করোনা সারিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৩ হাজার মানুষ! উপযুক্ত সচেতনতায় চিকিৎসাতে মিলবে সাড়া
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO ‘মহামারির চেয়েও ভয়ঙ্কর’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা।
সুদীপ দে: করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO ‘মহামারির চেয়েও ভয়ঙ্কর’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা।
এ পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৩ হাজার ৫৬৭ জন। এ পর্যন্ত ৮,১৬০ জনের প্রাণ কেড়েছে এই ভাইরাস। এই ভাইরাসে ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ পর্যন্ত ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫২, মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
সারা বিশ্ব এখনও ফেস মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপরেই নির্ভরশীল। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা দিয়েছে একটা খবরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বয়সের মোট ৪৫ জনের উপর পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে COVID-19-এর টিকা। প্রায় ছ’সপ্তাহ ধরে চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ।
মার্কিন প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘MRNA 1273’ নামের এই টিকার প্রয়োগ শুরু করেছেন আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ’ (NIH)-এর অধীন ‘দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’ (NIAID)-র বিজ্ঞানীরা এবং তার সহযোগী বায়োটেকনোলজি সংস্থা মডার্না আইএনসি। ভারতে এই ভাইরাসের মোকাবিলার জন্য আগামী ১০০ দিন পর্যন্ত ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে ভারতে কী ভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করা হচ্ছে, জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ আসিফ ইকবাল (রেসপিরেটোরি ক্রিটিক্যাল কেয়ার)।
ডঃ ইকবাল জানান, করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়ালেও এর মধ্যে প্রায় ৮৩ হাজার মানুষকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ভারতে এই ভাইরাসের প্রকোপ ও বিস্তার দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫২, মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। তাই এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অবশ্যই প্রয়োজন আগাম সতর্কতার ও সচেতনতার।
ডঃ ইকবাল জানান, এই ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধার পরও প্রায় এক সপ্তাহ কোনও লক্ষণই প্রকাশ পায় না। ৪-১০ দিন কোনও রকম উপসর্গই লক্ষ্য করা যায় না। সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিন সাতেক পর থেকে হঠাৎ করেই জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথা ব্যথা শুরু হয়। তাই এ ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, প্রত্যেকেরই ভাইরাসের সংক্রমণের লক্ষণগুলির অপেক্ষা না করে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিৎ।
ডঃ ইকবাল জানান, করোনাভাইরাসের আকৃতি অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় বড়। বাতাসের মাধ্যমেও এই ভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আমাদের হাঁচি-কাশি থেকে নির্গত ড্রপলেটসে থাকা ভাইরাস-কণা বাতাসে ৩০ মিনিটের বেশি সক্রিয় থাকতে পারে না। আপাতত নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধপত্র, যে কোনও কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথা ব্যথায় ভুগছেন এমন রোগীকে ‘আইসোলেশন’-এ রেখে বিশেষ পর্বেক্ষণে রাখা হচ্ছে। তাছাড়া, এসএসকেএম হাসপাতাল ও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে থুতু পরীক্ষার মাধ্যমে দেখে নেওয়া হচ্ছে জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথা ব্যথায় ভুগছেন এমন রোগী আদৌ করোনাভাইরাসে (COVID-19) আক্রান্ত কিনা।
ডঃ ইকবাল জানান, করোনাভাইরাসের (COVID-19) সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে হাঁচি-কাশির সময় হাতের তালু দিয়ে নয়, বাহু দিয়ে (হাতের কনুইয়ের ভাঁজে) নাক, মুখ ঢাকুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO জানিয়েছে, COVID-19-এর সংক্রমণ এড়ানোর এটাই সহজ এবং বাস্তবসম্মত উপায়। এছাড়াও যে কোনও দ্বিস্তর বা তৃস্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যেতেই পারে। তৃস্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক COVID-19-এর সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট। তবে নাক-মুখ ঢেকেও হাঁচি-কাশি চলতে থাকলে ওই মাস্ক বেশিক্ষণ পরে না থাকাই ভাল। আগাম সতর্কতা হিসাবে মাস্ক পরার আগে ভাল করে স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। বাতিল করা মাস্ক যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। খোলা জায়গায় বাতিল করা মাস্ক ফেললে সংক্রমণের আশঙ্কায় থেকেই যায়। তাই উপযুক্ত সতর্কতা আর পরিচ্ছন্নতায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে নিজেকে সহজেই দূরে রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুন: কী ভাবে শরীরে বাসা বাঁধছে করোনাভাইরাস? কী ভাবে আক্রান্ত হয় ফুসফুস? জেনে নিন
ডঃ ইকবাল বলেন, “৩-৪ দিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথা ব্যথা না কমলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে এসএসকেএম বা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পরীক্ষা করিয়ে নিন। পরীক্ষায় COVID-19 ধরা না পড়লেও দুর্বল শরীরে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই নিজেকে ‘আইসোলেশন’-এ রেখে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করুন।”