উপসর্গ বদলে এবার হার্ট অ্যাটাকের ছদ্মবেশে করোনার হানা, ফাঁদে পা দিচ্ছেন চিকিত্সকরাও!
আসুন এ বিষয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে কী বলছেন, জেনে নেওয়া যাক...
সুদীপ দে: চিন থেকে শুরু করে এই ভাইরাসের প্রকোপে এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ। গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬২৭। এই ভাইরাসের প্রকোপে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ১৪ হাজার ২৭৩ জনের।
ভারতেও ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রে। বিশেষ করে মুম্বইয়ে। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের ‘ছদ্মবেশ’! শুনতে অবক লাগলেও ইদানীং এমন কয়েকশো ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে হৃদরোগের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে হৃদযন্ত্রের সমস্যা নয়, মিলেছে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ! যা চমকে দিয়েছে খোদ চিকিৎসকদেরও। আসুন এ বিষয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে কী বলছেন, জেনে নেওয়া যাক...
ডঃ পাণ্ডে জানান, ইদানীং এমন অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। হৃদরোগের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর হৃদযন্ত্রে কোথায় সমস্যা হয়েছে তা জানার জন্য প্রাথমিক ভাবে অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটা ঘটনায় দেখা গিয়েছে, অ্যাঞ্জিয়োগ্রামের রিপোর্টে হৃদযন্ত্রের কোনও ব্লক বা সমস্যাই ধরা পড়েনি। এর পর দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ওই রোগীর হৃদযন্ত্রের পেশীতে সংক্রমণ ছড়ানোর কারণেই তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা এবং একই সঙ্গে বুকে ব্যথা হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে ওই রোগীর হৃদযন্ত্রের পেশীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।
ডঃ পাণ্ডে আশঙ্কার সঙ্গে বলেন, “সমস্যা এখানেই। যে সমস্ত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাসের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা রোগী দেখার ক্ষেত্রে সুরক্ষা বিধি মেনে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি ব্যবাহার করে যে সাবধানতা নিচ্ছেন, হৃদরোগের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা সে ভাবে প্রস্তুত থাকছেন না। রোগীকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তাঁরা। কিন্তু একাধিক পরীক্ষার পর যতক্ষণে তাঁরা বুঝতে পারছেন যে রোগীর হার্ট অ্যাটাক নয়, হৃদযন্ত্রের পেশীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, ততক্ষণে হয়তো অনেকের শরীরে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে এই ভাইরাস।”
ডঃ পাণ্ডে বলেন, “একে বলে ‘মায়োকার্ডাইটিস’ (Myocarditis)। উদাহরণ হিসাবে ডঃ পাণ্ডে জানান, আমেরিকা ও ইতালিতে অসংখ্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এ ভাবেই আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। করোনাভাইরাসের এই ‘ছদ্মবেশ’ বিপদ বাড়াচ্ছে হৃদরোগের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।”
মায়োকার্ডাইটিস কী?
ডঃ পাণ্ডে জানান, মায়োকার্ডাইটিস হল ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে যখন হৃদযন্ত্রের পেশী আক্রান্ত হয়, তখন তা সঠিক ভাবে সঙ্কুচিত-প্রসারিত হতে পারে না। ফলে বুকে ব্যথা বা হার্ট অ্যাটাকের মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই এ ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিয়োগ্রামের রিপোর্টে হৃদযন্ত্রের কোনও ব্লক বা সমস্যাই ধরা পড়ে না যা হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ।
কী ভাবে হৃদযন্ত্রের পেশীতে সংক্রমিত হচ্ছে করোনাভাইরাস?
যাঁদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, যাঁদের আগেই বাইপাস সার্জারি হয়েছে বা স্ট্রোক হয়েছে— এমন মানুষ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, সে ক্ষেত্রে প্রাণহানির আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। তবে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর হল মায়োকার্ডাইটিস বা হৃদযন্ত্রের পেশীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জেরে হওয়া সমস্যা। তবে কী ভাবে হৃদযন্ত্রের পেশীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডঃ পাণ্ডে জানান, শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে হার্ট অ্যাটাক, অ্যাকিউট কার্ডিয়াক ইনজুরি বা হার্ট ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। বাড়িতেই থাকুন, সুস্থ থাকুন।