Saayoni Ghosh, Aindrila Sharma: `সেদিন একফোঁটা জল পড়েনি, আজ ঐন্দ্রিলার জন্য কাঁদলাম`, দাদাকে হারানোর যন্ত্রণা লিখলেন সায়নী
`একটা শূন্যতা সারা জীবনের। সব্যসাচীর- ও তাই.... Aindrila, you beauty... বিশ্বাস কর, তুই থাকবি, সবটা জুড়ে থাকবি, সারা জীবন থাকবি... যেমন আছে দাদাভাই!
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো : প্রয়াত ঐন্দ্রিলা। বাবা, মা, দিদি, তাঁর ভালোবাসা-তাঁর প্রাণের মানুষ সব্যসাচীকে কাঁদিয়ে তারার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ২৪ বছরের সদা হাসিখুশি, প্রাণবন্ত 'মিষ্টি'। পরিবার, পরিজন ও অগুনতি অনুরাগীর জন্য রেখে গিয়েছেন একগুচ্ছ কিছু 'মিষ্টি' স্মৃতি। লড়াইটা চলছিল অনেকদিন ধরেই। পর পর ২ বার ক্যানসারকে জয় করে ফের কাজে ফিরছিলেন ঠিকই। কিন্তু আচমকা ব্রেন স্ট্রোক, আর তারপর একের পর এক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সেই লড়াইকে অনেক কঠিন করে তুলেছিল। ঐন্দ্রিলার ফেরার অপেক্ষা 'মিরাকলে'র অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। কিন্তু না কোনও 'মিরাকল' এবার আর হয়নি। হাসাপাতালে টানা ১৯ দিন লড়াইয়ের পর সবার থেকে 'ছুটি' নিয়ে নেন ঐন্দ্রিলা। প্রাণাধিক প্রিয় ছোটো মেয়েকে হারিয়ে ভাষা হারিয়েছেন হতভাগ্য বাবা-মা। ছোট্ট 'বুনু'র সঙ্গে ফেলে আসা দিনের স্মৃতিতে বুঁদ 'দিদিভাই' ঐশ্বর্য। আর সব্যসাচী? ঐন্দ্রিলার শেষযাত্রায় অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত নিজের ভালোবাসার হাত ছাড়েননি তিনি। ঐন্দ্রিলা তাঁকে নিজের জীবনের 'লাইফলাইন' বলতেন। ৩১ অক্টোবর সব্যসাচীর জন্মদিনে, নিজের শেষ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও লিখেছিলেন, 'আমার বেঁচে থাকার কারণ।'
ঐন্দ্রিলা চলে গিয়েছে। শোকবিহ্বল সব্য়সাচীও নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ডিলিট করে দিয়েছেন। ঐন্দ্রিলার এই অকালপ্রয়াণ, সব্যসাচী সহ পরিবারের কষ্ট আরেক অভিনেতা সায়নী ঘোষকে মনে করিয়ে দিয়েছে তাঁর দাদাকে হারানোর যন্ত্রণার কথা। সায়নী লিখেছেন, "আমি ঐন্দ্রিলাকে একবার দেখেছি। বছর আটেক আগে, একটা অডিশনে। বেশি কথা হয় নি, চোখে চোখ পড়তেই মৃদু হাসি, ভালো? হ্যাঁ ভালো! All the best. To you too!!
তারপর বিগত কয়েক বছরে ওর লড়াই, ওর কষ্ট, ওর পরিবার, পরিজন, বন্ধুবান্ধব সবার সংগ্রাম সম্বন্ধে নানান জায়গায় পড়েছি। ওর অ্যাকটিভিটি ফলো করেছি। মাঝে সুস্থ্য হয়ে ফিরে এসে কাজ শুরু করলো। ওর ব্যাপারে ভালো কোনো খবর শুনলেই ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠত সেই মৃদু হাসি। দিন কুড়ি আগে আবার দুঃসংবাদ। ভালো নেই ঐন্দ্রিলা। মিডিয়ার মুহুর্মুহু চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই ভালো, এই খারাপ। কেউ বলছে আছে, কেউ বলছে নেই। সৌরভের সঙ্গে কথা হলো, বললাম কিছু দরকার হলে বলিস। বললো জানাবো, pray for her.
