সৌরভ পাল  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ছবিটা 'কান'-এ না গেলে হয়ত এত আলোচনাই হত না! 
লেখা হত না হাজার হাজার শব্দ!
পত্রিকার শিরোনামেও উঠে আসত না বাঙালি পরিচালকের 'বিশ্বজয়ের কল্পকথা'। কেউ কোনওদিন জানতেই পারত না 'পোয়েম', 'মেমরি', 'পোয়েট' এবং 'ইমাজিনেশন' এই চার 'নির্বাক' চরিত্রের কথা। অগোচরেই থেকে যেত 'কান' ফেরত সিনেম্যাটোগ্রাফারের কথা। ভুল করেও মনে পড়ত না, ছবিটায় গান গেয়েছে কে!  
একশো, দুশো, হাজার, দুহাজার, না হয় আরও একটু বেশি ভিউ পেয়েই ইতিহাসের পাতায় থেকে যেত 'পোয়েজি অ্যান্ড পিস'।  
এমনকি ইতিহাস তৈরির আগেই নিজের জীবনকালেই 'জীবাশ্ম' হয়ে যাচ্ছিল ২৩ মিনিটের 'ছোট্ট' ছবি 'পোয়েজি অ্যান্ড পিস'। সিনেমাটাই হয়ত হত না! সে এক দীর্ঘ স্মৃতি। বিস্মৃতি! 
কল্পনার ভ্রূণকে ভূমিষ্ঠ করতে হলে যা যা প্রয়োজন ছিল তা তা পাওয়া যায়নি, ঠিকই। তবে যাঁদের যাঁদের প্রয়োজন ছিল তাঁরাই জুরে গেল একে একে। সদ্য ২৪ হওয়া পরিচালক রাহুল রায় নিজের কল্পনাকে চিত্রায়িত করতে হাতের কাছেই পেয়ে গেল চিত্রগ্রাহক ঋজুকে। যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল শান্তনুও। ঋজু মজুমদার নিজের আসল কাজটা করলেন ক্যামেরাতেই। কবিতা হল চন্দ্রমৌলি। কবিতা টবিতা খুব একটা পছন্দ নয়, তবে ছবিতে কবির ভূমিকায় রয়েছেন দেবস্মিতা দাস। মেমরি অর্থাৎ কল্পনা'র ভূমিকায় তূর্য ঘোষ। বাকি কর্মকাণ্ডে এডিটর ইমরান ইব্রাহিমি, সাউন্ড ডিজাইনার রাজেশ কুমার পাঠক এবং গায়ক সন্দীপন দে, এদের গোটা টিম ওয়ার্কই বাংলাকে পৌঁছে দিল বিশ্ব দরবারে। এখন সবার কানে কানেই পৌঁছে গিয়েছে একথা, কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের শর্ট ফিল্ম কর্নারে নির্বাচিত হয়েছে 'পোয়েজি অ্যান্ড পিস'।   


কবিতা।
স্মৃতি।
কবি।
কল্পনা। 

চার নির্বাক চরিত্র নিয়ে তৈরি একটা ছবি, যার নাম 'পোয়েজি অ্যান্ড পিস'। "যখন কোনও শিল্পী কোনও শৈল্পিক কাজ করে তখন তাঁর জেন্ডার বিলিভ তাঁকে ডমিনেট করে। কিন্তু সেটা অবশ্যই গতানুগতিক নয়। যখন কোনও কবি কোনও কবিতা লেখেন তখন তাঁর সৃষ্টি অবশ্যই সেই একই জেন্ডার বিলিভের ওপরই হয়। তবে সেটা কোনও লিঙ্গকে নির্দেশ করে না", নিজের সিনেমার ভাবনা নিয়ে বলতে গিয়ে নিজের শৈল্পিক কল্পনা নিয়ে এই কথাগুলোই বললেন পরিচালক রাহুল রায়। সাদা কালো রঙের ছবিতে পরিচালক রাহুল 'ফ্যামিনিটি'র ছাপ রেখেছেন কবির হাতে গোলাপি কলম ধরিয়ে। সমুদ্রের ঢেউকে আয়নায় রিফ্লেক্ট করিয়ে যেমন জীবনবোধ তুলে ধরেছেন, তেমন ভাবেই পরিচালক সমুদ্রের গর্জনকে থামিয়েছেন কেবল 'ডেথ' সংলাপে।   


ছবির কল্পনাকে ঠিক যে যে পথে হাঁটাতে চেয়েছিলেন পরিচালক ঠিক সেই পথেই ক্যামেরাকে কথা বলিয়েছেন ঋজু মজুমদার। "নিজেকে প্রমাণ করার প্রয়োজন ছিল। তথাকথিত পড়াশুনা করা সিনেম্যাটোগ্রাফারের একের পর এক 'না', বাধ্য হয়েই ক্যামেরা তুলে নিয়েছিলাম নিজের হাতেই। এর পরেরটা... ইতিহাস। আলো নিয়ে খেলেছি। পরিচালকের ভাবনাটা সঠিক সঠিক ভাবে কমিউনিকেট করতে পেরেছি বলেই আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি", মত সিনেম্যাটোগ্রাফারের। 


এত না হয় গেল নেপথ্য নায়কদের কথা। কবি (দেবস্মিতা) এবং কবিতা (চন্দ্রমৌলি), দুজনেই প্রথমবার ক্যামেরার সামনে, আর প্রথমবারেই কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মত মঞ্চ, কেমন অনুভূতি? প্রশ্নের উত্তরে একগাল হেসে কবি'র উত্তর, "আমি অভিনয় জানি না। রাহুল (পরিচালক) বাধ্য করল করতে, তাই করলাম"। আর কবিতা, যেন কিছুই বলার নেই, "কবিতার স্ট্রিং তো কবির হাতে", এমনই মত চন্দ্রমৌলির। সঙ্গে যুক্ত করলেন, "কবিতা কবির থেকেও ফ্রি"।