Pallavi Dey-Dagar Tudu: ডগররা যদি জিততে পারে, পল্লবীরা কেন হাল ছেড়ে দেয়?
টেলিভিশনের দৌলতে পল্লবীর ঘটনা জেনেছেন ডগরও (Santali Actress Dagar Tudu)। তাঁর মতে, `জীবনে সুখ আর দুঃখ একসঙ্গেই আসে। সুখটাকে আমরা যেমন ভাবে আপন করেনি, তেমনই ঠান্ডা মাথায় দুঃখটাকেও কাছে টেনে নিলে, অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। আমার জীবনেও বহু প্রতিকূলতা এসেছে কিন্তু পরিবার আমার পাশে থেকেছে।`
তনুজিৎ দাস: 'দাদা একটা কাজের সুযোগ দেবেন?' এই প্রশ্ন সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন টলি পাড়ায় ঘোরাফেরা করেন বহু তরুণ-তরুণী। পল্লবীও (TV Actress Pallavi Dey) হয়ত তেমনটাই করেছিলেন। অভিনয় জগতে এসে হঠাৎ খ্যাতি-অর্থ-যশ-পরিচিতি সবই পেয়েছিলেন হাওড়ার জগাছার মেয়েটি। কিন্তু এরপরও জীবনযুদ্ধে 'চরম' পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।
কাট টু জঙ্গলমহল! পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লক।
সেই প্রত্যন্ত এলাকা থেকেই উঠে এসেছেন আরও এক অভিনেত্রী, নাম ডগর টুডু (Santali Actress Dagar Tudu)। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ১২তম 'দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে' শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাঁওতালি ছবি 'আশা'তে একজন বিশেষ ভাবে সক্ষম মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন কেড়েছেন ২২ বছরের ডগর। নিম্ন মধ্যবিত্ত, গ্রাম্য পরিবার, পিতৃহীন ডগরও পল্লবীর মতোই জীবনযুদ্ধে লড়ছেন। কিন্তু তাঁর সেই লড়াইয়ের সঙ্গে রয়েছে, 'হার না মানা' মানসিকতা এবং 'কুছ পরোয়া নেহি' অদম্য জেদ।
জ্বলন্ত প্রদীপের তলায় যেমন অন্ধকার থাক, তেমনই লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের ঝলকানির পিছনেও রয়েছে একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন জগত। শোনা যাচ্ছে, পল্লবীর (Pallavi Day) জীবনেও নাকি তা এসেছিল। পরপর বেশ কয়েকটি সিরিয়াল বেশিদিন না চলা, বহু মানুষের 'বাঁকা মন্তব্য' এবং ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের টানাপোড়েন, এ সবের কি প্রভাব পড়েছিল পল্লবীর মনে?
তাঁর খুব কাছের বন্ধু অভিনেতা সায়ক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, "আমিও শুনেছিলাম ওকে নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। আমি নিজেই ওকে জানিয়েছিলাম। ও বলেছিল দেখবি আমি একদিন এমন একটা সিরিয়াল করব, যেটা এক বছরের বেশি চলবে। তখন আর কেউ এসব কথা বলবে না। খুব পজিটিভ ছিল।"
তবে কেন এমন 'চরম' সিদ্ধান্ত? কেবলই সম্পর্কের টানাপোড়েন নাকি হঠাৎ অসাফল্যের মুখোমুখি হওয়া?
পল্লবীকে (Pallavi Day) খুব কাছ থেকে দেখেছেন পরিচালক প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী (Premendra Bikash Chaki)। তাঁর মতে, "সাফল্যের পিছনে একটা সংগ্রাম ও পরিশ্রম থাকে। আমাদের এই জগতে ধৈর্যটা অমূল্য সম্পদ। এখন টেলিভিশনের দৌলতে দেখতে ভাল ছেলেমেয়েরা রাতারাতি অভিনেতা-অভিনেত্রী হয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসছেন। ফলে এখানে এসে হঠাৎ করে তাঁরা যে পরিমাণ অর্থ-যশ-খ্যাতি পাচ্ছেন, তাতে মাথা ঘুরে যাচ্ছে। একটা পল্লবী কেন, শয়ে শয়ে পল্লবী ইন্ডাস্ট্রিতে লুকিয়ে রয়েছে।"
একই বক্তব্য পরিচালক, প্রযোজক তথা চিত্র নাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্য়ায়েরও (Leena Ganguly)। ডগর টুডুর (Santali Actress Dagar Tudu) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "ডগরের হয়ত তাগিদ ছিল, নিজেকে প্রমাণ করার এবং আরও বড় আকাশ ছুঁয়ে যাওয়ার। সেই লক্ষ্যে উনি এগিয়েছেন। আমি শুধু একটা পল্লবীকে বলব না। এমন অনেক মেয়েরা রয়েছে, যাঁরা লড়াই করার চেষ্টা হয়ত করেছেন। কিন্তু লড়াইয়ের ক্ষমতাটা হয়ত এক রকম হয়নি। আরও অন্য জীবন হয়ত তাঁদের হাতছানি দিয়েছে।"
টেলিভিশনের দৌলতে পল্লবীর ঘটনা জেনেছেন ডগরও (Santali Actress Dagar Tudu)। তাঁর মতে, "জীবনে সুখ আর দুঃখ একসঙ্গেই আসে। সুখটাকে আমরা যেমন ভাবে আপন করেনি, তেমনই ঠান্ডা মাথায় দুঃখটাকেও কাছে টেনে নিলে, অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। আমার জীবনেও বহু প্রতিকূলতা এসেছে কিন্তু পরিবার আমার পাশে থেকেছে।"
চরম মানসিক অবসাদে পরিবার বা কাছের মানুষদের আঁকড়ে ধরার পরামর্শ দিচ্ছে কনসালট্যান্ট সাইক্রিয়াটিস্ট জয়রঞ্জন রাম। তিনি জানান, "কোনও মানুষ যখন অবসাদগ্রস্থ অবস্থায় থাকে, তখন তাঁর আশপাশের মানুষদের বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ব্যবহারিক কিছু পরিবর্তন দেখে আমাদের অনুমান করতে হবে যে এই মানুষটা সুস্থ নেই, তাঁর মন ভাল নেই, তাঁর সাহায্যের দরকার। পরিবার, বন্ধুবান্ধব সেক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।"
একটা পল্লবী বা একটা ডগর নন, প্রত্যেকটা মানুষই জীবনে চড়াই-উতড়াইয়ের মুখোমুখি হন। তাঁদের মধ্যে সকলে কিন্তু 'চরম' সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না, কেউ কেউ মতি নন্দীর বিখ্যাত 'ফাইট কোনি ফাইট' লাইনকে মাথায় রেখে, জীবনের রূঢ় বাস্তবের সঙ্গে লড়ছেন।