Taslima Nasreen: `রাউলিংকে নিয়ে সরব, আমাকে নিয়ে কথা বলতে ভয় পান বাঙালি লেখকরা`, বিস্ফোরক তসলিমা
Taslima Nasreen: জি ২৪ ঘণ্টার তরফ থেকে সাহিত্যিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, ‘আমি এটা আশা করিনি। বাংলাদেশ থেকে ফতোয়া জারি হয়েছে আমার মাথার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারত থেকেও হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী অধ্যুষিত জায়গা থেকে আমার নামে ফতোয়া জারি হবে তা আমি ভাবতে পারিনি`।
Taslima Nasreen, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সম্প্রতি নিউইয়র্কে আততায়ীর হাতে ছুরিবিদ্ধ হন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সলমন রুশদি। এই ঘটনার নিন্দায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয় তসলিমা নাসরিন। তাঁর কয়েকদিনের মধ্যেই এবার প্রাণনাশের হুমকি তসলিমা নাসরিনকে। ট্যুইটারে সেই হুমকির বার্তাই শেয়ার করেছেন সাহিত্যিক। তিনি জানিয়েছেন যে, বারংবার এই হুমকিতে আতঙ্কিত তিনি। সাহিত্যিকের দাবি যে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন থেকে ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন তিনি। জি ২৪ ঘণ্টার তরফ থেকে সাহিত্যিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, ‘আমি এটা আশা করিনি। বাংলাদেশ থেকে ফতোয়া জারি হয়েছে আমার মাথার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারত থেকেও হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী অধ্যুষিত জায়গা থেকে আমার নামে ফতোয়া জারি হবে তা আমি ভাবতে পারিনি। ওখানে দেখলাম কিছুদিন আগে একটি ধর্মীয় সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা খাদিম হুসেন ঋদ্ধি একটি ব়্যালিতে প্রকাশ্যে বলেছে যে, সলমন রুশদি ও তসলিমা নাসরিনকে হাতের কাছে পেলে আমি নিজেই তাদের খুন করতাম। বলেছে যে ওরা নবী নিয়ে এত বাজে কথা বলেছে যে ওদের খুন করতেই হবে’।
তসলিমা জানান, ‘ঐ ভিডিয়ো প্রচারের পর ব়্যালিতে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছিল তাদের মনে হয়েছে যে সত্যিই আমাদের খুন করতে হবে। ইতিমধ্যেই সলমন রুশদিকে হামলা করা হয়েছে। এবার বাকি আমি। এরপর থেকে ট্যুইটারে পাকিস্তান থেকে হুমকি পেয়ে চলেছি। তোমাকে মারা সহজ হবে, এসব বলছে। সবার প্রোফাইল দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা সন্ত্রাসবাদী বা সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী, এরকম ইসলাম। সবাই খুব খুশি যে সলমন রুশদিকে হামলা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে বা ভারতে মাথার দাম ঘোষণা করায় আমি বিশেষ উদ্বিগ্ন ছিলাম না। তবে এখন আমি উদ্বিগ্ন। কারণ এরা সরাসরি পাকিস্তান থেকে হুমকি দিচ্ছে’।
আরও পড়ুন: Noble: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নোবেলের বিতর্কিত মন্তব্য, আইনি নোটিস পেয়েই মুছলেন পোস্ট
