সুনামির নাম 'সন্ধ্যাতারা'! ইউটিউবে ১ মাসে ৬.৬ মিলিয়ন ভিউজ, প্রত্যাশিত ছিল?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সুনিধি: প্রত্যাশিত ছিল কিছুটা। কিন্তু পুরোটা প্রত্যাশিত ছিল না। মানুষ কীভাবে নেবে, সেটা নিয়ে একটা চিন্তা ছিলই। কারণ আমরা ট্র্যাডিশনাল ক্লাসিক্যাল বন্দিশকে ফিউশন হিসেবে ব্য়বহারের চেষ্টা করেছি এখানে। সেটা বাংলায় অনুবাদ হচ্ছে পপ মিউজিক যোগ করে। আমাদের বিশ্বাস ছিল যে, আজকালকার ছোট ছোট যে ছেলেমেয়েরা গান শোনে, তাদের কাছে যদি এই বন্দিশ তুলে ধরা যায়, তাহলে ভালো হবে। বাংলাদেশে কিন্তু বাচ্চাদের ছোট থেকেই হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যালটা শেখানো হয়। বলতে পারেন এই কাজে আমরা সফল হয়েছি। বহু প্র্যাকটিস করে, তারা সন্ধ্যাতারার লক্ষ লক্ষ কভার করছে। এটাই তো আমার কাছে পাওনা। আপনার থেকে জানতে পারলাম যে, কলকাতার মানুষও নাকি 'সন্ধ্যাতারা'কে ভালোবেসেছে। এই ভালোবাসার কথা জেনে আমি সত্য়িই আপ্লুত। সকলকে আমার ধন্যবাদ।



হিন্দি-উর্দুতে সাধারণত বন্দিশ হয়, 'সন্ধ্যাতারা' বাংলায় লেখা বন্দিশ! নেপথ্যের গল্পটা কী?


সুনিধি: দেখুন গতবছর কবীর সুমন ঢাকায় এসেছিলেন। বাংলা বন্দিশেরই একটা কনসার্ট ছিল। তখন কোক স্টুডিয়ো সিজন ওয়ান প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। আমি, অর্ণব আর আমাদের ক্রিয়েটিভ হেড সায়ন ভাই, ওই কনসার্ট শুনতে গিয়েছিলাম। আসলে কবীর সুমন কলাকাতায় বসেই কিন্তু অনেক অনেক বন্দিশ অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন। সেখান থেকে আমরা সবাই ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, যে কেন বাংলায় বন্দিশ করব না। ওঁর কনসার্ট শুনেই আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলাম আমরা। যে বাংলায় বন্দিশ করতেই পারি। আমি-অর্ণব আমরা সবাই, ভীষণ ভাবে কবীর সুমনের কাছে কৃতজ্ঞ। কোথাও ওই কনসার্টে গিয়ে সুমনকে শুনে মনে হয়েছিল যে, যা করছি তা মনে হয় ভুল করছি না। আমাদের চেষ্টা করা উচিত। জনগনের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় এই বন্দিশ।


গানের গলাই বলছে তালিম বহু বছরের! মিউজিক্যাল জার্নিটা ঠিক কেমন ছিল?


সুনিধি: আমি তিন বছর বয়স থেকে গান শেখা শুরু করি। মায়ের কাছেই গানের হাতেখড়ি। যখন আমার আট বছর বয়স, তখন শ্রুতিনন্দনে গিয়ে আমার গুরুজি, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে গান শিখতে যাই। অনেক বছর শিখি। ওখানেই ভোকাল ট্রেনিং। ক্লাসিক্যালের শিক্ষা সবটাই। তারপর বাড়িতেই ক্লাসিক্য়ালের চর্চা। তারপর উচ্চমাধ্যমিকের পর আমি বিশ্বভারতীতে যাই। বাবাই সবসময় বলতেন, রবীন্দ্র সঙ্গীতের চর্চা করতে। তাঁর ইচ্ছাতেই আমার রবীন্দ্র সঙ্গীত শেখা। লাকিলি বিশ্বভারতীতে খুব ভালো রেজাল্ট করি। গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স সবই আমার ওখানে। আমি ওখানকার ন্যাশনাল স্কলার।


 


সুনিধির সঙ্গীত শিক্ষায় ক্লাসিক্যালের মাহাত্ম্য কত'টা?


সুনিধি: আমার মনে হয় খুব ছোট থেকে যারা ক্লাসিক্যাল নিয়ে চর্চা করে, তাদের কাছে যে কোনও জঁর গান গাওয়াই খুব সহজ হয়ে যায়। আমার তো মনে হয়, তারা যে কোনও গানই গাইতে পারে। কারণ ভোকাল ট্রেনিংটা পুরোপুরি হয়ে থাকে ক্লাসিক্যাল শেখার জন্য়। আমি বলব, ক্ল্যাসিক্যালের রেওয়াজ করে, গলাটা ভীষণ ভালো ভাবে তৈরি করা দরকার। ক্লাসিক্যালকে আমি ঠিক এতটাই জোর দিই। আমার তো মনে হয়, ক্লাসিক্যাল এত ভালো করে শিখেছি বলেই রবীন্দ্র সঙ্গীতকে এত ভালো আপন করতে পেরেছি। 


কাদের শুনে সুনিধির বেড়ে ওঠা, এখন সুনিধি কাদের শুনছেন?