Pray for her!! ফিরে গেলাম ৮ বছর আগে ব্যাঙ্গালোরের Narayana Hrudalaya- য়ে সেই দৃশ্যে। আমার দাদা, জন্ম থেকেই congiental heart disease - এ আক্রান্ত। ভীষণ ক্রিটিকাল দ্বিতীয় হার্ট সার্জারির পর ৯ দিন ধরে কোমাতে। ডাক্তার রা সব চেষ্টা করে হাত তুলে দিয়েছেন। সকালে ফোন, তাড়াতাড়ি আসুন, সুমনের BP ৬০/৩০, হার্টবিট বন্ধের পথে। শক দিয়ে retrieve করার চেষ্টা চলছে। একা একটা অটো নিয়ে ছুটলাম। বয়স ২২… চিকিৎসার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না, শুধু আমার দাদা বুঝি। বুঝি, মায়ের রোজ রাতে উঠে ডুকরে ডুকরে কান্না, ঠাকুর আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও। বুঝি বাবার সর্বস্ব টুকু বিলিয়ে দিয়ে, ছেলেকে বেস্ট ট্রিটমেন্ট দিয়ে ফিরিয়ে আনার লড়াই। Ccu - এর বাইরে দাঁড়াই। গিয়ে দেখি শক দিচ্ছে। দাদাভাই এর শরীর টা বেড থেকে ১০ ইঞ্চি উঠে যাচ্ছে এক ঝটকায়, আবার পড়ে যাচ্ছে। কোনো মতে হার্টবিট ফেরানো গেল।
ডাক্তার ডাকলেন, গেলাম। বললেন, 'He is not responding sister. Let him go peacefully. He won't survive. And even if he does, he will remain a vegetable for rest of his life.' আমি বললাম, আর দুটো দিন দেখি ডক্টর। Miracles happen. আমার অসহায় বাবা টা দূরে দাঁড়িয়েছিল, বেরিয়ে আসা তে বললো, কোথায় যেতে বলছিলেন রে? আর vegetable? Vegetable Stew খাওয়াতে বলছেন? আমি খাওয়াবো। আর একটু চিকেন ও দিয়ে দেব। পাপা খুব ভালোবাসে। চোখ থেকে জল বেরিয়ে এলো, বললাম, জানি বাবা। জানি তুমি সব করবে। একটু সময় দাও।
সবাই ফোন করছে, কিছু লাগবে? বললাম, Pray for him! কলকাতায় কিছু ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করলাম, তারা বললেন, শেষ উপায়, ওর সঙ্গে কথা বলো। Respond করতে শুরু করলে treatment - এও respond করার চান্স থাকে। Ccu তে ছুটলাম. Ventilator , হাজার নল, যন্ত্রপাতি, মাঝখানে রোগা, দুর্বল দাদা টা আমার। লড়াই করছে... ডাকলাম, দাদাভাই, এই দাদাভাই উঠে পর, কিরে মাম বলছি, বাড়ি যাবি না? মা অপেক্ষা করছে... কি রে সুমন ঘোষ, ওই লাল বাদশা, ওই শাহেনশা (অমিতাভ বচ্চনের বিশাল ফ্যান) এই দাদাভাই ওঠ? ওঠ? চোখ খোল। কোনো সাড়া নেই। Ccu ভর্তি লোক আমার দিকে তাকিয়ে, বেরিয়ে গেলাম। ওর পছন্দের শব্দ গুলো মনে করে ফিরে এলাম। দাদাভাই... KFC খাবি?
