ভাট লিখেছেন ''অনেক ধন্যবাদ মৃণালদা আমার জীবনে স্পর্শ রেখে যাওয়ার জন্য।''



সুজিত সরকার লিখেছেন, '' চিরনিদ্রায় মৃণাল সেন। আমার দেখা অন্যতম সেরা পরিচালক। তাঁর বানানো ছবি একটা অনুপ্রেরণা। তিনি সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের সমতুল্য। ''



পরিচালক মধুর ভান্ডরকর লিখেছেন, '' হঠাৎই বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেন দার মৃত্যু খবরে মর্মাহত হলাম। তিনি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ও সমাজে একটা বিপ্লব, জাগরণ। ২০১৫ সালে ওনার কলকাতার বাড়িতে ওনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। আমি ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।''



অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী লিখেছেন, ''চলচ্চিত্র জগতে উনি নিজেই একজন প্রতিষ্ঠান ছিলেন। তিনি একজন কিংবদন্তি। একজন গল্পকার, মৃণাল দা চলে গেলেন। আপনার আত্মার শান্তি কামবা করি। আপনার সিনেমা আমাদের কাছে ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা।''



সিনেমার প্রযোজক নীল মহাদেব পান্ডা টুইট করে শোকজ্ঞাপন করেছেন।



রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় নিজের বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশিষ্ট পরিচালক মৃণাল সেন। 'রাতভোর' (১৯৫৫) ছবি দিয়ে সিনেমা বানানোয় হাতেখড়ি হয় মৃণাল সেনের। যদিও সেই ছবিটি তেমন সাফল্যের মুখ দেখেনি। দ্বিতীয় ছবি 'নীল আকাশের নীচে' তাঁকে পরিচিতি দেয়। তৃতীয় ছবি 'বাইশে শ্রাবণ' তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠা দেয়। তাঁর পরিচালনায় বাংলার দর্শক উপহার পেয়েছে অসামান্য কিছু ছবি। মৃণাল সেনের সৃষ্টির ঝুলিতে রয়েছে 'ভুবনসোম', 'কোরাস', 'মৃগয়া', 'আকালের সন্ধানে', 'পুনঃশ্চ', 'পরশুরাম', 'একদিন প্রতিদিনে'র মতো অসামান্য সব ছবি। তাঁর শেষ ছবি 'আমার ভুবন' (২০০২)। সর্বমোট ২৭টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি, ১৪টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ও ৪টি তথ্যচিত্রের পরিচালনা করেছিলেন মৃণাল সেন।


 


কিংবদন্তী পরিচালকের ঝুলিতে রয়েছে ১৮টি জাতীয়, ১২টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার। মস্কো, বার্লিন, কান ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন মৃণাল সেন। ১৯৮১ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার। ২০০৫ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত বিনোদন জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। সাহিত্য ও শিল্পে অনস্বীকার্য অবদানের জন্য তাঁকে কম্যান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস (Ordre des Arts et des Lettres ) সম্মানে সম্মানিত করেছিল ফরাসি সরকার। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান কম্যান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস। মহীরূহের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন জগতে।