শিশুর শরীরে অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার সমস্যা কাটাতে রান্নায় দিন লোহার তৈরি মাছ!
শিশুর শরীরে অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার সমস্যা কাটাতে দাওয়াই লোহার তৈরি মাছ! ভয় নেই, চিবিয়ে খেতে হবে না, রান্নায় দিলেই চলবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মাছের দেশি-বিদেশী— সব রকমের পদই চেখে দেখতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার! বাঙালির পছন্দের কত সবজি-তরকারিতে মাছ জুড়ে দেওয়ায় তা আরও মুখরোচক হয়ে উঠেছে। পুষ্টিবিদদের মতেও মাছ শরীরের পক্ষে খুবই উপকারি! তাই বলে শিশুর শরীরে অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার সমস্যা কাটাতে দাওয়াই লোহার তৈরি মাছ! না, চিবিয়ে খেতে হবে না, রান্নায় দিলেই চলবে। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে হাতেনাতে সুফল পেয়ে কম্বোডিয়া। আসুন এ বিষয়ে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক...
কম্বোডিয়াতেও সবজি-তরকারিতে মাছ জুড়ে দেওয়া হয় তার পুষ্টিগুণ বাড়াতে। কিন্তু সে মাছ সত্যিকারের নয়, লোহার মাছ! না, রান্না সুস্বাদু করার জন্য নয়, শরীরের আয়রন অভাব দূর করতে কম্বোডিয়াতে ব্যবহার করা হয় লোহার তৈরি মাছ।
পুষ্টিবিদদের মতে, রক্তাল্পতা বিশ্বের সবেচেয়ে বড় অপুষ্টিজনিত সমস্যা। এটি মূলত অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের আর বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। জানা গিয়েছে, কম্বোডিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের মতো মহিলা ও শিশু রক্তাল্পতায় ভোগেন। রক্তাল্পতার সমস্যা দূরীকরণের আয়রন ট্যাবলেট বা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিত্সকেরা। কিন্তু আয়রন ট্যাবলেটের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু কম্বোডিয়ায় ওষুধগুলি তেমন সহজলভ্য নয়, তাছাড়া অনেকেরই এই সব আয়রন ট্যাবলেট কেনার স্বামর্থ নেই।
তাহলে উপায়! শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে এই লোহার মাছ দিয়ে রান্নার কৌশলটি বের করেছেন কানাডার বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার চার্লস। ডঃ চার্লসের নির্দেশ মতো কম্বোডিয়ার একাধিক গ্রামে বাসিন্দারা রান্নায় সময় রান্নায় লোহার তৈরি মাছ ছেড়ে দিয়ে ফুটিয়ে নিতেন। রান্নার পদ্ধতিতে বা উপকরণে বদল বলতে ওই এক টুকরো লোহার মাছ। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে এক বছরের মধ্যে ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের রক্তাল্পতার সমস্যা আর রইল না। এ পদ্ধতিটি খুব সহজ হওয়ায় সবাই এটি অনুসরণ করতে শুরু করল এবং একটা সময় সে দেশের রক্তাল্পতার সমস্যা অনেকটাই কমে গেল।
আর পড়ুন: শীতেও কি রাতে ঘুমানোর সময় অস্বাভাবিক ঘাম হয়? তাহলে এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি
ডঃ চার্লসের মতে, রান্নার সঙ্গে মোহার মাছ মাত্র ১০-১২ মিনিট ফুটিয়ে নিলেই উপকার পাওয়া যায়। এর পর মাছটিকে তুলে নিয়ে একটু লেবুর রস যোগ করতে হবে যা আয়রনের শোষণের জন্য খুবই প্রয়োজন। লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট-এর প্রধান অধ্যাপক ইমেল্ডা বেটসও ডঃ ক্রিস্টোফার চার্লসের এই পদ্ধতির কার্যকারীতা মেনে নিয়েছেন। তবে লোহার মাছের বদলে সমপরিমাণ লোহার টুকরো দিলেও একই ফল মিলবে। কম্বোডিয়ার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সুফল পেয়েছে। এ বার কি আপনিও লোহার মাছ দিয়ে রান্না করবেন নাকি?