সুদীপ দে: অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকে যে কোনও সাধারণ মানুষই ভয় পান। আর  অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত যারা তারা ভয় পান পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। অর্থাৎ, এই ভয়টা কিন্তু আসলে ওই মানুষটিকে নয়, ভয় তার কাজকর্ম, তার যোগাযোগ, তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি। কিন্তু যদি পৃথিবীর সকল মানুষকেই ভয় পেতে থাকেন তাহলে বিষয়টি মোটেও আর স্বাভাবিক বলা চলে না! কারণ, এই ভয় পাওয়াটা হতে পারে একটি মানসিক রোগের লক্ষণ। রোগটির নাম অ্যানথ্রোপোফোবিয়া (Anthropophobia)। অ্যানথ্রোপোফোবিয়া কোনও সাধারণ মানসিক রোগ নয়। পরিস্থিতি, বিষয় বা নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই সব মানুষকে ভয় পাওয়া বা এড়িয়ে চলার প্রবনতা অ্যানথ্রোপোফোবিয়ার লক্ষণ হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি তথ্য।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কেন হয় এই অ্যানথ্রোপোফোবিয়া?


মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সমীরচন্দ্র দাস জানান, নিউরোলজিক্যাল কোনও সমস্যা থেকে এই রোগের উৎপত্তি। তবে অটিজমের সঙ্গে অ্যানথ্রোপোফোবিয়ার তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগটির নির্দিষ্ট কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না এবং এই সমস্যাটি যে কোনও মানুষের, যে কোনও বয়সেই হতে পারে। বিশেষত, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রোপোফোবিয়ার প্রকোপ অধিক লক্ষ্য করা যায়।


অতীতের কোনও বিশেষ ঘটনা, কোনও ভয়, কোনও মানসিক আঘাতের ফলে অ্যানথ্রোপোফোবিয়া শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। ডঃ দাস জানান, যে সকল ব্যক্তিরা অত্যধিক হীনমন্যতায় ভোগেন, বিভিন্ন কারণে একাকিত্বের শিকার, তাঁদের মধ্যেই অ্যানথ্রোপোফোবিয়ার প্রকোপ অধিক লক্ষ্য করা যায়।


অ্যানথ্রোপোফোবিয়ার লক্ষণসমূহ:


১) এই রোগের মূল লক্ষণ হল, যে কোনও মানুষকে ভয় পাওয়া। যে কোনও মানুষকে ভয়ের চোখে দেখতে থাকেন এই রোগে আক্রান্তরা।


২) কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে ভয় পাওয়া, চোখ মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং শরীরে কাঁপুনি ওঠা।


৩) মুখ চোখ রক্তবর্ণ হয়ে যাওয়া এবং ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া অথবা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।


৪) হার্টবিট খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া।


৫) মানুষের সঙ্গে না মেশা এবং ঘরের অন্ধকারে নিজেকে বন্দি করে বসে থাকা।


৬) মানুষ দেখলেই ভয়ে চিৎকার করে ওঠা এবং পরিচিত মানুষকেও চিনতে না পারা।


৭) নির্জনতার প্রতি অত্যাধিক আকর্ষণ।


৮) সামাজিক, পারিবারিক উত্সব অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।


অ্যানথ্রোপোফোবিয়া রোগের চিকিৎসা:


মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সমীরচন্দ্র দাসের মতে, সাধারণ অন্যান্য মানসিক রোগের মতো না হলেও অ্যান্থ্রোপোফোবিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে মনরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিভিন্ন থেরাপি এবং কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমেই এই রোগটি পুরোপুরি ভাল হয়ে যায়। তবে অবহেলার কারণে এই রোগটি মারাত্মক হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত অনেক দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ডঃ দাস জানান, এই রোগটি যত আগে ধরা পড়বে, তত দ্রুত তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। তাঁর লেখা ‘হিপনো কাউন্সেলিং’ নামের বইটিতেও অ্যানথ্রোপোফোবিয়া বা এ জাতীয় বিভিন্ন মনরোগ, সেগুলির লক্ষণ বা চিকিত্সার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তিনি। সুতরাং, নিজের মানসিক সমস্যাগুলিকেও শারীরীক অসুখের মতোই যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে চিকিত্সা করানো জরুরি।