``এটা বন্ধ হওয়া দরকার``, Shruti-র উপর আক্রমণে গর্জে উঠলেন Sreela, Leena, Anindita
শ্রুতি উপর এধরনের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করলেন শ্রীলা মজুমদার, লীনা গঙ্গোপাধ্যায় , অনিন্দিতা সর্বাধিকারী।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০২১-এ দাঁড়িয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় গায়ের রং নিয়ে অশালীন আক্রমণের শিকার অভিনেত্রী শ্রুতি দাস। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিসের সাইবার সেলে অভিযোগ জানিয়েছেন অভিনেত্রী। শ্রুতি উপর এধরনের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করলেন শ্রীলা মজুমদার (Sreela Majumdar), লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (Leena Ganguly), অনিন্দিতা সর্বাধিকারী (Anindita Sarbadhikari) রা।
শ্রীলা মজুমদার, অভিনেত্রী : শুনে খুবই খারাপ লাগল। এটা মোটেও কাম্য নয়। এখনও যদি রং নিয়ে ভাবতে হয়, তাহলে আমার জায়গাটা কোথায়? আমি যখন কেরিয়ার শুরু করেছিলাম, এক কথায় অনেকেই বলত ওই কালো মেয়েটি। কিন্তু তখন ওই কালো মেয়েটি বলা, আর আমার অভিনয় মিলেয়ে একটা প্রশংসার দিকও ছিল। তখন অনেকে বলত, কী সুন্দর অভিনয় করে, ওই যে ছিপছিপে কালো মেয়েটি। ধীরে ধীরে লোকেরা নাম জানে। আজকে এসে যদি শ্রুতিকে এমন কথা শুনতে হয় সেটা দুর্ভাগ্যের। ওকে বলব, আমিই একটা উদাহরণ। ও যেন এটা নিয়ে না ভাবে। মানুষের কি কাজ নেই? একটা ছোট মেয়ের পিছনে এভাবে লেগেছে! তাঁকে কাজ থেকে বের করার মতো পরিকল্পনা হচ্ছে, খুবই খারাপ এটা। মানুষের চেতনা কবে যে জাগবে, সেটাই বুঝি না। এধরনের সমালোচনার তীব্র প্রতিবাদ করছি, শ্রুতির পাশে আছি।
আরও পড়ুন-'তিয়াসা ফর্সা, ওকে কালো করা নিয়ে সমস্যা নেই, আর আমি কালো বলেই নোংরা আক্রমণের শিকার'
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, পরিচালক : শুধু ও যে জায়গা থেকে উঠে এসেছে সেখানকার মানুষজনই ওকে গায়ের রং নিয়ে বলছে, এমন কিন্তু নয়। আমরা অনেক প্রোফাইল খুঁজে দেখেছি, যাঁরা আক্রমণ করছে, তাঁদের মধ্যে অনেকে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁদের মানসিকতা নিয়ে তো প্রশ্ন ওঠে! যাঁরা এটা করছেন, তাঁদের হয়ত মানসিক বিকৃতি আছে। কেউ আবার এই জায়গায় এসে পৌঁছতে পারেননি, সেই হতাশা থেকেও এমন আক্রমণ করেন। এখনও এ সমাজে বর্ণ বৈষম্য কোথাও না কোথাও মানুষের মনে রয়ে গেছে। অনেক মেয়েরাই এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমার মনে হয়, উদাহরণ হয়ে থাকবে, এমন শাস্তি দেওয়া উচিত। সোশ্যাল মিডিয়া মানেই ত আমরা যাকে যা খুশি তাই বলতে পারি না। মহিলা কমিশন বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে দেখছে। ট্রোলটা ততক্ষণই ঠিক আছে, যতক্ষণ সেটা ব্যক্তি আক্রমণের মধ্যে পড়ে না। আমরা সাইবার সেলে জানিয়েছি। আমরা এটাই জানাতে চাই, এবার এটাকে বন্ধ হওয়া দরকার।
অনিন্দিতা সর্বাধিকারী , পরিচালক : শুধু এই একটা বিষয় কেন, এখনও দেখবে বিয়ের সময় মেয়েদের গায়ের রং দেখা হয়। ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে দেখবে, লোকজন পাত্রী খুঁজতে গিয়ে লেখে গৌরবর্ণা, উজ্জ্বল গৌরবর্ণা পাত্রী চাই। এই বিষয়টা সমাজের মধ্যে গভীর ভাবে গেঁথে আছে। আমার ছোটবেলাতেই আমি শুনেছি, গায়ের রংটা কালো, কিন্ত চোখ দুটো গভীর। গায়ের রংটা একটা যেন সমস্যা। আমার দাদু বলেছিলেন, ও কালো তো কী হয়েছে, ওকে আমরা সোনা দিয়ে মুড়ে দেব। এই মানসিকতা এখনও তো বদলায় নি। আমরা এখনও গায়ের রং দেখি, পদবী দেখবি, এ সমস্যা সমাজের মজ্জায় মজ্জায়। এই মেয়েটির লড়াই হয়তবা একার লড়াই হয়ে থেকে যাবে, সমাজ যে ওর পাশে দাঁড়াবে, তার জন্য তো সমাজের মানসিকতা বদলাতে হবে। Kudos to her, যে ও এই লড়াই করছে, একদিন আমিও লড়েছি। এরজন্য সার্বিক পরিবর্তন দরকার।
আমি একটা ছবি করেছিলাম, এই গায়ের রংকে বিষয় করে। ছবির নাম ছিল 'সাধারণ মেয়ে'। যেটা ইউনাইটেড নেশনে জেন্ডার সেনসিটিভিটি অ্যাওয়ার্ড পায়। কিন্তু তাতে মেয়েদের লড়াই কিছু কমেনি। ছবিতে কাজ করার সময় জুন (মালিয়া) আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল, এখনও কি এগুলো হয়? আমি তখন ওকে দেখিয়েছিলাম, ৮৯টা পাত্রী চাই-এর বিজ্ঞাপনে ৮৭টাতে লেখা ফর্সা সুন্দরী পাত্রী চাই। এদেরকে প্রতিটা পদক্ষেপে না আটকালে কী করে সমাজ বদলাবে?