৪৩এ পা, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলা ছবিতে তৈরি হয়েছিল নতুন `ঘরানা`
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে ফিরে দেখা তাঁর কিছু অন্য়ধারার ছবি।
নিজস্ব প্রতিবেদন : শুরুটা করেছিলেন ২০১০ সালে 'অটোগ্রাফ' ছবির হাত ধরে। তাঁর প্রথম ছবি দেখেই মুগ্ধ হয়েছিল বাংলা ছবির দর্শক। আর সেসময় থেকেই সৃজিত 'টাচ'-এ বদলাতে শুরু করেছিল তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবির ধারা। তাঁর হাত ধরেই বাংলা ছবির দুনিয়ায় একটা অন্যরকম 'ঘরানা' তৈরি হয়েছিল বললে ভুল হয় না। কিছু দর্শক যাঁরা বাংলা ছবির কথা বললে একসময় নাক সিটকাতেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবির হাত ধরে তাঁরাই আবার ধীরে ধীরে বাংলা ছবিকে ভালোবাসতে শুরু করলেন। এই শ্রেণির দর্শকদের বাংলা ছবি দেখার জন্য হলে ফেরাতে 'মুখার্জি'বাবুর বিশেষ অবদান যে রয়েছে তা অনেকেই স্বীকার করে নেন। ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে ফিরে দেখা তাঁর কিছু অন্যধারার ছবি।
২২ শ্রাবণ- ২০১০ সালে অটোগ্রাফ তৈরি করে নতুন দর্শকদের মুগ্ধ করার পর ২০১১ সালে সৃজিত মুখোপাধ্যায় আনলেন '২২ শ্রাবণ'। এই ছবির আগে বাংলা ছবিতে দর্শক এমন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার দেখেছে বলে মনে পড়ে না। বিশেষ করে ছবির 'ক্লাইম্যাক্সে সিন'টি দর্শকদের চমকে দিয়েছিল। আবার এই ছবিতে দর্শকরা দেখেছিল অন্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। ছবিতে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, রাইমা সেন, সকলের চরিত্রই দর্শকদের বেশ মনে ধরেছিল।
আরও পড়ুন-বিয়ের পর প্রথম পুজো, মিথিলাকে কী উপহার দিলেন সৃজিত?
হেমলক সোসাইটি- ঠিক পরের বছর দর্শকদেন 'রোম্যান্টিক ডার্ক কমেডি' হিসেবে 'হেমলক সোসাইটি' (২০১২) উপহার দেন জন্য সৃজিত মুখোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রীয় ভূমিকায় পরমব্রত-কোয়েলের চরিত্র দুটি ছাড়াও ছবির অন্যান্য চরিত্র এবং বিশেষ করে ছবির গানগুলি মনে ধরেছিল দর্শকদের।
জাতিস্মর ও চতুষ্কোণ- ২০১৪-য় মুক্তি পায় সৃজিতের মিউজিক্যাল ড্রামা জাতিস্মর৷ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ছিলেন ছবির মুখ্য চরিত্রে। এই ছবির হাত ধরে বাংলার ছবির ঘরে আসে একাধিক জাতীয় পুরস্কার। আবার ওই একই বছর চতুর্মুখী প্রেমের গল্প নিয়ে রোমান্টিক থ্রিলার 'চতুষ্কোণ' উপহার দেন সৃজিত। যা সুপারহিট হয়। এই ছবিও সৃজিতের হাতে তুলে দেয় জাতীয় পুরস্কার। 'সেরা চিত্রনাট্য' এবং 'সেরা পরিচালক' বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেয় সিনেমাটি। ছবিতে অপর্ণা সেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী সহ সকলেই ছিলেন অনবদ্য।
নির্বাক- ২০১৫ সালে সৃজিতের ভিন্নধর্মী কাজের উদাহরণ হিসেবে রিলিজ হয় 'নির্বাক'। ছবিতে অঞ্জন দত্ত, যীশু সেনগুপ্তর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল সুস্মিতা সেনকে।
রাজকাহিনি- ২০১৫ সালে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সহ একঝাঁক তারকাকে নিয়ে সৃজিত বানিয়েছিলেন 'রাজকাহিনি'। বলাই বাহুল্য এই ছবিও দর্শকদের মুগ্ধ করে৷ ১৯৪৭-এর প্রেক্ষাপটে তৈরি রাজকাহিনি পরে হিন্দিতে 'বেগমজান' নামে রিমেক হয়৷ যেখানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বিদ্যা বালান৷
উমা- ২০১৮ সালে সৃজিত বানালেন 'উমা'৷ কানাডায় অন্টারিওতে অবস্থিত সেন্ট জর্জ শহরে বাসিন্দা ইভান লিভারসেজের জীবন-মরণ সম্পর্কিত সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হল ছবি। যে ছবি দেখতে কলকাতায় হাজির হয়েছিলেন খোদ ইভানের মা নিকোল ওয়েলউড। তিনিও তাঁর ছেলের গল্প এভাবে সিনেমার পর্দায় উঠে আসতে দেখে সেবার চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। এই ছবিতে যিশু সেনগুপ্ত এবং তাঁর মেয়ে সারার একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা ছিল দর্শকদের কাছে নতুন চমক।
এক যে ছিল রাজা- ২০১৮ সালে ফের একবার জাতীয় পুরস্কার এসেছিল সৃজিতের ঝুলিতে সৌজন্য 'এক যে ছিল রাজা'। বাংলাদেশের বর্তমান গাজীপুর জেলার বহুল চর্চিত ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলা ও ইতিহাসকে প্রেক্ষাপট করে তৈরি এই ছবি ফের দর্শকদের মন কাড়লো। যীশু সেনগুপ্ত, জয়া আহসান সহ আরও বহু তারকা এই ছবিকে সমাদৃত করেন।
গুমনামি- ২০১৯-এ নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবি যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করে৷ মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়৷ তবে এই ছবি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজের জায়গা ধরে রাখে বহুদিন৷
দ্বিতীয় পুরুষ- এবছরের শুরুর দিকে বাংলা ছবির দর্শকদের আরও একবার 'সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার' -এর স্বাদ ফিরিয়ে দিতে সৃজিত আনেন 'বাইশে শ্রাবণ'-এর সিক্যুয়াল 'দ্বিতীয় পুরুষ'। যে ছবির জন্যই হয় দর্শকদের কাছে অভিনেতা অনির্বাণের আরেক নাম হয়ে গিয়েছে খোকা। কেউ কেউ আবার এজন্য মজা করে সৃজিতকে 'খোকার মালিক' বলতেও ছাড়েন না। তবে এমন একটি ভয়ঙ্কর চরিত্র ও 'সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার' বাংলা ছবির দর্শক হয়ত আগে কখনও দেখেননি।
তবে বাংলা ছবির প্রথমসারির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে দর্শকরা অবশ্য় আরও অনেককিছুই আশা করেন। আর এই চাহিদা তৈরি হওয়ার কারণও তিনি নিজেই। ২৩ সেপ্টেম্বর, তাঁর জন্মদিনে Zee ২৪ ঘণ্টার তরফে রইল শুভেচ্ছা।