সুনিধি: বাপ রে! আমার লিস্ট যে অনেক বড়। নাম বলে আমি শেষ করতে পারব না। একদম ছোট থেকে কিন্তু মা আমাকে হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যালই শুনিয়েছেন। ওই ধারার মধ্যেই আমি ঢুকে গিয়েছিলাম। আলি আকবর খান, ভীমসেন যোশিদের গান শুনতাম। তাছাড়া গুরুজির গান তো শুনতাম। তাঁদের রাগাশ্রয়ী গানগুলি তুলে গাওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি কিন্তু এর ফাঁকেই হিন্দি গানও বেশ গাইতাম। তবে হিন্দি গাওয়া, রিয়ালিটি শোয়ে অংশ নেওয়ার জন্য কিন্তু একদমই নয়, এমন কিছু হিন্দি গান আছে, যেগুলি তুলে গাইতাম। হিন্দি গানের প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি আপনাকে। এটা  কেউ জানে না। আমার আসল নাম কিন্তু সুনিধি নয়, প্রিয়াঙ্কা। আসলে আমার বাবা সুনিধি চৌহানকে ভীষণ ভালোবাসতেন। এই কারণেই প্রিয়াঙ্কা থেকে সুনিধি হয়ে যাওয়া। আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। 'মেরি আওয়াজ শুনো' বলে গানের রিয়ালিটি শো হত। লতা মঙ্গেশকর বিচারক ছিলেন। সেই তখন থেকে সুনিধিকে চেনা। ওঁর গান শুনেই বড় হয়েছি আমি। এখনও কী সুন্দর নিজেকে মেইন্টেন করে গান করেন সুনিধি। ওঁর পারফরম্যান্সও যে আমার কী ভালোলাগে! এখন আমার গান শোনার পরিধি অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমি পপ-হিপহপ-জ্যাজ শুনি। বিগত কয়েক বছর ধরে এসব নিয়ে কাজও করছি। কয়েকজন গিটারিস্ট বন্ধুকে ব্ল্যুজও করছি। 


দুই বাংলার কোন কোন ব্য়ান্ড সুনিধির পছন্দের?


সুনিধি: আর্টসেলের গান খুব ভালো লাগে। আমি ওদের শো দেখতে যাই। ফুয়াদের ব্যান্ড খুব ভালো লাগে আমার। শিরোনামহীন বলে একটা ব্যান্ড রয়েছে এখানে। সেটাও খুব সুন্দর। এখানে অনেক ব্য়ান্ড। তাদের সঙ্গীত খুবই ভালো। কলকাতার কথা বললে বলব। আমি অনুপম রায়ের গান শুনি। ফসিলসের কথা তো বলবই। রূপম ইসলামের গান তো ছোটবেলা থেকেই শুনছি। সেই স্কুল-কলেজ থেকে। এটা বলতেই হবে।


অরিজিৎ সিংকে নিয়ে কী বলবেন, আপনার চোখে অরিজিৎ কোন জায়গায়?


সুনিধি: সত্যি বলতে অরিজিৎ সিংকে নিয়ে বলার মতো যোগ্যতাই আমার নেই। একজন অসাধারণ শিল্পী। কী দারুণ ভার্সেটাইল। শুধু বলব উনি ভারতের গর্ব। উনি গোটা বিশ্বের গর্ব। ওঁর গান আমার অসাধারণ লাগে। কিছুদিন আগে অর্ণব ওঁর সঙ্গে দেখা করেছিল। ছবি দেখেছিলাম। ওদের দু'জনের যে দেখা হয়েছে, এটা দেখেও আমার ভালোলেগেছে। তবে অরিজিৎ-অর্ণব একসঙ্গে কাজ করছেন কিনা, সে ব্যাপার আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারব না। হলে আপনারা নিশ্চয়ই জানতে পারবেন। ভবিষ্যতে হতে পারে। হওয়ার সম্ভাবনা আছে। শুধু এটাই আমি বলতে পারি।


শিল্পী অর্ণব এবং স্বামী অর্ণব, সুনিধির কাছে দুই ভূমিকায় তিনি কেমন? 


