`ক্ষুদে গোয়েন্দার` চরিত্রে স্বস্তিকার সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন নবাগতা ঋত্বিকা
পরিচালনা, ছবির গল্প, সিনেমাটোগ্রাফি, সাউন্ড থেকে এডিটিং সবেতেই বিদেশের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসা কুড়িয়েছে `কিয়া অ্যান্ড কসমস` ছবিটি।
রণিতা গোস্বামী: নবাগতা অভিনেত্রী। অথচ, প্রথম ছবিতেই ঋত্বিকা পালের অভিনয় নজর কেড়েছে বিদেশের সিনেমাপ্রেমীদের। একদিকে পরিচালক সুদীপ্ত রায়ের ডেবিউ ছবি 'কিয়া অ্যান্ড কসমস', অন্যদিকে এই ছবিটির হাত ধরেই প্রথমবার সিনে দুনিয়ায় পা রেখেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঋত্বিকা পাল। পরিচালনা, ছবির গল্প, সিনেমাটোগ্রাফি, সাউন্ড থেকে এডিটিং সবেতেই বিদেশের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসা কুড়িয়েছে 'কিয়া অ্যান্ড কসমস' ছবিটি।
কান অন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মঞ্চেই প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিল সুদীপ্ত রায় পরিচালিত বাংলা ছবি 'কিয়া অ্যান্ড কসমস'-এর টিজার। গত ১১ মে কান প্যালাইস দি ফেস্টিভ্যালের 'প্যালাইস বি হল'এ ছবিটি প্রথমবার প্রদর্শিত হয়। তারপর থেকেই সাফল্যের যাত্রা শুরু। এবার আগামী ৯ নভেম্বর বার্সেলোনা এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হতে চলেছে ছবিটি। এছাড়াও মিলান অন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও চারটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে 'কিয়া অ্যান্ড কসমস'। যার মধ্যে রয়েছে (বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে) সেরা সাউন্ড ডিজাইন, এডিটিং,পরিচালনা ও সিনেমাটোগ্রাফি। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে মিলান আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, যা চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
'কিয়া অ্যান্ড কসমস' প্রথম ছবি, আর প্রথম ছবিতেই সাফল্য নবাগতা ঋত্বিকা পালের। এই ছবিতে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন তা Zee ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন ঋত্বিকা।
বিদেশের একাধিক ফেস্টিভ্যালে সাফল্য পেলেও ঋত্বিকা নিজে অবশ্যে এই ছবিটি এখনও দেখে উঠতে পারেননি বলেই জানিয়েছেন। ঋত্বিকার কথায়, '' ছবির কাজ যখন প্রথম শুরু করি তখন ভাবিনি এই সাফল্য আসবে। তবে সাফল্য পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে। এই ছবিতেই আমার প্রথম কাজ, তবে এর আগে আমি থিয়েটার করতাম, একটা নাটক দেখতে গিয়ে সুদীপ্ত দার (পরিচালক) সঙ্গে আলাপ, তারপরই 'কিয়া অ্যান্ড কসমস'এর জন্য স্ক্রিন টেস্ট দিয়েছিলাম। ব্যাস, তারপরই শ্যুটিং শুরু।''
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে ঋত্বিকা বলেন, ''স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করে আমি ভীষণ খুশি। একজন নবাগতা অভিনেত্রীর কাছে প্রথমে ভয় লাগতে পারে, যে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতো একজন বড় মাপের অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করব, কেমন হবে, না হবে। তবে আদপে বিষয়টা তিনিই ভীষণ সহজ করে দিয়েছেন। তিনি এত ভালো অভিনেত্রী, যে তাঁর অভিনয় দেখে ও একসঙ্গে কাজ করার সময় আমিও আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। খুবই স্বচ্ছন্দ বোধ করেছি, কোনও সমস্যা হয়নি। অনেকে বলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের অনেক ট্যান্ট্রাম আছে, তবে আমার তো এক্কেবারেই তেমন মনে হয়নি। ভীষণ ভালো ব্যবহার। আমার কাজ করাটা ভীষণ সহজ হয়েছে ওনার জন্যই।''
ঋত্বিকার কথায়, '' কালিম্পঙে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মজাদার ছিল। আমরা ছোট্ট টিমে কাজ করেছি। সিনেমার শ্যুটিং বলতে যে বিশাল কোনও সেট তৈরি করে শ্যুটিং হয়েছে তেমনটা এক্কেবারেই নয়। কালিম্পঙে শ্যুটিংয়ে একটা ঘটনা আমরা ভীষণ মনে পড়ে। জানুয়ারি মাসে মাঝ রাতে আমরা একদিন শ্যুটিং করছিলাম, তখন ভয়ঙ্কর ঠান্ডা। অথচ আমায় একটা পাতলা একটা সোয়েটার পরে শ্যুটিং করতে হয়েছিল। তারপর শ্যুটিং শেষ করার পর পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার, সবাই মিলে পাঁচটারও বেশি সোয়েটার আমার গায়ে চাপিয়ে দিল। বেশ মজার। আবার কলকাতায় এপ্রিল মাসের ভয়ঙ্কর গরমে শ্যুটিং যখন করছি তখন সিনেমার প্রয়োজনে ওই গরমের মধ্যে মোটা একটা সোয়েটার পরে শ্যুটিং করতে হয়েছে। এখন ভাবলেও হাসি পায়। ''
ভবিষ্যৎ-এ সিনেমায় আসতে চান কিনা এপ্রশ্নের উত্তরে ঋত্বিকার বলেন, আমি থিয়েটারটা চালিয়ে যেতে চাই, তবে বানিজ্যিক ছবি করার কোনও ইচ্ছা নেই। যদি কোনও ভালো ছবির কাজ পাই তাহলে অবশ্যই অভিনয় করব।
১২ বছরের এক কিশোরী 'কিয়া' কে নিয়েই গড়ে উঠেছে এই ছবির প্রেক্ষাপট। কিয়া (ঋত্বিকা পাল) আর পাঁচজনের মতো সুস্থ-স্বাভাবিক নয়। সে 'পারভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার'-এ আক্রান্ত। যে রোগের কারণে তার বয়স ১৫ বছর হলেও তাঁর মানসিক বিকাশ ওই বয়সের কিশোরীদের মতো নয়। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী কিয়াকে তার মা জানিয়েছে, তার বাবা মারা গেছে। যদিও সত্যটা হল, তিনবছর আগে তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যায় কালিম্পং-এ। এসবের মাঝে ঘটে যায় একটি দুর্ঘটনা। কিয়ার পাশের বাড়ির বিড়াল 'কসমস' খুন হয়। ছোট্ট কিয়া তার মতো করেই 'কসমস' মৃত্যু রহস্যের তদন্ত শুরু করে। আর এনিয়েই কিশোরী কিয়া নিজের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা কিয়া তার ডায়েরিতে গোয়েন্দা উপন্যাসের আকারে লিখতে শুরু করে। মেয়ের কাণ্ডকারখানা জানতে পেরে তার ডায়েরি লুকিয়ে রাখে তার মা দিয়া (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়)।
এসব ঘটনার মাঝে কিয়া জানতে তার বাবা বেঁচে আছে জানতে পেরে বাবাকে খুঁজতে সে একাই কলকাতা থেকে কালিম্পং-এ যাত্রা করে। যদিও এই গল্পের মাঝে রয়েছে অনেক রহস্য-রোমাঞ্চ। তবে সেগুলি জানতে হলে সিনেমাটির মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 'কিয়া অ্যান্ড কসমস' আগামী বছর এদেশে মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।