নিজস্ব প্রতিবেদন : বনশালির 'পদ্মাবত' ভারতের সিনেমার জগতে ইতিহাস গড়ুক বা না গড়ুক, সিনেমাটার মুক্তি নিয়ে দেশজুড়ে যে তাণ্ডব চলছে তা দেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করছে বৈ উজ্জ্বল করছে না। মাল্টিপ্লেক্সে আগুন লাগানো থেকে শুরু করে ভাঙচুর, জহরব্রত পালনের হুমকি, সুপ্রিম কোর্টে মামলা কীই না হচ্ছে! তবে গোটা সিনেমায় কিন্তু বিতর্কিত কোনও কিছু পাওয়া গেল না। হলফেরত দর্শকরা অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তবে এসব তো গেল বিতর্কের প্রসঙ্গ, কিন্তু সুফি কবি মালিক মহম্মদ জয়সির কবিতা 'পদ্মাবত' অবলম্বনে তৈরি ফিল্মটি আদপে কেমন?


সিনেমার গল্প
মেবারের রানা রাওয়াল রতন সিং (শাহিদ কাপুর) তাঁর স্ত্রী নাগমতির (অনুপ্রিয়া গোয়েঙ্কা) জন্য মুক্ত আনতে যাবেন সিংহল দেশে। সিংহলের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর সময় রাজকুমারী পদ্মাবতীর তীরের ঘায়ে ঘায়েল হন রতন সিং। সেখানেই তাঁদের আলাপ ও প্রেম। শেষমেশ পদ্মাবতীকে মেবারের রানি করে নিয়ে যান রাজা রাওয়াল রতন সিং। সিংহলের রাজকুমারী খুব সহজেই মেবারকে আপন করে নিয়ে হয়ে ওঠেন ছোট রানিসা। রূপে গুণে, বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ করেন সকলকে। রানির উপর নজর পড়ে রাজ পুরোহিতের । এরই মধ্যেই একদিন পদ্মাবতীর সঙ্গে রাজা রাওয়াল রতন সিংয়ের একান্তে সময় কাটানোর সময় গোপনে তাঁদেরকে দেখতে গিয়ে ধরা পড়েন রাজপুরোহিত। শাস্তি হিসাবে তাঁকে দেশছাড়া করা হয়। 


আদপে এই পুরোহিতই হল নাটের গুরু। মেবার থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি গিয়ে আশ্রয় নেন দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খলজির (রণবীর সিং) দরবারে।  তিনিই রানি পদ্মাবতী (দীপিকা পাড়ুকোন)-এর সৌন্দর্যে বর্ণনা করেন আলাউদ্দিনের কাছে। এরপরই পদ্মাবতীকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে ওঠেন খলজি। রানি পদ্মিনীকে পেতেই মেবার আক্রমণ করেন আলাউদ্দিন। এরপর পদ্মিনীকে পেতে খলজি যেসমস্ত কাণ্ড ঘটবেন? মেবারের রানা খলজিকে আটকাতে কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন রতন সিং শেষপর্যন্ত গল্পের পরিণতিই বা কী হবে, সে গল্পটা প্রেক্ষাগৃহে দেখাই ভাল।



বিশ্লেষণ
সিনেমাটি তৈরি হয়েছে সুফি কবি মালিক মহম্মদ জয়সির কাব্য অবলম্বনে। সেকথা বার বার জানিয়েছেন পরিচালন বনশালী। তাই সিনেমা দেখে সেটির সঙ্গে ইতিহাসকে মেলাতে যাওয়া বৃথা। 'পদ্মবত'কে তাই কল্পকাহিনীর মতো করেই দেখা ভালো। 


অহেতুক তাণ্ডব না করে তাই করণি সেনার উচিত চটপট 'পদ্মাবত্' দেখে ফেলা। কারণ, গোটা সিনেমাটিতেই রানি পদ্মিনীকে একেবারে পবিত্র ভারতীয় নারী হিসাবেই তুলে ধরা হয়েছে।  তিনি শুধু রূপেই ভোলাননি, গুণে ও বুদ্ধিমত্তাতেও মুগ্ধ করেছেন। রাজপুত রানি হিসাবে রাজপুতদের মাথা আরও উঁচু করেছেন।  


একইভাবে রাজপুতদের বীরগাথা শৌর্য-বীর্য আরও বেশি মহিমান্বিত করেছেন রানা রাওয়াল রতন সিং। চিতোরের রাজা কীভাবে একাই যে আলিউদ্দিন খলজিতে টেক্কা দিয়েছিলেন তাকে পর্দায় সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন রাওয়াল রতন সিং রূপী শাহিদ কাপুর।


আর খলজির কথা বলতে গেলে বলতে হয়। গোটা সিনেমার প্রথম থেকে শুরু পর্যন্ত তাঁকে হিংস্র, উন্মাদ রাক্ষস ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। খলজির চরিত্রটা বনশালির সিনেমা দেখে যেভাবে ঘৃণ্য বলে মনে হয়েছে, তা ইতিহাস পড়েও এতটা মনে হবে কিনা জানা নেই। পাশাপাশি, আলাউদ্দিন খলজির উভকামী হিসাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক। এখানে সমকামী কাফুরের (জিম সর্ভ) সঙ্গে খলজির রসায়নের জায়গাটাও বেশ মজাধার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 


সবমিলিয়ে পরিচালক রাজপুতদের জয়গান করেছেন, তাতে অন্তত  বিতর্কের যে কোনও জায়গা নেই তা স্পষ্ট।




 

ত্রুটি 


সিনেমায় সে অর্থে বিশেষ কোনও ত্রুটি চোখে পড়েনি। শুধু কিছু কিছু জায়গা খুবই অস্বস্তিকর লেগেছে। যেমন মেবারের সমস্ত রাজপুত মহিলাদের নিয়ে রানি পদ্মিনীর জহর ব্রত পালেনর সময় একজন সন্তানসম্ভাবা মহিলা আগুনে ঝাঁপ দেওয়া। আর দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় ফার্স্ট হাফের গতি কিছুটি স্লথ, এই যা। 


অভিনয়


শুধু সৌন্দর্যেই নয়, রানি পদ্মিনী রূপে দীপিকার অভিনয়ও যে দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধুমাত্র চোখের অভিব্যক্তিতেই অর্ধেক বাজিমাত করে ফেলেছেন তিনি। সিনেমা রানা রাওয়াল রতন সিং রূপে তাঁর অভিনয়ের যতটা জায়গা রয়েছে শাহিদ কাপুর তার সবটুকুই পূরণ করেছেন।


তবে সবাইকে ছাপিয়ে যিনি গেলেন তিনি হলেন খলজি রণবীর।  পাগলাটে, হিংস্র, ভয়নক, ঘৃণ্য, নৃশংস খলজির এই সবকটি রূপই অসামান্য দক্ষতায় তুলে ধরেছেন তিনি।  রণবীরের খলজি রূপের পৈশাচিক নাদ শুনলে দর্শকদের গায়ে কাঁটা দেবে। এককথায় তাঁর অভিনয় অনবদ্য বললেও কম বলা হবে।
বলা ভালো সিনেমার নাম 'খলজি' রাখলেও মন্দ হত না। 



সব মিলিয়ে বনশালির পদ্মাবতীকে ৫ এর মধ্যে ৪ দেওয়াই যায়।