সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মাপের এক অভিনেতার মৃত্যুতে বলিউড যেন কীরকম কুঁতিয়ে-কুঁতিয়ে শ্রদ্ধা জানাল। মৃত্যুদিবসে সারাদিনের মধ্যে বলার মতো পাওয়া গেল শাবানা আজমি, অনুপম খের, নাসিরুদ্দিন শাহ, অনেকটা পরে অমিতাভ বচ্চন। আজ, সোমবার বেলার দিকে টুইট করলেন আমির খান, আশা ভোঁসলে। ব্যস! আর বলার মতো নাম কই? নওয়াজুদ্দিন, মোহনলাল-- এঁরাও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সব মিলিয়ে ঠিক সেই প্রাণ-ছোঁয়া ওয়ার্মথ তো মিলল না! কেমন যেন একটা দায়সারা ভাব। পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার মতো করে একটা ছোট্ট প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চুপ করে থাকা। শুধু বলিউড কেন? দক্ষিণের কৃষ্টি-সংস্কৃতির বিপুল জগৎই-বা কোথায় গেল? 


সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালি বঞ্চিত-- কথাটা অতিব্যবহারে বড়ই পানসে লাগে। পারেনি তাই হয়নি, এই তো! আসল সত্যিটা মেনে নিতে কষ্ট কীসের?


হয়তো কথাটা খুব মিথ্যে নয়। কিন্তু সব সময় যে সত্যি, তা-ও হয়তো নয়। বাঙালি জ্ঞানপীঠ-প্রাপ্ত লেখকের সংখ্যা হাতেগোনা। বাঙালি লেখকের কপালে সাহিত্য অ্যাকাডেমির সভাপতির সম্মানও জুটেছে অনেক-অনেক পরে। ভারতীয় ক্রিকেটের কাছে পঙ্কজ রায়ের যতটা সম্মান প্রাপ্য ছিল পাননি। বিপুল সাফল্যের পরেও হেমন্তকে বম্বে ছাড়তে হয়েছিল। কেরিয়ারে প্রথম দিকে মান্না দের স্ট্যাচারের এক গায়ককেও ভয়ানক সব লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল। উত্তমকুমার 'ছোটি সি মুলাকাত' করতে গিয়ে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য়ে পড়লেন যে, বম্বেতে জায়গা করার দ্বিতীয় লড়াই আর লড়তেই পারলেন না। আরতি মুখোপাধ্যায়েরও কেরিয়ার যেখানে পৌঁছনোর কথা ছিল পৌঁছয়নি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও তো কেরিয়ারের প্রথম লগ্নে বারবার সর্বভারতীয় মিডিয়ার (ক্রিকেট নির্বাচকদেরও) হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এসব তো বাছা-বাছা উদাহরণ। আরও কত আছে তার সীমা-পরিসীমা নেই। 


তবে এসব নিয়ে একদল বলেন, যাঁর যেমন প্রতিভা তাঁর তেমন প্রাপ্তি। যিনি পেরেছেন, পেরেছেন। যিনি পারেননি, পারেননি। বাঙালি এসব শুনতে-শুনতে বিশ্বাসও করে নিয়েছিলই বলতে গেলে। কিন্তু এই পুরনো ধারণাকেই যেন নিজের মৃত্যু দিয়ে আবার সামনে নিয়ে এলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।


অথচ সৌমিত্রের কি এটা প্রাপ্য ছিল? একে তো তিনি সত্যজিৎ রায়ের নায়ক। শুধু সেই পরিচয়ের জোরে ও জেরেই তিনি ভারত-বন্দিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু সে-টুকুই তো সৌমিত্র নয়। সত্যজিতের সৃষ্টি-পরিসরের বাইরেও তো বিপুল অর্জন তাঁর। হতে পারে তাঁর বাংলা কবিতা রচনার কথা বা ছবি আঁকার কথা জানল না বৃহত্তর ভারত। তর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু নাট্যকার সৌমিত্র কি নজরে পড়ার মতো নন? নায়ক ছাড়াও একজন খাঁটি চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কি তিনি বন্দিত হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করেননি। 


নিশ্চিত ভাবেই করেছেন। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে উদাসীন থেকেছে বাকি-ভারতের সৃষ্টি-কৃষ্টির জগৎ। বাকিদেরও তো একটু দায় থাকে সৌমিত্রের মতো একজন শিল্পী ঠিক কোথায় কোথায় নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, সেটা একটু জেনে নেওয়ার! সেই দায়টুকু তো সে স্বীকার করেইনি। এমনকী, যে-সৌমিত্র চট করে নজরে পড়ে সেই অভিনেতা-সৌমিত্রের প্রতিও সে উপযুক্ত শ্রদ্ধা জানায়নি। 


সৌমিত্র হয়তো পর্দায় দুরন্ত নাচানাচি করেননি, ভিলেন পেটাননি, ছবির পর ছবিতে লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে ওঠেননি। কিন্তু জনপ্রিয়তার এই শর্টকাট ছেড়ে অভিনয়ের যে দুর্গম পথে তিনি একটু একটু করে আরোহণ করেছেন তার জন্য সম্ভবত আর একটু উষ্ণ শ্রদ্ধা পাওয়া তাঁর উচিত ছিল। পেলেন না বলে সেই পুরনো বঙ্গবঞ্চনার পানসেটাই আবার বাধ্য হয়ে সামনে চলে এল। 


আরও পড়ুন:  শেষবেলায় সৌমিত্রর স্মৃতিমন্থন করে টুইট করলেন অমিতাভ বচ্চন