সুনিধি: খুব কঠিন একটা প্রশ্ন করলেন আমাকে। প্রথমে বলি শিল্পী অর্ণব ও মিউজিক ডিরেক্টর অর্ণবের কথা। সে আমার কাছে খুবই প্রিয় একজন। ভীষণ ট্যালেন্টেড, ওর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এই প্রজন্মকেও অর্ণবের অনেক কিছু দেওয়ার আছে। তাকে আমি বিভিন্ন জায়গায় জিজ্ঞাসা করি যে, এটা কী করতে হবে, সেটা কী করতে হবে। এদিক থেকে তাকে আমি মাথায় তুলে রাখি। গুরু বলে যাকে। হাজব্যান্ড হিসেবে অর্ণব খুবই ভালো। বেশি সময় দিতে পারে না ঠিকই। দেখতে গেলে, কাজের জন্য একে অপরকে আমরা বেশি সময় দিতে পারি না। তবে হ্যাঁ, অর্ণব আমার ভীষণ ভালো বন্ধু। দিনের শেষে যাকে সব কথা বলা যায়। স্বামী হিসেবে অর্ণবকে পাওয়া, আমার জীবনের এক বিরাট প্রাপ্তি। অর্ণবকে নিয়ে মনের ভিতরে অভিযোগ থাকলেও, সেগুলো মনের ভিতরেই থেকে যায়। কেন জানেন তো, যখন ওর গান শুনি বা ওর কাজ দেখি। তখন আর আমার কিছু বলার থাকে না ওকে। 



কলকাতায় লাইভ শো করার কী প্ল্যান রয়েছে কোনও?


সুনিধি: দেখুন কলকাতায় আমার লাইভ অনুষ্ঠান করার প্ল্যান তো রয়েছেই। এখানে কাজ এত বেশি। যে আমি একদম সময় করে উঠতে পারি না। কলকাতায় অনুষ্ঠান করা হয়ে ওঠে না। এটাই বলব যে, লাইভ করার ইচ্ছা আমার আছেই। কোক স্টুডিয়োয় কনসার্টের সময় কলকাতায় লাইভ করেছিলাম। তবে একা কোনও লাইভ করিনি ওখানে। তবে অবশ্যই ভবিষ্যতে কলকাতায় আমার লাইভ শুনতে পারবেন। কলকাতার মানুষ চাইলে কেন লাইভ শো করব না। অবশ্যই করব। দুর্গা পুজোর সময় শো করার কথা চলছে। আগেরবার পুজোতেও শো করার প্রস্তাব ছিল আমার কাছে। করা হয়নি কাজ ছিল বলে। জানি না এবারও হবে কিনা! এখানে কাজ থাকলে আর কীভাবে যাব! দেখা যাক কী হয়। তবে আমার প্রথম লাইভ শো ঢাকায়। এখানে এসেই শো করেছিলাম আমি। আসলে আমি তো কলকাতায় থাকি না। জানি না, ওখআনে কে আমার গান শোনেন, বা আমাকে নিয়ে ঠিক কীভাবেন! সেরকম আইডিয়া নেই। ঢাকায় লাইভ করতে সেজন্য়ই অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আমি। 


সুনিধির প্রিয় গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক কে? কাজ করার ইচ্ছা কাদের সঙ্গে?


সুনিধি: প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক বললে, বলতে হয় এআর রহমানের কথা। তাঁর সঙ্গে কাজ করার খুবই ইচ্ছা। জানি না সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হবে কিনা কখনও! প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী অরিজিৎ সিংই। যাঁর সঙ্গে আমার কাজ করার খুবই ইচ্ছা। সেটাও কঠিন।


আগামীর প্রজেক্ট নিয়ে যদি কিছু বলেন...


সুনিধি: জানিয়ে রাখি, আমার অ্যালবাম আসছে। অডিয়োর কাজ পুরোপুরি শেষ। ভিডিয়োর কাজ শেষ হলেই আমি অ্যালবাম রিলিজ করব। আমার প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম হবে এটা। অ্যালবামে পাঁচটি গান আছে, প্রতিটি আলাদা। ব্ল্যুজ আছে, হারমোনিকা আছে, বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করেছি আমি। পাঁচটি বিভিন্ন সময় বানিয়েছি গানগুলি। অ্যালবাম করব বলেই কিন্তু গান বানানো নয়। বিগত দু'বছর যেরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, সেখানে দাঁড়িয়ে, যে গান বেরিয়ে এসেছে, তাই গেয়েছি। জানি না মানুষ কীভাবে নেবে। তবে আমি খুবই আশাবাদী। অর্ণব শুনে বলেছে খুব ভালো লেগেছে। যেটা আমার কাছে অনেক বড় পাওনা। 



সুনিধির কাছে শান্তিনিকেতন তো হৃদয়ে জুড়ে, মিস করেন শান্তিনিকেতন?


সুনিধি: আমি তো আগেই বলেছি যে, আসানসোলে জন্ম আমার। তারপর চলে যাই শান্তিনিকেতনে। ওখানেই পড়াশোনা আমার। শান্তিনিকেতনে অর্ণব আসে। ওখানেই আলাপ হয় আমাদের। বাকিটা তো আপনারা সবাই জানে। নতুন করে আর কিছু বলার নেই। আমি শান্তিনিকেতন ভীষণ মিস করি। আর কোথাও যেতে চাই না। আমার মনে হয় শুধু শান্তিনিকেতনে চাই। আমি ছুটি পেলেই শান্তিনিকেতনে চলে যাই।



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)