সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: এক বছর হল বাঙালি হারিয়েছে তাঁর কালচারাল আইকনকে। কিন্তু কে বলে এই প্রভাতে নেই তিনি, জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নাট্যকার, কবি, পরিচালক, চিত্রশিল্পী, পত্রিকা সম্পাদক, অভিনেতা, বাঙালির আন্তর্জাতিক মুখ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রয়াণদিবসে তাঁর স্মৃতি ভাগ করে নিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা সুদীপ্তা চক্রবর্তী। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রশ্ন: আপনার কাছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দ্য ইনস্টিটিউশন।


সুদীপ্তা: ইনস্টিটিউশন তে বটেই। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার সঙ্গে দেখে এসেছি ওঁর ছবি। 'হীরক রাজার দেশে' থেকে শুরু করে আরেকটু বড় বয়সে দেখেছি 'চারুলতা','ঘরে বাইরে'। আমার বাবার কাছে তো উনি পূজণীয় ব্যক্তি ছিলেন, আমাদের কাছে ইনস্টিটিউশনের মতোই। সত্যজিত রায়ের হিরো, নাটকের স্টলওয়ার্ট, কবি, চিত্রকর, বাগ্মী একজন মানুষ, যেকোনও বিষয়ে এতো ভালো শব্দচয়ন করে কথা বলা, একজন উচ্চশিক্ষিত অভিজাত বাঙালি, ঋজু-সুঠাম দেহ, ভারী কন্ঠস্বর, সবমিলিয়ে তিনি ছিলেন জীবনের অধিক এক ব্যক্তিত্ব, যিনি সত্যিই আমার কাছে এক ইনস্টিটিউশন । 


প্রশ্ন:  একাধিক ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন, অভিনয়ের কোন কোন দিক যা আপনি শিখেছেন ওঁর থেকে? যা আগামী প্রজন্মের অভিনেতাদের কাছে শিক্ষণীয়। 


সুদীপ্তা: ওঁর কাছ থেকে আগামী প্রজন্মের যা শেখা উচিত, যা আমরাও শিখেছি, তা হল সময়ানুবর্তিতা। কাজের জায়গায় ঠিক সময়ে পৌঁছানো, যা কয়েকজনকে বাদ দিলে আমরা এখন প্রায় ভুলতে বসেছি। এটা আমি আমার অভিনয়ের ক্লাসে প্রতিদিনই বলি। দ্বিতীয়ত হল সংলাপ যথাযথভাবে মুখস্থ করা। আমার ধারণা, ওঁ সিনেমায় যেভাবে বলবেন বলে ভাবতেন সেভাবেই মুখস্থ করে নিতেন। সংলাপ বলার মধ্যে অনেক কারিকুরি থাকত। ঠিক কোথায় থামতে হবে, কোনটা আস্তে, কোনটা জোরে বলতে হবে, কোনটা তাড়াতাড়ি বলতে হবে, অসম্ভব ভালো সংলাপ বলার ক্ষমতা ছিল। তৃতীয়ত, ওঁর শিশুসুলভ মন, জানার ইচ্ছার শেষ নেই। শটের পর জিজ্ঞাসা করতেন, 'কেমন হলো রে'। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন, বিব্রত হয়ে যেতাম, কে আমাকে জিগেস করছে! চতুর্থত ডাবিং করার দক্ষতা। ফ্লোরে যা সংলাপ বলেছেন যথাযথ সেই সংলাপই একটা অন্ধকার ঘরে বলা খুবই কঠিন। আমি আজও পারি না। এটা ওঁর কাছে শেখার ছিল। 



প্রশ্ন: ক্যামেরার পিছনে কেমন ছিল আপনাদের সম্পর্ক? 


সুদীপ্তা: ক্যামেরার পিছনে আমাকে কন্যাসম স্নেহ করতেন। বাবার সঙ্গে তাঁর পরিচয়, তাঁর বন্ধুত্ব, একে অপরকে পছন্দ করতেন তাই আমাকে তাঁর কন্যা হিসাবেই দেখতেন। মা বলে সম্বেধন করতেন। ওঁর মুড অনুযায়ী কখনও তুমি কখনও তুই বলতেন। আদর, যত্ন, স্নেহ, ভালোবাসা সবই পেয়েছি। বসু পরিবার শুটিংয়ের সময়ে আমার শুটিং শেষে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। সৌমিত্র জেঠু ও অপর্ণা সেনের শুট চলছে। তো শুটের মাঝে ওঁরা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আমি জিগেস করলাম,'আমাকে নিয়ে তোমরা হাসছো কেন'? তখন অপর্ণা সেন বললেন, সৌমিত্র জেঠু ওঁকে বলেছেন, 'এই মেয়েটি বড় ভালো অভিনয় করে'। আমার অবর্তমানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায় অপর্ণা সেনের কাছে আমার প্রশংসা করছেন এর চেয়ে বড় পুরষ্কার আর কি হতে পারে! একাধিক জায়গায় জেঠু আমার অভিনয়ের প্রশংসা করতেন। এগুলোই আমার জীবনের অন্যতম পাওনা। 


প্রশ্ন: আজ মুক্তি পেয়েছে ৭২ ঘণ্টার পোস্টার। এই ছবিতে আপনার চরিত্র কীভাবে জড়িয়ে ওর চরিত্রের সঙ্গে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?


সুদীপ্তা:  অনেকদিন ধরেই এই ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় ছিলাম। এটি অতনু ঘোষের ছবি, অতনু দা সৌমিত্র জেঠুর খুবই প্রিয় একজন পরিচালক। এটা একটা অ্যান্থোলজি। আমার গল্পে জেঠু ছিলেন না, এই ছবিতে ওঁর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা হয়নি।  তবে অনেক সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছি, ময়ূরাক্ষী রয়েছে, বসু পরিবার রয়েছে, অনেক কিছু শিখেছি ওঁর থেকে। 


আরও পড়ুন: Prosenjit Chatterjee: মাথায় টাক, মুখে বয়সের ছাপ, ছাপোষা পোশাকে পুকুরপাড়ে বসে প্রসেনজিৎ!



প্রশ্ন: অনেকেই অনেক সময় বলেছেন তিনি Mass-র নয়, এলিট ক্লাসের অভিনেতা, আপনি একজন অভিনেতা হিসাবে আপনার কী অভিমত। 


সুদীপ্তা: ওঁ এলিট ক্লাসের পছন্দ ছিলেন, তা তো অনস্বীকার্য। বেশ কিছু ছবি, এমনকি বানিজ্যিক ছবি যা একেবারেই মশলা ছবি, সেইসব ছবিতে দীর্ঘদিন তিনি অভিনয় করেছেন। দর্শকরা পছন্দও করেছে সেই ছবি। তবে এখন Mass ও Elite বাঙালির কোয়ালিটিও বদলে গেছে। সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ছিল কিনা তা তর্কের বিষয়ে। তবে দর্শকদের বিভিন্ন স্তরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল। গত বছর আজকের দিনে কোভিডকালে যেভাবে তাঁর জন্য কলকাতার জনগন রাস্তায় নেমেছিল তা দেখে অস্বীকার করার জায়গা নেই যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন জনগণের অভিনেতা। 


 (Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)