সুদীপ দে: দিনের পর দিন দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ হাসপাতালেই করোনা রোগীর সংখ্যাই বেশি। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাহত হচ্ছে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা পরিষেবা। এইডস, যক্ষা বা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা লকডাউন, উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব বা বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কারণে যথা সময়ে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছেন না।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সম্প্রতি ‘ইউরোপিয়ান রেসপিরাটোরি জার্নাল’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ৯৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে যক্ষায়। ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে মৃত্যুর সংখ্যা ২ লক্ষও ছুঁতে পারে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং UNAIDS-এর যৌথ রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার পরিস্থিতির জেরে বিশ্বের অন্তত ৭৩টি দেশে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের জোগানে ব্যাপক হারে টান পড়েছে। ওষুধের এই ব্যাপক ঘাটতির ফলে সারা বিশ্বে মোট এইডসে (AIDS) আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশের চিকিৎসাই এখন থমকে গিয়েছে। একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও। লকডাউন, উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব বা বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কারণে অধিকাংশ ক্যান্সার আক্রান্তই ঠিক মতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ফলে অনিয়মের ঠেলায় করোনা মহামারিতে বিপদ বাড়ছে ক্যান্সার রোগীদের যার স্বাভাবিক ফল হিসবে বাড়তে পারে মৃত্যুর হারও! পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে সে বিষয়ে আলোকপাত করলেন ‘এস্পেরার ওনকো নিউট্রিশন’ (EON)-এর প্রতিষ্ঠাতা, সিইও রক্তিম চট্টোপাধ্যায়



করোনা মহামারির আবহে ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বা রোগীরা কতটা সমস্যার সম্মুখীন?


রক্তিম চট্টোপাধ্যায়: দেশের অধিকাংশ হাসপাতালই ভরে গিয়েছে করোনা রোগীতে। তাঁদের যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে ব্যহত হচ্ছে হাসপাতালগুলির জরুরি বিভাগ বা বহির্বিভাগের পরিষেবা। ফলে এই পরিস্থিতি ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিভ্রান্তিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্যান্সার রোগীদের পাশাপাশি এই রোগের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।


ভারতে ক্যান্সার চিকিৎসার পরিকাঠামো কী অবস্থায় রয়েছে?


রক্তিম চট্টোপাধ্যায়: এ দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন আর এই রোগে প্রাণ হারান প্রায় ৮ লক্ষ রোগী। হিসাব বলছে, দেশে মোট ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬৬ শতাংশ রোগী বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করান। দেশে মোট ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ রোগী যাঁরা নিম্ন মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সদস্য, তাঁরা সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরেই নির্ভরশীল চিকিৎসার জন্য। এই করোনা মহামারির আবহে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগী ও তাঁদের পরিবারকে।



করোনা মহামারির জেরে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলির তুলনায় ভারতে ক্যান্সারে সামগ্রিক পরিস্থিতিটা কেমন?


রক্তিম চট্টোপাধ্যায়: সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় ক্যান্সারে মৃত্যুর হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। ইউরোপের দেশগুলিতে ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮ শতাংশের মৃত্যু হয় এই রোগে। কিন্তু ভারতে মোট ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় এই রোগে। অর্থাৎ, ক্যান্সারে মৃত্যুর হারের নিরিখে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলির তুলনায় ভারতের পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। করোনা মহামারির জেরে এ দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বিপর্যস্ত। ফলে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে চলেছে যার প্রভাবে বাড়তে পারে ক্যান্সারে মৃত্যুর হারও।



করোনা মহামারির আবহে ক্যান্সারে আক্রান্তদের নিরাপদ থাকার উপায় কী?


রক্তিম চট্টোপাধ্যায়: এই পরিস্থিতিতে ছোটখাটো স্বাস্থ্য সমস্যাও উপেক্ষা করা চলবে না। ফোনে, অনলাইনে বা সম্ভব হলে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথা সময়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধপত্র ও ডায়েটের দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ছাড়ার চেষ্টা করতে হবে এই সুযোগে। সর্বোপরি আগাম সচেতনতায় সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।