`বিশ্ব মহামারী`তে সতর্কতাই শেষ কথা, জানুন করনায় কী করনীয়
বাঁচতে এবং বাঁচাতে গেলে এই মুহূর্তে আপনার কাজ স্রেফ সতর্ক থাকা। কী কী স্বাস্থ্যবিধি? কী কী করবেন, আর কী কী করবেন না? জানাচ্ছেন ডাঃ সব্যসাচী সেনগুপ্ত, ইনচার্জ, জলপাইগুড়ি টিবি হসপিটাল।
গতকাল করোনা সংক্রমণকে গ্লোবাল প্যানডেমিক ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। বাংলায় অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্ব মহামারি। এই অবস্থায় তৎপর রাজ্য তথা বিশ্ব। ইতিমধ্যেই সমস্ত ট্যুরিস্ট ভিসা বাতিল করেছে ভারত। সীমান্তে জারি কড়া নজরদারি। আইপিএলে স্থগিতাদেশের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। গুজব এড়াতে স্যোশাল মিডিয়ার পোস্টেও চলছে নজরদারি। করোনার প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারেও। ভারতে এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৭। বাদ যায়নি মার্কিনমুলুকও। সেখানে করোনা আক্রান্তে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩৮। অন্যান্য দেশ তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে করোনা নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব বিশ্বজুড়ে। বাঁচতে এবং বাঁচাতে গেলে এই মুহূর্তে আপনার কাজ স্রেফ সতর্ক থাকা। কী কী স্বাস্থ্যবিধি? কী কী করবেন, আর কী কী করবেন না? জানাচ্ছেন ডাঃ সব্যসাচী সেনগুপ্ত, ইনচার্জ, জলপাইগুড়ি টিবি হসপিটাল।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসে প্রাণহানির ঝুঁকি কাদের? ভয়ই বা কতখানি? ব্যাখ্যা ডাক্তারবাবুর
শুরুতেই একটা ছোট্ট তথ্য দিই। করোনায় সারা পৃথিবীতে এ যাবৎ গত দু-মাসে মোট মারা গিয়েছেন ৪২৯২ জন (১১ই মার্চের হিসাব অনুযায়ী)। আর টিবিতে প্রায় চার হাজার জন মারা যান প্রত্যেক দিনেই। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে সবচেয়ে বিপজ্জনক রোগটি হলো টিবি। আর ভারতবর্ষ তার পীঠস্থান। সারা পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ টিবি রোগী ভারতেই। তবে এ ক্ষেত্রে করোনার ভয় থেকে ভারত অনেকাংশেই নিরাপদ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক স্বাস্থ্যবিধিগুলি। যেগুলি পালন করলে করোনা হোক বা টিবি, ভয় কমে যাবে অনেকটাই।
১. হাঁচি বা কাশির সময়, তালু নয়, বাহু ঢেকে হাঁচুন/ কাশুন (নিচে ছবি দ্রষ্টব্যঃ), দৈনন্দিন কাজের সময় হাতের তালু বারবার ব্যবহার হয়, তাতে সংক্রমণ ছড়ায়।
২. হ্যান্ডশেক পরিত্যাগ করুন। এতে এক মানুষের হাত থেকে অন্য মানুষের হাতে রোগ ছড়িয়ে যায়। আমরা ভারতীয়। দুই হাত জোড় করে নমস্কার জানান অতিথিকে।
৩. যেখানে সেখানে কফ থুথু ফেলা বন্ধ করুন।
৪. কথায় কথায়, নাকে মুখে কিংবা চোখে হাত দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
৫. খামোখা সিঁড়ির হাতল ধরে ওঠা নামা করবেন না।
৬. সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পরে লাভ নেই খুব একটা। এমনকি N 95 জাতীয় মাস্ক পরেও নয়। কারণ, যদি সঠিক পদ্ধতিতে আপনি N 95 পরেন, অর্থাৎ টেনে ব্যান্ড বেঁধে এবং নাকের ব্রিজ চেপে, তবে এই মাস্ক পরে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। দম আটকে আসে। দ্বিতীয়ত, এই মাস্ক পরলেও সংক্রমণ আটকানোর সম্ভাবনা ৯৫%। টিবি কিংবা করোনা 'ড্রপলেট'-এর মাধ্যমে ছড়ায়। সেই ড্রপলেট আটকাতে হলে বরং উল্টে, যারা হাঁচি বা কাশিতে ভুগছেন, মাস্ক পরা উচিত তাঁদেরই। সেটা, সাধারণ সার্জিকাল মাস্ক হলেও চলবে।
৭. চেষ্টা করুন খোলামেলা আবহাওয়ায় থাকতে। বিশেষত, যাঁরা স্বাস্থ্যকর্মী। যাঁদের প্রতিনিয়ত দেখতে হয় হাঁচি কাশিওয়ালা রোগীদের। এয়ার কন্ডিশন্ড চেম্বার এড়িয়ে চলুন। দরজা জানালা হোক খোলামেলা। বাতাস যেন চলাচল করতে পারে এপাশ থেকে ওপাশে। তথ্য বলছে, কোনও ঘরের বাতাস যদি প্রতি ঘন্টায় ১০ থেকে ১৫ বার ফ্রেশ হাওয়া দিয়ে রিপ্লেসড হয়, তবে সেই ঘরে বাতাস বাহিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। আর তার জন্য চাই খোলামেলা আবহাওয়া। এই একই নিয়ম মেনে চলুন যাঁরা বদ্ধ কামরায় কাজ করেন। আপনার ঘরটিতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিন, এখনই। দেখুন, আলমারি বা কোনও চেয়ার টেবিল জানালা ব্লক করছে কিনা। করলে, সেগুলো সরিয়ে অন্যত্র রাখুন।
৮. খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিন সাবান দিয়ে কচলে কচলে। অন্তত কুড়ি সেকেন্ড ঘড়ি ধরে। যদি সাবান না থাকে ' হ্যান্ড স্যানিটাইজার' ব্যহার করতে পারেন। তবে দেখে নেবেন তাতে যেন মিনিমাম 60% অ্যালকোহল থাকে।
৯. মোটামুটি ৪০ বছরের পর থেকে, বছরে একবার করে সুগার টেস্ট করান। সুগার নরমাল হলে কেয়াব্বাত! কিন্তু সুগার/ডায়াবেটিস ধরা পড়ে যদি, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস নিঃশব্দ ঘাতক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে বেশ দেরিতে এবং, ডায়াবেটিস রোগীদের শুধু করোনা কেন, যে কোনও সংক্রামক রোগ হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। যেমন টিবি।
তবে, এর চাইতে টিবির মতো এমন অনেক রোগ আছে যাদের ভয় আরও বেশি। যেমন ওই টিবি। তাই, যদি সুস্থ থাকতে চান এবং পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে চান, তাহলে যা যা বললাম সেসব শুধু আজকেই নয়, বাকি জীবন মেনে চলুন।
শেষ