Tollywood: টলিউডে বিসমিল্লাহ আর দক্ষিণে আনন্দমঠ! সিনেজগতেও ধর্ম নিয়ে লড়াই নেটপাড়ায়...
ঋদ্ধি বলেন, ‘লোকে যদি ছবিটা দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না কিন্তু বিশ্বাস করি সকলের ধর্মের অধিকার আছে। নিজের ভগবানকে নিজের মতো করে ভালোবাসার অধিকার সকলের আছে। এই সিনেমায় সেই বক্তব্যই তুলে ধরা হয়েছে। আজকে আল্লা হোক বা শ্রীকৃষ্ণ হোক, ভগবানের নাম তো আমরা দিয়েছি বিভিন্ন ভাষায়, কিন্তু ঈশ্বরের বিশ্বাসটা যে যার নিজের মতো করেন`।
শুভঙ্কর চক্রবর্তী: মুক্তি পেয়েছে পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ছবি বিসমিল্লাহ। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে দেখা যায় ঋদ্ধি সেন, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ও সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছবির রিলিজ থেকেই শুরু হয়েছে বয়কটের ডাক। সম্প্রতি কিছু পোস্ট থেকে শুরু হয়েছে বিতর্ক। যেখানে দক্ষিণ ভারতে তৈরি হওয়া ছবি ‘১৭৭০’-এর সঙ্গে তুলনা টানা হয় ‘বিসমিল্লাহ’-র। জি ২৪ ঘণ্টার তরফ থেকে ঋদ্ধি সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা এখন কারেন্ট ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘লাল সিং চাড্ডা ‘ থেকে শুরু হয়েছে এই ট্রেন্ড। তারপর এখানে ‘ধর্মযুদ্ধ’ দিয়ে শুরু হল, এখন ‘বিসমিল্লাহ’ রিলিজ হওয়ার পরই রাতারাতি এই নিয়েও শুরু হয়ে গেল। যখন ‘ধর্মযুদ্ধ’ বয়কটের ডাক দিয়েছিল তখনই বুঝেছিলাম যে ‘বিসমিল্লাহ’ নিয়েও হতে পারে। একটা সিনেমার জন্য মানুষের এই মনোভাব নয়, এই মনোভাব নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা বলছি, বহু জায়গায় লিখেছি। আমাদের দেশের মানচিত্র বদলে দেওয়ার জন্য, আমাদের মিলনের ইতিহাস বদলে দেওয়ার জন্য অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চলছে। এই পোস্টে যে যে কমেন্ট দেখলাম, সেটা ভালো করে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, এটা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া নয়। যে যে প্রোফাইল থেকে কমেন্টগুলো আসছে, সেই সবকটাই ফেক প্রোফাইল। তাই বলা বাহুল্য এটা আইটি সেল থেকে করা হচ্ছে। সেখান থেকেই আমার ভরসার জায়গা যে, এটা যদি জনগণের প্রতিক্রিয়া বলে আমরা দাগিয়ে দিই, তাহলে জনগণকে অপমান করা হয়। এটা খুবই পার্টিকুলার একটা গ্রুপের কাজ, যারা চায় না জনগণের মধ্যে এই শান্তি থাকুক, সম্প্রীতি থাকুক এবং আপনারা কমেন্টগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন’।
ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে ঋদ্ধি বলেন, ‘লোকে যদি ছবিটা দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না কিন্তু বিশ্বাস করি সকলের ধর্মের অধিকার আছে। নিজের ভগবানকে নিজের মতো করে ভালোবাসার অধিকার সকলের আছে। এই সিনেমায় সেই বক্তব্যই তুলে ধরা হয়েছে। আজকে আল্লা হোক বা শ্রীকৃষ্ণ হোক, ভগবানের নাম তো আমরা দিয়েছি বিভিন্ন ভাষায়, কিন্তু ঈশ্বরের বিশ্বাসটা যে যার নিজের মতো করেন। ঈশ্বরে বিভাজন তো মানুষই করেছে। সেটা নিয়েই গল্পটা। বিসমিল্লা হোক বা শ্রীকৃষ্ণ দুজনেই দুজনের মতো করে আরাধ্য, প্রত্যেকের অধিকার আছে নিজের মনের মতো করে তাঁর ঈশ্বরের আরাধনা করার। এই ছবি সম্প্রীতির কথা বলে, বিভাজনের নয়’।
আরও পড়ুন: Raju Srivastava: সংকটমুক্ত রাজু শ্রীবাস্তব! সুখবর দিলেন বন্ধু শেখর সুমন
অভিনেতা আরও বলেন, ‘এই পোস্টটি রাজনৈতিক পোস্ট, জাতীয়তাবাদের বোধের সঙ্গে হিন্দু ধর্ম মিশিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সম্প্রীতির পোস্টে এই ধরনের কমেন্ট দেখা যায়। ভারতবর্ষ বিভিন্ন মানুষের দেশ, একজন হিন্দু যতটা এই দেশকে ভালোবাসে, একজন মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টানও একইরকম ভালোবাসে। শুধুমাত্র যারা হিন্দু ধর্ম পালন করেন তারাই যে দেশকে ভালোবাসে এই কথাটার কোনও মানে নেই। যাঁরা এরকম করছেন তাঁদের বেশিরভাগ কেউই ‘আনন্দমঠ’ পড়েননি। শুধু বাংলার ইতিহাসই যদি কেউ পড়ে তাহলে জানবে, আমাদের সংস্কৃতি কতটা স্বাধীনচেতা! যাঁদের এখন হিন্দু বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় যেমন বিবেকানন্দ বা রামকৃষ্ণ, তাঁরা অন্য ধর্ম নিয়ে কী বলেছেন, সম্প্রীতির কথা বলেছেন, সেটা যদি কেউ পড়ে তাহলে বোঝা যায় যে এই ধরনের কমেন্ট যাঁরা করেন তাঁরা আসলে কিছুই পড়েননি। দুর্গাপুজোয় ঠাকুরের গয়না তৈরি করেন মুসলিম কারিগররা। এগুলো যারা জানে না, তারা পড়াশোনা তো করেইনি আর এগুলো উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট, ইচ্ছে করে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়, এদের উত্তর দিয়ে নিজের সময় নষ্ট করার মানে হয় না’।
আরও পড়ুন- Emergency: ক্যানসারকে হারিয়ে কঙ্গনার হাত ধরে ফিরছেন মহিমা চৌধুরী
প্রসঙ্গত, পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের মতে, ‘এখানে একজন শিল্পীর জীবনের গল্প উঠে এসেছে ‘বিসমিল্লাহ’ ছবিতে। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার যে চিরকালীন একটা সংঘাত রয়েছে সেকথাই রয়েছে এই ছবিতে। চিত্রনাট্যে রয়েছে ভালোবাসা আর প্রেমের কথা। ভালোবাসা আর প্রেম, দুটো যে আলাদা সেটাও এখানে দেখানো হবে। শিল্পীর জীবন যে অনন্ত, তাঁর পথ চলা যে অনন্ত সেই গল্প বলবে বিসমিল্লাহ’।