Exclusive: `রাজনীতির ধরন বদলেছে, সময়ের সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে`, অকপট অভিষেক
ঘাসফুল শিবিরে আরও কোনও `ন্যারেটিভ` বদল করবেন অভিষেক?
নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজনীতিতে তিনি তথাকথিত 'পোড় খাওয়া' নন, কিন্তু শৈশব থেকে বাড়ির আঙিনায় ছিল রাজনীতি। তৃণমূলের যুব সভাপতি থেকে আজ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জি ২৪ ঘণ্টার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন রাজনীতিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সেই মতো বদলানোটাই আজকের রাজনীতির ধরন।
লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন অনেকেই। সেই সময় সেই সকল নেতারা অভিষেকের দিকেই অভিযোগের তির এনে দলত্যাগ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে অনেকে আবার ঘর ওয়াপসি করেছেন বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর। আর এই দুই জয়ের নেপথ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক ন্যারেটিভ বদলকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের তৃণস্তর থেকে সোশাল মিডিয়ায় উপস্থিতি বৃদ্ধির মতো যে বদল এসেছে, সেই রণনীতিই জয়ের আস্বাদ এনে দিয়েছে দলকে, এমনটাই মন্তব্য সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের।
অভিষেকের সাফ কথা, "২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদী লড়াই করেছিলেন তখন আই-প্যাক কাজ করেছিল এবং জিতেছিলেন তিনি। সত্তরের ও আশির দশকে যখন ভোটযুদ্ধ হত সেই সময় ভাবনা আর এখনের ভাবনায় বদল এসেছে। এখনের প্রচারের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। এবারে তো আমরা বাংলার মেয়েকে মুখ করেই প্রচার করলাম। বাংলা নিজের মেয়েকে চায় এটাই ছিল এবারের ভাবনা। অন্যদিকে, দলে যারা বিশ্বাসঘাতক ছিল তাঁদেরকে সঠিকভাবে চেনানোর কাজও আগাম করা হয়েছে। দলের পক্ষে ও বিপক্ষে কারা কাজ করছে তা চিহ্নিত করা, কর্মীদের মনের কথা সব তথ্য আমাদের কাছে এবার এসেছে।"
সম্প্রতি অভিষেকের 'ডায়মন্ড মডেল' থেকে ভোটের আগে আই-প্যাকের তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানো নিয়ে দলের অন্দরেই তৈরি হয়েছিল ক্ষোভ। সেই প্রসঙ্গেই অভিষেক বলেন, "দলের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিবর্তন আনা প্রয়োজন। নয়তো এগিয়ে যেতে পারব না। সময়ের সঙ্গে বদলাতে হবে। সিপিএম করেনি, কংগ্রেসও বাংলায় করেনি সেটা। বিজেপি কিন্তু খুব কৌশলীভাবে সেই কাজ করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন। তাই বদলের প্রয়োজন আছে। আকার, আঙ্গিকে তৃণমূল নতুন করে তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে, প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকে পাথেয় করে এগোতে হবে। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে এটা করতেই হবে।
আরও পড়ুন, Exclusive Abhishek: মুকুল রায় এখন কোন দলে? Zee ২৪ ঘণ্টায় স্পষ্ট করলেন অভিষেক
ডায়মন্ড হারবার সাংসদের কথায়, "পরাজয় থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত। ২০১৯ এ আমরা প্রত্যাশিত ফল করতে পারিনি। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২১ এ লড়াই করেছি। সেই সময় আমরা অবজারভার মডেল নিয়ে কাজ করেছি। দলের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকদের আমরা চিহ্নিত করেছি। স্থানীয় ও জেলা স্তরের নেতাদের যুক্ত করা হয়েছে, ব্লকে সঠিক লোক বসানো হয়েছে, যোগ্যদের সামনে আনা হয়েছে, যাঁদের নামে অভাব অভিযোগ তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই কারণেই তৃণমূল ২১৩টি আসন পেয়েছে। ২০১৯ এ যেখানে ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, ২০২১ এ কী এমন করল যে ৫০ শতাংশ ভোট পেল। এইগুলি করে। সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলেছে দল।"
ইতিহাস বলে শুধু অভিষেক নন, তৃণমূল্ 'পরিবর্তন'পন্থী এই ভাবধারা নিয়ে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে লড়াই চালিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মাঝে সময় গড়িয়েছে অনেকটাই। প্রচার থেকে কটাক্ষ, আজ সোশাল মিডিয়াতেই সে সবে অভ্যস্ত রাজনীতিকরা। কিন্তু বাংলায় ৩৪ বছরের পরিবর্তন এনে নতুন সরকার গঠন করা ঘাসফুল শিবিরে আরও কোনও 'ন্যারেটিভ' বদল করবেন অভিষেক? সেই বার্তাই কি দিলেন তিনি?