নিজস্ব প্রতিবেদন: চলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী। বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্দ্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও। ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে ২১ জুলাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রবিবার সন্ধে ৬.৩০ নাগাদ হাসপাতালেই প্রয়াত হন রমাপদ চৌধুরী।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

১৯২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর খড়গপুরে জন্ম হয় তাঁর। সেখানেই স্কুল শিক্ষার পাঠ সম্পূর্ণ করেন তিনি। এর পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষার পাঠ নেওয়া শুরু করেন তিনি। প্রেসিডেন্সি থেকেই ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হন তিনি। তরুণ বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু হয় তাঁর। যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম গল্প ‘উদয়াস্ত’। সেই থেকে শুরু তাঁর সাহিত্যযুগের। কর্মজীবন শুরু আনন্দবাজার পত্রিকায়। সম্পাদনার পাশাপাশি চলতে থাকে সাহিত্য সৃষ্টির কাজও। উপন্যাস থেকে ছোট গল্প, প্রবন্ধ, অনুবাদ সাহিত্য—সবেতেই ছিল রমাপদ চৌধুরীর অবাধ বিচরণ। তাঁর বহু বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘এখনই’, ‘খারিজ’, ‘লালবাঈ’, ‘দ্বীপের নাম টিয়ারং’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ১৯৬০ সালে তাঁর লেখা ‘বনপলাশীর পদাবলী’ ব্যপক প্রশংসিত হয় বাংলার সাহিত্যিক ও পাঠক মহলে। তাঁর বহু উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়নও হয়েছে যেগুলি চলচ্চিত্র হিসেবেও দারুণ সাফল্য পায়। যেমন, দ্বীপের নাম টিয়ারং (১৯৬৩),পিকনিক (১৯৭২),বনপলাশীর পদাবলী (১৯৭৩), খারিজ (১৯৮২), এক দিন অচানক (১৯৮৯) ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮২ সালে টেস্ট টিউব বেবির জনক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবনী অবলম্বনে লিখেছিলেন 'অভিমূন্য'। পরবর্তী কালে চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিনহা এই কাহিনি অবলম্বনে হিন্দিতে তৈরি করেন বিখ্যাত ছবি 'এক ডক্টর কি মত'।


‘বাড়ি বদলে যায়’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৮ সালে রমাপদ চৌধুরীকে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়াও একাধিক সাহিত্য সম্মান ছিল তাঁর ঝুলিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৬৩ সালে পাওয়া আনন্দ পুরস্কার, ১৯৭১ সালে পাওয়া রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ২০১১ সালের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ।


২০১৫ সালে রমাপদ চৌধুরীর শেষ লেখা প্রকাশিত হয়। নাম 'হারানো কথা'। এর পর রীতিমতো ঘোষণা করেই লেখা থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। রমাপদ চৌধুরীর প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল যুগের অবসান হল, তা বলা যেতেই পারে। তাঁর কলম শুধু বাংলা সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেনি, তাঁর কাহিনী বাংলা চলচ্চিত্রকেও এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। রমাপদ চৌধুরীর প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।