দিব্যেন্দু ঘোষ


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কল্পনা সত্যি হোক


কফি হাউসের গেটে ঢুকতেই চোখ আটকাল উল্টো দিকের কদম গাছে। গুটিকয়েক কোয়ালা কিচিরমিচির করছে। কলেজ স্ট্রিটে কোয়ালা! চোখ কোঁচকাল বটে। তবে কুঁচকে আমসি-মারা মন ফের টানটান।


শ্যামবাজারে শশীবাবু তো শসা কিনতে যাবেনই। সে শসা যে সজারুর পেটে যাবে, কে জানত! নেতাজির ঘোড়া এখনও ঠ্যাং তুলে সটান। দিল্লির দিকে পা বাড়িয়েই আছে। হঠাত্‍ একপাল সজারু দুলকি চালে দখল নিল শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়। যেন ওরাই এ তল্লাটের রাজা, উজির, বাদশা। মার্বেলের মতো খুদি খুদি চোখে তাকিয়ে শশীবাবুর দিকে। তিনি তো শসা সামলাতে ব্যস্ত।


কুমোরটুলিতে কনে দেখা আলো। সেই আলোয় জলসা বসিয়েছে কয়েক পিস বুড়ো ভাম। যেন বিকেলে পার্কের বেঞ্চে বসে সমাজ-সংসারের সঙ্গে দেশোদ্ধারও করছে। কিছুটা দূরেই আহিরিটোলা। ২১১ নম্বর বাসটা ওখান থেকেই ছাড়ত। কচি ভামদের কাছে পুরনো কলকাতার গল্প ফেঁদেছে বুড়ো ভাম। ওহ্, ভামের কথায় মনে পড়ল। ২০২০ সালে লকডাউনের সময় দিনেদুপুরে শহরের রাস্তায় হঠাত্‍ই উদয় হয়েছিল। কেউ কোত্থাও নেই। রাস্তা ফাঁকা। লোকজনের ভিড় নেই। গাড়ি চলাচলের শব্দ নেই। ফলে ভয় কিছুটা হলেও বুকে সেঁধায়নি। আসলে মানুষগুলো যেন কেমন কেমন। দেখলেই মারে। যেন লোকসমাজে আমাদের কোনও জায়গাই নেই। আরে বাবা, আমরাও তো প্রাণী। আমাদের শরীরেও তো প্রাণ আছে। তা যাক গেল যাক।



আরও পড়ুন- রবিবার ৯ মিনিটে রাজ্যে বাজি পুড়েছে ৬ কোটি টাকার! পাল্লা দিয়ে ৬ গুণ বাড়ল দূষণ


আপাতত খাঁ খাঁ কলকাতা। রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন সাদার্ন অ্যাভিনিউ, হেস্টিংস, বিধাননগর, গল্ফ ক্লাব এলাকা, পাটুলি, আনন্দপুর, গড়িয়া অঞ্চলে ওরা বেরিয়ে পড়েছিল। সঙ্গে গুটিকতক শেয়ালও ছিল। বটানিক্যাল গার্ডেনের আশপাশের রাস্তাতেও ওরা হেঁটেছে। বুক ভরে বাতাস টেনেছে। আসলে, পিএম, অর্থাত্‍ পার্টিকুলেট ম্যাটার হঠাত্‍ই উবে গেছিল তো। আরেক পিএম, অর্থাত্‍ প্রাইম মিনিস্টারকে ধন্যবাদ দিতে ছাড়েনি ওরা। মনে সাহস জোগানোর জন্য। রাজপথে পা রাখতে পারার জন্য। সেটাই বা কম কী! শুধুই কি বনেবাদাড়ে লোকচক্ষুর আড়ালেই জীবন কাটবে নাকি! লকডাউনে বিটকেলে, বেয়াড়া শব্দদানবেরাও ভোকাট্টা হয়ে গিয়েছিল। কোথা থেকে একটা খ্যাঁকশিয়াল এসে বসে বুড়ো ভামের পাশে। তোবড়ানো গালে গা-জ্বালানো খ্যাকখেকে হাসি মেরে বলতে থাকে, রাস্তায় গাড়ি-ফাড়ি বেরনো মানেই দূষণের একশেষ। সে সব ছিল না বলেই তো সাহস পেয়েছিলুম, কী বল!



পার্ক স্ট্রিটে আরেকটু হলেই চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেছিল প্যাঙ্গোলিনটা। বুলেট ট্রামের ট্র্যাকে কোথা থেকে যে উদয় হয়েছে বেটা। শহরে ট্রাম চলছে। কোনও শব্দ নেই। স্যাট করে চলে যাচ্ছে পার্ক স্ট্রিট টু পার্ক সার্কাস, আবার গড়িয়া টু গ্যাঞ্জেস ঘাট। তার মাঝেই ছেলেপুলে নাতিনাতনি নিয়ে শহরের রাস্তায় সান্ধ্যভ্রমণে বেরোয় প্যাঙ্গোলিন। পার্ক স্ট্রিটে প্যাঙ্গোলিন! কেন বাপু, আসতে নেই বুঝি।


রাসবিহারীতে ছেমড়ির কাঁধে হাত রেখে লালচুলো সিড়িঙ্গি মার্কা ওরাংওটাংটা শপিংয়ে বেরিয়েছে। শপিং মানে ওই হাঁটতে হাঁটতে সরোবরের দিকে চলে যাবে। সরোবরে নাকি পেল্লায় সাইজের রাঘব বোয়ালের বাস। দু-এক পিস যদি পাওয়া যায়। ছেমড়ির ঠোঁটে মাঝে মাঝে চকাম চকাম করে চুমু দিয়ে ঢ্যাঙা ওরাংওটাং গাইছে, চারিদিক বদলে গেছে, যা দেখি নতুন লাগে। শুধু তুমি আমি একই আছি, দুজনে যা-ছিলাম আগে।



ঢাকুরিয়া ব্রিজ এখন ঢোলেদের দখলে। বিকেল হলেই ব্রিজে হেলান দিয়ে ওরা রঙ্গ-তামাশায় মাতে। আরে বাবা, ঢোল, মানে রামকুত্তা, এশীয় বুনো কুকুর। বহুকাল আগে চিড়িয়াখানায় দু পিস এনে শোভা বাড়ানো হয়েছিল। এখন ঢাকুরিয়া ব্রিজে মোচ্ছব বসিয়ে তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, দ্যাখ কেমন লাগে। আমাদের বিপন্ন করে রাখা। এখন তো তোরাই বিপন্ন হাঁদা গঙ্গারাম। নাম না করে মনুষ্যকুলের দিকেই অভিযোগের তির। 


এখনও ভুল না শোধরালে কল্পনা শেষ পর্যন্ত জিতে যাবে। সত্যি হবে। কলেজ স্ট্রিটে কোয়ালা, ঢাকুরিয়ায় ঢোল, শ্যামবাজারে সজারু, উল্টোডাঙায় উল্লুক কিংবা পার্ক স্ট্রিটের প্যাঙ্গোলিন বলে উঠবে, সত্যি সত্যি, তিন সত্যি।