স্নেহা চট্টোপাধ্যায়: ‘মা’ শব্দটা আমার কাছে ভীষণ ভারী, মানে আমার কাছে ‘হেভি ওয়েটেড’। দায়িত্বের ঢেউ আছড়ে পড়ে যেন। মা হওয়ার পর, আমি একটু হালকা থাকার চেষ্টা করি। পারি না, তাও চেষ্টা করি। ভারি বিষয় যে ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে পারি, তাও নয়। আশা করি,  আমার তুরুপ এতদিনে বুঝে ফেলেছে ব্যাপারটা। ও তো মাঝে মাঝে মা-বাবাকে নাম ধরে ডাকে, আমার কাছে কিন্তু ‘পাক্কা আছে’ ব্যাপারটা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


এমন এক ভদ্রলোকের সঙ্গে প্যান্ডেল হপিং করতে হবে আমায়! ভাবতে পারছেন? ভদ্রলোককে কোলে নিয়ে, হাতে ধরে, হাঁটিয়ে এবার দুগ্গাঠাকুর দেখাব। মা দুগ্গার পোলাপানদের সঙ্গে আলাপ করাব। আলোয় মোড়া কলকাতার অলিগলি দেখাব। মাঝরাতে আমার অভ্যেসমতো ফুচকা খাওয়াতে পারলে বেশ হতো, কিন্তু ওটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে! বাড়িতেই ভালমন্দ রেঁধে খাওয়াব। ঢাকের তালে মণ্ডপে, মায়ে-পোয়ে ফাটিয়ে নাচব। আর ‘বলো দুগ্গা মাই কি জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’-টা তুরুপের আধোভাষায় শুনব-এই আধো-আধো কথার ফেজটা জাস্ট দারুণ! ওহ, হ্যাঁ! তুরুপ বেশ কিছু গানের কলি গুনগুন করছে আজকাল। ভাবছি পুজোর আগে ‘প্রিয়তমা মনে রেখো...অনুপমা মনে রেখো’টাও শিখিয়ে দেব। গত বছরে ওর ষষ্ঠির শুরু হয়েছিল এ গানেই।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: ঝকমকে পুজোর আসরে উধাও কেন বলিউড? এখানে ইডির ভয়?



কী চাইব মায়ের কাছে?


’মা’ হয়ে মায়ের কাছে চাইব, আমার জোনাকপোকা সুস্থ, দীর্ঘজীবন এবং একজন ’সাচ্চা’ মানুষ হোক। আর আমার মা পৃথিবীর সব মায়ের কোলের জোনাকপোকাদের যেন ভালো রাখে, সুস্থ রাখে। আসলে, ওদের ভালোর সঙ্গে তো আমাদের ভালোগুলো জড়িয়ে গেছে যে...



কোলে ‘কার্তিক’ নিয়ে এটা আমার দ্বিতীয় দুর্গাপুজো। তবে পেটে ও কোলে মিলিয়ে তৃতীয়। পেটে থাকতে তুরুপ গানবাজনা শুনলে লাফাত। ঢাকের তালেও লাফিয়েছে। গত বছর যখন কোলে নিয়ে ওর এবং ওর মায়ের প্রথম পুজো কাটছে, তখনও চারিদিকে করোনা আর করোনা। তুরুপের মা-বাবা দু’জনেই আবার বড্ড ভীতু টাইপের। তাই তুরুপের পুজোর বেশিরভাগ কেটেছিল মামাবাড়িতে। আর দশমীর দিন তুরুপ গিয়েছিল ওর দাদুরবাড়ি দেবগ্রামে। রাস্তাটা ভীষণ সুন্দর। চারপাশে সবুজ আর সবুজ আর তার মাঝে মাঝে দুলছে কাশফুল। কাশফুল প্রথম দেখল আমার ছোট্টমানুষ। গাড়ি থামিয়ে মাঠের পাশে দাঁড়াতে হাঁ করে তাকিয়ে আছে কাশফুলের দুলুনি দেখে! 


আরও পড়ুন: Durga Puja 2022 : 'ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে ছোটবেলার সেই দুর্গাপুজোর স্মৃতি এখনও টাটকা!'



তুরুপের ভাষায় ‘মামা ভাই কী মদা, কি-ত নাই, কি-ত নাই’! মজাই ছিল বটে! দোতলার বারান্দার নিচেই দুগ্গাঠাকুর। রাত দু’টোয় ঘুম ভেঙে মায়ের কোলে চেপে ফাঁকা মণ্ডপে হাঁ করে তাকিয়ে দেখত। পুজোর কটাদিন এবেলাওবেলা নতুন-নতুন জামা পরে ছবি তোলা আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধিপুজোয় ঢাকের তালে দাদু-দিদার কোলে নাচ! তখনও বুঝতেই পারিনি, যে আমার ছেলে এমন চ্যাংড়া হয়ে উঠবে আগামি এক বছরেই। তুরুপ দুষ্টু, বিচ্ছু, তার উপরে এখন সে ফচকে, ফূর্তিবাজ এবং চ্যাংড়া। এই আগুনের গোলা হল আমার পোলা। তবে তাকে পেয়ে আমি যারপরনাই খুশি। আমিই যে এখন মা হয়েছি, এই গোটা বিষয়টা আমার সঙ্গে ‘সিঙ্ক’ করতে পারিনি। তুরুপকে দেখে বুঝতে পারি যে ও একেবারে আমার দলের ’পাক্কা লোক’। ঠিক কোনও না কোনও ভাবে ’সিঙ্ক’ করিয়ে নিচ্ছে, আমায়।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)