তা হলে কবি-সাহিত্যিকরা তাঁদের মত প্রকাশ করবেন না? তসলিমা বলেন,‘নিশ্চয় করবেন। তবে ইসলামের সমালোচনা দেখলে প্রকাশকরা ছাপাতে চায় না। নিউজপেপার ও ম্যাগাজিনগুলোও ছাপাতে চায় না, লেখায় কাঁটছাট করতে বলে। আমি মতপ্রকাশ করতে চাই, কিন্তু আমার মতপ্রকাশে বাধা দিচ্ছে প্রকাশনা সংস্থা, মিডিয়া সংস্থার এডিটররা। আমি কীভাবে প্রকাশ করব? ফেসবুক ও ট্যুইটারেই মতামত জানাতে পারি কিন্তু আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াও আটকে দিচ্ছে, ব্যান করা দিচ্ছে। কেউ ইসলামের সমালোচনা করতে চায় না। কিন্তু আমার বক্তব্য, সমালোচনা না করলে একটা সমাজ কীভাবে এগোবে? ইসলামে এই যে নারী পুরুষের ভেদাভেদ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, গনতন্ত্র নেই। এই যে একটা ধর্মীয় সম্প্রদায় যেখানে কোনও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, সেটা নিয়ে যদি সমালোচনা না হয়, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে যত বৈষম্য, অন্যায় আছে তা যদি তুলে না ধরি, তাহলে মানুষ জানবে কী করে? কোরান লেখা আরবিতে, এখানকার কেউ আরবি জানে না। সবাই ভাবে কোরানে ভালো ভালো কথাই আছে। সেখানে বিধর্মীদের, ধর্মের সমালোচকদের খুনের কথা আছে, সেটা তো তুলে ধরতে হবে। এটা যে কত অমানবিক, যদি না তুলে ধরি তাহলে কীভাবে মানুষ বুঝবে। যারা মাদ্রাসায় পড়ে তাদের তো জানতে হবে। আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ধর্মকে আগলে রাখার জন্য সরকার আছে, কিন্তু আমরা যারা গনতন্ত্রের চাই, মানবাধিকার চাই, নারী পুরুষের ভেদাভেদ মুথে দিতে চাই, বৈষম্যহীন আইন চাই, তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। সব ধর্মের সংস্কার হয়েছে, সমাজ এগিয়েছে কিন্তু কেন মুসলিম সম্প্রদায় পিছিয়ে আছে। কারণ এই ধর্মে মতপ্রকাশের অধিকার নেই, কোনও সরকারই কথা বলতে দেয় না’।
আরও পড়ুন: Jacqueline Fernandez: ২০০ কোটি টাকার তোলাবাজি মামলা, ED-র চার্জশিটে ‘অভিযুক্ত’ জ্যাকলিন
জি ২৪ ঘণ্টার মাধ্যমেই তসলিমা নাসরিনের জীবন সংশয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁকে ধন্যবাদ জানান লেখিকা। তসলিমা বলেন, ‘সাধারণত তো কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করে না। উপমহাদেশের বাইরে যাঁরা অন্য ভাষায় লেখেন তাঁদের নিয়ে উদ্বেগ জানান। তাঁদের জন্য রাস্তায় নামে আমাদের কবি সাহিত্যিকরা। কিন্তু যাঁরা বাংলা ভাষায় লেখেন তাঁদের জন্য কখনও রাস্তায় নামতে দেখি না। এটা একধরনের হীনমন্যতায় ভোগে। আমাকে সমানে পাকিস্তান থেকে হুমকি দিচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। জে কে রাউলিংকে হুমকি দিয়েছে, বড় খবর হয়ে গেছে। আমাকে তো মেরে ফেলা সহজ। যাঁরা পশ্চিমী দেশে থাকে, তাঁদের অনেক নিরাপত্তা, তাও সলমন রুশদি আহত হলেন, তাহলে আমাকে তো মেরে ফেলা সহজ, বিশেষ করে আমরা যাঁরা মুসলিম হয়েও ইসলামে বিশ্বাস করি না।’
তাহলে কী এবার থেকে একটু বেশি সচেতন থাকবেন লেখিকা। বাড়িতেই থাকবেন বেশি? তসলিমার সাফ জবাব, ‘আমাকে তো বেরতেই হবে। ভয় পেয়ে তো বাড়িতে বসে থাকতে পারব না। বাংলাদেশেও ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কি কম জঙ্গি মুসলিম আছে! তারপরেও আমি বাংলাদেশে থাকতে চেয়েছিলাম, থাকতে দিল না। পশ্চিমবঙ্গেও থাকতে চেয়েছিলাম, আমাকে জোর করে বের করে দেওয়া হল। আমি ভয় পাই না। তবে হ্যাঁ, আমি কোনও ব়্যালিতে যাব না, এটুকু সাবধানতা অবলম্বন করব। তবে কেউ যদি আমায় মেরে ফেলার কৌশল করে সেটা থেকে তো বাঁচা যাবে না। আমি আমার মুখ বন্ধ করব না, বাড়িতে বসেও থাকব না, স্বাভাবিক জীবনযাপন করে যাব। আমার যা কিছু মত আমি প্রকাশ করেই যাব, তা যাই সামনে আসুক'।