শর্বরী দত্তের মৃত্যু: `অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে হয় না` মত অগ্নিমিত্রা পালের, আর কে কী বলছেন?
Zee২৪ ঘণ্টার সঙ্গে কথা বললেন অগ্নিমিত্রা পাল, জ্যোতি খৈতান, অভিষেক রায়, অভিষেক দত্ত, তেজস গান্ধী। কী বললেন তাঁরা?
নিজস্ব প্রতিবেদন : বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের রহস্যজনক মৃ্ত্যুর ঘটনায় তদন্ত করছে পুলিস। তবে শর্বরী দত্তের এমন মৃ্ত্যুর খবরে হতবাক কলকাতার ডিজাইনার মহল। ওনার মতো ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির একজন আইকনের মৃ্ত্যুতে প্রতিক্রিয়া দিলেন কলকাতার নামী ডিজাইনাররা। Zee২৪ ঘণ্টার সঙ্গে কথা বললেন অগ্নিমিত্রা পাল, জ্যোতি খৈতান, অভিষেক রায়, অভিষেক দত্ত, তেজস গান্ধী। কী বললেন তাঁরা?
অগ্নিমিত্রা পাল - আমার মনে হয় না এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু। আমার ধারণা কোনও কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই ওঁর মৃত্যু হয়েছে। ওঁর সঙ্গে আমার গত ২৫ বছরের সম্পর্ক। আমার স্বামীর বিয়ের সমস্ত পোশাক উনি বানিয়েছিলেন। সেই প্রথম স্টুডিওতে ওনার সঙ্গে আমার দেখা। তখন আমি ডিজাইনিং পড়ছি। তারপর থেকেই উনি আমার রোল মডেল। উনি তখন কলকাতার অন্যতম ফ্যাশন ডিজাইনার। তারপর একসঙ্গে কাজ করা, অনেক শো আমরা একসঙ্গে করেছি। অনেক শোয়ে একসঙ্গে বিচারক ছিলাম। দিদি আমায় খুব স্নেহ করতে, ভরসা করতেন। অগ্নি এটা করো, আমাদের এটা করা দরকার, বলতেন। একটা মানুষ যদি অসুস্থ থাকেন সেটা আলাদা, এভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া মুশকিল। এখনও মনে পড়ছে, সুন্দর স্কার্ট, লং কুর্তা, নাকে নাকছাবি, কানে দুল পরে, সুন্দর বটুয়া ব্যাগ নিয়ে দিদি ঢুকলেন অনুষ্ঠানে। সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকত। উনি আমার ফ্রেন্ড ফিলিজফার অ্যান্ড গাইড। আমি মিস করবো। এত প্রতিভাবান একজন ডিজাইনারকে মিস করবো।
তেজস গান্ধী- এত ভালো মানুষ হঠাৎ করে এভাবে চলে গেলেন এটাই বিশ্বাস হচ্ছে না। ওনার কোনও শরীর খারাপ বলে তো শুনিনি। খুবই ট্রাজিক মৃত্যু। আমি ওনার বাড়ির এখানেই রয়েছি, ওনার বাড়িতে যদিও কেউ নেই। ঠিক কী হয়ে বুঝতে পারছি না। পুলিস বিষয়টা তদন্ত করছে, আমার বিশেষ কিছু বলা ঠিক হবে না। ওনার ছেলে ও তাঁর বউকে পুলিস জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে শুনলাম। বাড়িতে কেউ নেই, তাই কথা হয়নি। খবরে শুনছি অস্বাভাবিক মৃত্যু, অদ্ভুত লাগছে, বুঝতে পারছি না। তবে অনেককিছুই এইরকম শোনা যায়, এখনই কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ওনার সঙ্গে অনেক দিনের আলাপ, যখনই দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে খুবই ভালোভাবে কথা বলতেন। ওনার বাড়িতেও এসেছি। উনি সব সময় উৎসাহ দিতেন, ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন।
জ্যোতি খৈতান- শর্বরী দি আমার নিজের দিদির মতোই ছিলেন। আমার কোনও ইভেন্ট হলেই উনি আসতেন। আমার এক্সিবিশন, ফ্যাশন শো, যা কিছু করতাম উনি আমায় শুভেচ্ছা জানাতে আসতেন। উনি আমায় বলতেন, আরো ভালো করো, উনি আমার কাজ পছন্দ করতেন। উনি আমার কাছে অনুপ্রেরণা। এধরনের খবরে খুবই খারাপ লাগছে। যদিও করোনার এই পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে ওনাকে শেষ বিদায় জানাতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ওনার আমার কাজের ধরন আলাদা, তাই একসঙ্গে কাজ করিনি কখনও। তবে উনিও অনেকসময় আমাকে ওনার জন্য পোশাক বানিয়ে দিতে বলেছেন। যেটা আমার বেশ ভালো লাগত, আমাকে কাজে অনুপ্রেরণা দিতেন।
অভিষেক রায়- উনি আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির একজন আইকন। সবথেকে বড় কথা উনি আমাদের পথ প্রদর্শক। আমরা অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আজ সকালে হঠাৎ করে এই খবরটা আমি এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি। আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির শুরুর দিকের মানুষ উনি। কলকাতার ফ্যাশনকে গোটা বিশ্বের ফ্যাশনে পরিণত করার কাজ ওনার হাত দিয়েই শুরু হয়েছিল। ওনার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আমি অনেক ছোট, অথচ ওনার সুন্দর ব্যবহার, সব মানুষকে আপন করে নেওয়াটা ওনার একটা বড় গুণ ছিল। আমি অনেক শো করেছি। ওনার সঙ্গে অনেক শো করেছি। অনেক শোয়ের বিচারক হিসাবেও ওনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আমি জানি না এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু নাকি স্বাভাবিক, সেটা তদন্ত সাপেক্ষা। তবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় ক্ষতি।
অভিষেক দত্ত- শর্বরী দি তো আমাদের রোল মডেল। বহু বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন থেকে ওনাকে চিনি, প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে। আমাদের পদবী এক বলে অনেকে আত্মীয় ভেবেও ভুল করত। উনি আমায় ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। ওনার সঙ্গে অনেক ইভেন্ট করেছি, অনেক ফ্যাশন উইকে কাজ করেছি, অনেক ইভেন্টে একসঙ্গে বিচারক হিসাবে কাজ করেছি। ওনার চলে যাওয়া বড় ক্ষতি তো বটেই। ওনার এভাবে চলে যাওয়াটা আমার পক্ষে মানা মুশকিল। ওনার বাড়ির সকলের সঙ্গে সম্পর্ক আমার ভালো। ওনা বাড়িতে গিয়েছি, একসঙ্গে ডিনার করেছি। ঠিক কী ঘটেছে বুঝতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের মৃত্যু অস্বাভাবিক। আগেই তা স্পষ্ট করেছে পুলিস। এই কেসে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রজু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ কড়েয়া থানা এলাকার ব্রডস্ট্রিটের বাড়ির বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের দেহ। তাঁকে বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের সদস্যরা। ডাকা হয় পারিবারিক বন্ধু ও চিকিৎসক অমল ভট্টাচার্যকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কড়েয়া থানা ও কলকাতা পুলিসের হোমিসাইড শাখা।