দেবস্মিতা দাস: মাইক্রোবায়োলজিতে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব থাকলেও, এই ভাইরাসের আক্রমণে যে এভারেস্ট থেকে আন্টার্কটিকা সব এলাকাই চরম ক্ষতির মুখে পড়তে পারে, এ ধারণা ছিল না বিশ্বের। কিন্তু ২০২০ থেকে আচমকাই শুরু এই 'ভাইরাস সুনামি'। সুনামি বলা ভাল, কারণ পর পর মারণ ঢেউ ও তার দাপট সেই বিভীষিকাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে গবেষণা চললেও টিকা দিয়েও এখনও সম্পূর্ণ রুখতে পারা যায়নি এই ভাইরাসকে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রথম দুই কোভিড-১৯ ঢেউয়ের ধাক্কায় টালমাটাল বিশ্বের স্বাস্থ্য থেকে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। ভারতের করোনা চিত্র যদি দেখা যায় তাহলে দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুহারের পরিসংখ্যান ও শ্মশান-কবরস্থান চিত্র ভয় ধরানো। করোনা পরীক্ষা ও টিকাকরণ চললেও আসন্ন তৃতীয় ঢেউ নিয়ে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে দেশ। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে টিকা কার্যকরীতা নিয়ে। ভারতে বর্তমানে চারটি টিকা চলছে। সকলের দাবি করোনার সব প্রজাতি (আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা, ল্যামডা, কাপ্পা এবং ডেল্টা প্লাসের) বিরুদ্ধে কার্যকর তাঁদের ভ্যাকসিন। কিন্তু এভাবে কি অর্জিত অনাক্রমতা গড়ে তোলা সম্ভব?


আরও পড়ুন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমল অনেকটাই, তৃতীয় ঢেউই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দেশে


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে কেবল টিকা নয়, আগামী দিনে SARS-CoV-2 ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে এবং ভবিষ্যতে অতিমারি রুখতে প্রয়োজন মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ট্রিটমেন্ট। যাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয়- 'সুপার অ্যান্টিবডি' (Super Antibody)।


এই সুপার অ্যান্টিবডি কী? কীভাবে কাজ করে মানবদেহে? 


সুপার অ্যান্টিবডিগুলি করোনাভাইরাসের মতোই স্পাইক প্রোটিন বিশিষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাসের মারণ চরিত্র কিন্তু এই স্পাইক প্রোটিনগুলিকে ঘিরেই। ভাইরাসটি যখন দেহকোষে প্রবেশ করে তখন স্পাইক প্রোটিনটিই বিশেষ গুরুত্ব নেয় জিনোমকে দেহকোষে প্রবেশ করিয়ে দিতে। আর সেখানেই এই সুপার অ্যান্টিবডির কাজ শুরু হয়। এদেরও যেহেতু স্পাইক প্রোটিন থাকে তাই অনায়াসে তা চরিত্র দিয়েই করোনাকে রোখার কাজ করে অ্যান্টিবডিগুলি।


কেন জোর দেওয়া হচ্ছে এই চিকিৎসায়? 


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের মতে, সুপার অ্যান্টিবডিগুলি যেমন- sotrovimab, ফার্স্ট জেনারেশন মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি (monoclonal antibody) করোনাভাইরাসের সব প্রজাতির উপরই কাজ করে। এটি ভাইরাসকে নিউট্রিলাইজ বা প্রশমিত করে দেয়। ফলে দেহকোষে ঢুকেও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে কোভিড। সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি স্টাডিতে গবেষক ফিল নাডিউ বলেছেন, "বর্তমানে কোন রোগীর দেহে করোনার কোন প্রজাতি বাসা বেঁধে রয়েছে তা চিকিৎসকদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় যতক্ষণ না জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে। কিন্তু যদি এই ধরনের অ্যান্টিবডি ট্রিটমেন্ট করা যায় সেক্ষেত্রে কোভিডের যে কোনও প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সফল হবে এটি।" 


আরও পড়ুন, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দিতে প্রস্তুত Zydus Cadila! ক্লিনিকাল ট্রায়াল শেষে সিদ্ধান্ত


মার্কিন সরকার এবং বিশ্বের একাধিক দেশ ইতিমধ্যেই এই চিকিৎসায় সম্মতি জানিয়েছে। আমেরিকায় Vir Biotechnology and GlaxoSmithKline একটি চিকিৎসা এনেছে যার নাম- G1 mAb। যে সব কোভিড রোগীর উপসর্গ গুরুতর এবং প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁদের দেহে এই চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এই স্টাডির গবেষকদের মতে, বিশ্বে যেসব ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয়েছে সেগুলি করোনার নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির উপর ভিত্তি করেই। কিন্ত RNA ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই টিকা আদৌ কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। অনেকক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কোভিড টিকার দুটি ডোজ নিয়েও ফের করোনা আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে।


নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রিটেনের একদল বৈজ্ঞানিক জানিয়েছেন যে এখনও এই চিকিৎসার যথেষ্ট কার্যকারীতার প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু কিছু ভাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভারতের মতো জনবহুল দেশে অর্জিত অনাক্রমতাই গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী দিনে ভারতে এই চিকিৎসা শুরু হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, তৃতীয় ঢেউ রুখতে বিকল্প চিকিৎসায় আসতে পারে 'সুপার অ্যান্টিবডির' নাম এ বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বের একাধিক গবেষকরা।