নিজস্ব প্রতিবেদন : নেতাজির জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এবার নয়া ভাবনা নিতে পারে কেন্দ্র। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামে হতে পারে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়লের নাম? নাম বদলের ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। সূত্রের খবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়লের সঙ্গে যোগ হতে পারে আজাদ হিন্দ ফৌজের নামও। নেতাজি কমিটি থেকে এমনই প্রস্তাব রাখা হয়েছে বলে খবর। তবে কেন্দ্রের এমন পরিকল্পনায় কী মত বাংলার বুদ্ধিজীবীদের।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়


এটা করা ঠিক হবে বলে আমার মনে হয়না। কারণ, ওটা তো ভিক্টোরিয়ার নামেই আছে। যাঁরা করেছিলেন, তাঁর নামটাই বদলে দেওয়া, মনে হয় ঠিক হবে না। মেমোরিয়াল ভিক্টোরিয়ার নামে, এটা নেতাজি মেমোরিয়াল করলে ভিক্টোরিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নেতাজিকে দেওয়ার মত হতে যাবে। ওটা তো তৈরিই হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার নামে। ওই মেমোরিয়াল তো নেতাজির নামে তৈরি হয়নি। এটা এখন নেতাজির উপর আরোপ করা হলে বিধিসম্মত হবে বলে মনে হয়না। এটা সৌজন্যের অভাব বলে মনে হচ্ছে। নেতাজির নামে প্রয়োজনে অন্য মেমোরিয়াল করা হোক। এটার উপর করার কেন?



পবিত্র সরকার


আমি মনে করি এটা অত্যন্ত অনুচিত হবে। নেতাজির সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার কোনও সম্পর্ক ছিল না। ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিতেই এটা তৈরি হয়েছিল। ঐতিহাসিক ঘটনা বদলে দেওয়া ভীষণই অনুচিত হবে বলে আমার মনে হয়।



বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়


নেতাজি কমিটি যদি কোনও প্রস্তাব দিয়ে থাকে, তাহলে তাঁরা হয়ত কিছু ভেবে বলেছেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এই বিষয়টা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে আরেকটু আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল একটা ঔপনিবেশিকতাবাদের ধারক বাহক। সেখানে ব্রিটিশ যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র আছে। আর নেতাজি সারাজীবন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছেন। তাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে নেতাজি মেমোরিয়াল বললে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হবে তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। যাঁরা প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁরা কী মনে করে বলেছেন, তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে নেতাজীর স্থান তো আমাদের সকলের হৃদয়ে। তাই নেতাজি তাঁর দেশবাসীর কাছে যে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা, ঐক্যবদ্ধ সমাজ চেয়েছিলেন তা নির্মাণেই  আমাদের আরও বেশি সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। কোনও পুরনো হেরিটেজ বিল্ডিং বা সৌধ নাম বদলে তাঁর নামে করা যেতেই পারে, তবে সেটা আমার কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। নেতাজির আদর্শে আমাদের নিজেকে গড়ে তোলাটাই প্রথম প্রয়োজন বলে মনে হয়।



রুদ্রনীল ঘোষ


আমার দেশের এত বড় মাপের মানুষ খুব কমই রয়েছেন। সেটা শুধু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নয়, যদি যেকোনও জায়গার ক্ষেত্রে এমন কোনও কিছু ঘটে সেটা খুবই আনন্দের। এর থেকে আর ভালো কিছু হয় না। এই মাটি যাঁর বা যাঁদের জন্য স্বাধীন হয়েছে, তাঁর নামে যদি কিছু হয়, তাতে শুধু বাঙালি কেন, গোটা ভারতবাসীর কাছেই একটা ভালোলাগার জায়গা।


এর আগে হাওড়া-কালকা মেলের নাম বদল করেছে ভারতীয় রেল। এই ঐতিহাসিক ট্রেনের নতুন নাম নেতাজি এক্সপ্রেস। মূলত, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস নিয়ে যেভাবে রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে, সেই তরজাকে প্রকট করতেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫ তম জন্মদিনের আগেই কালকা মেলের নাম পরিবর্তনের কথা টুইট করে জানান রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। আর এবার উঠে আসছে ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়ালের নাম পরিবর্তনের প্রসঙ্গ। 


প্রসঙ্গত, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল বা ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত রাণী ভিক্টোরিয়ার একটি স্মৃতিসৌধ। মহারানি ভিক্টোরিয়ার নামাঙ্কিত এই স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে একটি জাতীয় প্রদর্শনীশালা জাদুঘর এবং কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। বেলফাস্ট সিটি হলের স্থাপত্যশৈলীর আদলে ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের নকশা প্রস্তুত করেন স্যার উইলিয়াম এমারসন। প্রথমে তাঁকে ইতালীয় রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীতে স্মৃতিসৌধের নকশা প্রস্তুত করতে বলা হয়। তবে তিনি শুধুমাত্র ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর প্রয়োগের বিরোধিতা করেন এবং ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীর সঙ্গে মুঘল উপাদান যুক্ত করে মূল সৌধের নকশা প্রস্তুত করেন স্যার উইলিয়াম এমারসন। ভিনসেন্ট এচ ছিলেন এই সৌধের স্থপতি। সৌধ-সংলগ্ন বাগানটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও স্যার জন প্রেইন। কলকাতার মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি সংস্থার ওপর নির্মাণকার্যের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল।