রণিতা গোস্বামী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মিষ্টি নিয়ে এমন ভালোবাসা, আবেগ হয়ত শুধু বাঙালিরই থাকতে পারে। আর তাই হয়ত এই বাংলার বুকেই তৈরি হতে পারে এমন রসগোল্লার মতো মিষ্টি। রসগোল্লা নিয়ে বাঙালির আবেগ বরাবরের, আর তা হবে নাই বা কেন, রসগোল্লার মতো এমন ধবধবে সাদা নরম চাঁদাপানা মিষ্টির আবিষ্কার যিনি করেছিলেন তিনি যে নিজেই বাঙালি, নবীনচন্দ্র দাশ। কে এই নবীন ময়রা? কীভাবেই বা তাঁর মাথায় এসেছিল রসগোল্লা বানানোর ভাবনা? এসব নিয়ে তৈরি হয়েছে পাভেলের নতুন ছবি রসগোল্লা? ছবিটি দেখেও কি রসগোল্লার মতোই মন মজবে সিনেমা প্রেমী দর্শকদের? চলুন দেখে নেওয়া যাক...


রসগোল্লার গল্প ও প্রেক্ষাপট 



নিঃস্ব হয়ে যায় নবীন ময়রা। তবুও তার জেদ রসগোল্লার মতো চাঁদপানা মিষ্টি সে বানাবেই। এসবের মাঝে ঘটনাচক্রে ক্ষীরোমণির সঙ্গে বিয়ে হয় নবীনচন্দ্র দাশের। তবে চাঁদপানা, ধবধবে রসালো মিষ্টি তখনও তৈরি হয়নি। বারবার একের পর এক বাধা, তবুও নবীন সেই রসগোল্লা বানানোর পিছনেই পড়ে রয়েছে। এসবে কিছুটা বিরক্ত ক্ষীরোদ, তবে সে নবীনের হাত ছাড়েনি। সে পারবে, এই আশ্বাস তাঁকে দিয়েছিল ক্ষীরোদমণি। অবশেষে বহু ঝড়ঝাপটা অশান্তির পর চাঁদপানা, নরম, রসগোল্লা বানাতে সফল হয় নবীন। প্রথম মিষ্টি টা অবশ্য সে ক্ষীরোদকেই খাইয়ে ছিল। খেয়ে মন ভরে গিয়েছিল ক্ষীরোদের। মন ভরে গিয়েছিল গোটা বাংলার মিষ্টি প্রেমীদের। নবীনচন্দ্র দাশের রসগোল্লার ক্ষতি ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। এই ভাবেই এগিয়েছে গোটা রসগোল্লার কাহিনী, গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। নবীনের কাছে আরও একটি দাবি করে বসে ক্ষীরোদ, সেই দাবি কী নবীন রেখেছিল? শেষপর্যন্ত কীই বা হয়েছিল নবীন-ক্ষীরোদের এই মিষ্টি রসগোল্লার মতো প্রেমের গল্পের। পুরোটা জানতে হলে সিনেমাহলে জেতেই হচ্ছে রসগোল্লাপ্রেমী বাঙালিদের।




সঙ্গীত, আবহ, ক্যামেরা ও সম্পাদনা


এই ছবিতে সবথেকে বেশি যদি কিছু মন কেড়ে থাকে তা হল মিউজিক, ছবির গান, যা এককথায় অসাধারাণ। এই ছবিতেই শেষবারের মতো সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ খোদার বান্দা গানটি তাঁরই করা। এছাড়াও 'টাপুর টুপুর' সহ অন্যান্য অর্ণব দত্তের গানগুলি মন ছুঁয়ে যায়। রসগোল্লার ছবি মিউজিক করার ক্ষেত্রে একটি বৈশিষ্ট বজায় রাখা হয়েছে। যেটি কিনা ছবিটি যে সময়ের প্রেক্ষিতে চিত্রায়িত, ছবিতে শুধুই সেই সময়কার বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। 


ছবির গান ছাড়া, ক্যামেরার কাজ, সম্পাদনাও প্রশংসনীয়।



অভিনয় 


পাশাপাশি বিদিপ্তা চক্রবর্তী, খরাজ মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, অপরাজিতা আঢ্য, কৌশিক সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় মতো অভিনেতাদের পরিপক্ক অভিনয় জমে গিয়েছে রসগোল্লা ছবিটি। ছোট্ট চরিত্রে নজর কেড়েছেন শুভশ্রী, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, লাবনী সরকারের অভিনয়ও।



বিশ্লেষণ


ছবিটি নবীনচন্দ্র দাশকে নিয়ে তৈরি হলেও এটি যদি তাঁর বায়োপিক বলে কেউ মনে করেন, তাহলে এক্কেবারে ভুল করবেন। এটি এক্কেবারে বায়োপিক। এই ছবিটি রসগোল্লার মতোই একটি মিষ্টি নবীনচন্দ্র ও ক্ষীরোদমণি প্রেমের গল্প। শুধু প্রেম নয়, জেদ, স্বপ্ন পূরণ করতে দিনরাত এক করে কঠোর পরিশ্রম, শিল্প সবকিছুই মিলেমিশে একাকার। নবীনচন্দ্র দাশের সঙ্গে ক্ষীরোদমণির প্রেমটা বাস্তবেও এভাবে হয়েছিল কিনা তা বেশিরভাগ মানুষেরই হয়ত জানা নেই, তবে ছবিতে এটি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা মন ছুঁয়ে যায়। 


ছবিটি বাস্তব সম্মত করে তুলতে যেভাবে কলকাতা, ঘোড়া গাড়ি সহ সিনেমার সমস্ত দৃশ্য চিত্রায়িত করা হয়েছে, তা ছবিটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। পাশাপাশি ছবিতে নবীনচন্দ্র দাশের পাশাপাশি ভোলা ময়রা, ভীমচন্দ্র নাগের মতো বিখ্যাত মিষ্টান্ন আবিষ্কর্তাদেরও তুলে ধরা হয়েছে, তা সিনেমাটিকে আরও বেশি পরিপূর্ণ করেছে। সবমিলিয়ে আমার দৃষ্টিতে 'রসগোল্লা'য় বিশেষকোনও ত্রুটি চোখে পড়েনি। তবে এটুকুই শুধু বলার ছবিটি শেষের দিকে বড্ড বেশি বড় বলে মনে হচ্ছিল। এটির দৈর্ঘ্য হয়ত আরেকটু কমালে বেশ ভালো হত। সবমিলিয়ে ছবিটিকে ৫ এর মধ্য সাড়ে ৩ দেওয়াই যায়।


আরও পড়ুন-