Miracle... ওর হাত টা উঠে আমার গালে লাগল। ডাক্তার নার্স সবাই ছুটে এসেছে। আমি আরো conviction নিয়ে ' দাদাভাই প্লেনে চড়ে বাড়ি ফিরবি?' আবার miracle, গোঙানি শুরু, শরীর কাঁপছে... যন্ত্রপাতি সিগন্যাল দিচ্ছে, ডাক্তার বলল, ' He is coming back!' দাদাভাই ফিরলো, দেড় মাস ব্যাঙ্গালোরে রেখে মায়ের সেবা, বাবার যত্নে, সবার আশীর্বাদে কলকাতায় ফিরলো ২৯ শে জুলাই। ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন, এত প্রার্থনা, মন্দির মসজিদ, গির্জা, গুরুদুয়ারা... ঈশ্বর আছেন। কিন্তু তিন দিন পর দাদা নেই। ম্যাসিভ heart attack, মুখে ফেনা উঠে যত ক্ষণে ইমারজেন্সিতে নিয়ে ছুটলাম... It's too late miss Ghosh, he is no more! 2nd August দুপুরে ওর শেষ বলা কথা গুলোর মধ্যে মনে পড়ে, ' আর 4GB তে হচ্ছে না রে মাম, 8GB লাগবে।' আচ্ছা দাদাভাই কিনে দেব! '
একটা joint account খুলব তোর সাথে, তুই shooting করে টাকা ফেলবি আমি কিছু না করে খরচা করবো।' আচ্ছা দাদাভাই করবো। 'মা কে ভালো রাখতে হবে'…রাখবো!
সেদিন ও চলে যাওয়ার পর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল পড়েনি। আজ পড়লো। ঐন্দ্রিলার জন্য, ওর বাড়ির লোকের জন্য, সব্যসাচীর জন্য। প্রার্থনা, শুভ কামনা, সব কিছুরই নিশ্চই প্রয়োজনীয়তা আছে, কার্যকারিতাও আছে, কিন্তু সেদিন বুঝেছিলাম যে রাখে হরি তো মারে কে আরে মারে হরি তো রাখে কে?
এই ঘটনার পর ঈশ্বরে বিশ্বাস অনেক নড়ে গেছিল, মা সব ঠাকুরের ছবি সরিয়ে দিয়েছিল, দাদার দেহের পাশে বাবাকে দেখেছিলাম ৩০ বছর পুরোনো মা কালির মূর্তি , যাকে না খাইয়ে বাবা অন্ন গ্রহণ করতেন না, মাটিতে মেরে একশো টুকরো করে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে আজ থেকে আমার ছেলেও নেই, আমার মা ও নেই!
সময় পেরিয়েছে, ব্যথা কিছুটা প্রশমিত, ঈশ্বরে বিশ্বাস ফিরেছে আস্তে আস্তে। কিন্তু একটা শূন্যতা সারা জীবনের। সব্যসাচীর- ও তাই। সবাই ওর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে, ও নিজের জন্য সব থেকে বেশী চেষ্টা করেছে, অনেক টা পেরেছে, শেষ টা পারে নি!!
আপনাদের প্রার্থনা যেন না থামে, প্রার্থনা করুন ওর পরিবার যেন শক্তি পায়, ছেলেটি যেন মানসিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে! আমাদের জন্যেও সবাই করেছিল, অফুরান, তাই আমরাও পেরেছি, ওরাও পারবে!
And Aindrila, you beauty... You brave brave hell of a girl... বিশ্বাস কর, তুই থাকবি, সবটা জুড়ে থাকবি, সারা জীবন থাকবি... যেমন আছে দাদাভাই! ❤️
পর পর ২ বার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা। আবার কাজে ফেরা। লড়াইয়ের অন্যতম নাম ঐন্দ্রিলা। দীপাবলির সন্ধ্যাতেও সেজেগুজে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোকময় ছবি পোস্ট করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু তার ১ সপ্তাহের মাথাতেই ফের ছন্দপতন। ১ নভেম্বর রাতে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেতা ঐন্দ্রিলা শর্মা। তাঁর শরীরের একদিক অসাড় হয়ে যায়। ঘন ঘন বমি করতে থাকেন। অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন তাঁর পরিবার ও বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরী। সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার হয় ঐন্দ্রিলার। তখন থেকেই ভেন্টিলেশনে কোমাচ্ছন্ন ছিলেন অভিনেতা।