নিজস্ব প্রতিবেদন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যাঁর ব্যাপ্তির প্রায় কোনও সীমারেখাই নেই। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদক্ষেপেই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন তিনি। কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ নন, আজ ২৫ বৈশাখ তাঁর ১৫৮তম জন্মজয়ন্তীতে হাস্য রসিক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু কথা হতেই পারে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষটি এক্কেবারেই রাশভারী ব্যক্তি ছিলেন না। বরং বেশ রসিক মানুষ ছিলেন বলেই জানা যায়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বেশকিছু ঘটনায়। জানা যায়, একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে খেতে বসেছিলেন। গান্ধীজি লুচি খেতে এক্কেবারেই ভালোবাসতেন না। তাই তাঁকে ওটসের পরিজ খেতে দেওয়া হয়। আর কবি খাচ্ছিল গরম গরম লুচি। এটা দেখে গান্ধীজি তাঁকে বলে বসলেন, 'গুরুদেব তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছো।'  এর উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'বিষ হবে তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।'



রবীন্দ্রনাথের অভ্যাস ছিল তিনি যখনই কোনও উপন্যাস লিখতেন তখন সেটা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। তাঁর সেই আসরে মাঝে মধ্যেই যোগদান করতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। একবার আসরের বাইরে তিনি জুতো খুলে আসার কারণে তাঁর জুতো চুরি হয়ে যায়। অগত্যা, পরের দিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জুতো দুটো কাগজে মুড়ে সেটা বগলদাবা করে আসরে ঢুকলেন। কবি সেটা বুঝতে পেরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করলেন, শরৎ তোমার বগলে ওটা কী পাদুকাপুরাণ? রবি ঠাকুরের মুখে এই কথা শুনে সকলেই হাসতে শুরু করলেন।



জানা যায়, মরিস সাহেব শান্তিনিকেতনে ইংরাজী ও ফরাসি পড়াতেন। তিনি একবার তাঁর ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে বললেন, গুরুদেব সুগার অর্থাৎ চিনি নিয়ে একটা গান লিখেছেন। যেটা খুবই মিষ্টি হয়েছে। প্রমথনাথ বিশী সেকথা শুনে বললেন চিনি নিয়ে লিখলে সেটা তো মিষ্টি হবেই। তা গানটা কী? মরিস সাহেব গাইলেন, 'আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী।' এটা শুনে প্রমথনাথ বিশী বললেন, গানটাতে বেশ কয়েক চামক চিনি মিশিয়েছেন গুরুদেব। তাই এতো মিষ্টি। তবে এই চিনিই যে সুগার সেটা আপনাকে কে বললো? মরিস সাহেব জানালেন কে আবার স্বয়ং গুরুদেব নিজেই তাঁকে একথা জানিয়েছেন।



একবার শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক নেপাল রায়কে রবীন্দ্রনাথ লিখে পাঠালেন, 'আজকাল আপনি কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এজন্য কাল বিকেলে আমার এখানে এসে আপনাকে দণ্ড নিতে হবে।'


একথা শুনে চিন্তিত নেপালবাবু পরের দিন কবির কাছে উপস্থিত হলেন। আগের রাতে দুশ্চিন্তায় তিনি ঘুমাতেও পারেননি। তারপরেও তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তার মধ্যেই বসিয়ে রেখেছেন কবিগুরু। অবশেষে একটি মোটা লাঠি হাতে এলেন কবি। নেপালবাবুর তখন ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান লুপ্তপ্রায় হওয়ার অবস্থা। তিনি ভাবলেন, সত্যিই বুঝি লাঠি তাঁর মাথায় পড়বে। কবি সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, 'এই নিন আপনার দণ্ড! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন।'


কবিগুরুর এধরনের রসিকতার বহু ঘটনাই রয়েছে। যা থেকে কবিগুরু রসবোধের গভীরতা সম্পর্কে জানা যায়। 


  আরও পড়ুন-২৫শে বৈশাখ: শতবর্ষ পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্রনাথ