মেডিক্যালের আগুনে রোগীদের বাঁচাতে ঝাঁপালেন ক্যান্সার আক্রান্তের বাবা
`কিন্তু আপনার ছেলেও তো হাসপাতালে ভর্তি? ছেলের কথা মনে হয়নি? ছেলের জন্য চিন্তা হয়নি?`
নিজস্ব প্রতিবেদন : ছেলে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। মারণরোগের সঙ্গে লড়ছে। চিকিত্সার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছে। কিন্তু, এমন বিপদের দিনে শুধুই কি নিজের ছেলের কথা কথা ভাবা যায়? বলুন তো? সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন আবুল কাসেম। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। ছেলেকে নিয়ে চিকিত্সার জন্য অনেকটা পথ উজিয়ে কলকাতায় এসেছেন। এদিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভয়াবহ আগুন লাগতেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন উদ্ধারকাজে। হাসপাতাল কর্মী ও দমকল কর্মীদের সঙ্গে হাত লাগিয়ে উদ্ধার করলেন এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি মুমূর্ষু রোগীদের।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আবুল কাসেমের ছেলে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। কাসেম জানান, সকালে এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের নীচে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময়ই তাঁর চোখে পড়ে বিল্ডিংয়ের নীচে ওষুধ কাউন্টার থেকে গল গল করে ধোঁয়া বেরতে শুরু করেছে। কী ঘটেছে, বুঝতে এক মুহূর্ত দেরি হয়নি বিচক্ষণ কাসেমের। বিপদ বুঝে চায়ের ভাঁড় ফেলে ছুটে যান বিল্ডিংয়ের ভিতর। ঝাঁপিয়ে পড়েন উদ্ধারকাজে।
আরও পড়ুন, তিন দিন পরই ছিল জন্মদিন! নাগেরবাজার বিস্ফোরণে মৃত্যু ৮ বছরের বালকের
নিজের ছেলে মারণরোগে আক্রান্ত। কিন্তু সেদিকে তখন যেন কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই কাসেমের। দমকল কর্মী ও হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে উদ্ধার করেন একের পর এক রোগীকে। কাসেম জানিয়েছেন, সিঁড়ি দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীদের নামিয়ে আনা হয়। আগুনের হাত থেকে অসহায় রোগীদের বাঁচানোটাই তখন তাঁদের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিল।
'কিন্তু আপনার ছেলেও তো হাসপাতালে ভর্তি? ছেলের কথা মনে হয়নি? ছেলের জন্য চিন্তা হয়নি?' সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে নির্ভীক বাবা স্পষ্ট জবাব দিলেন, "না। ছেলে অন্য বিল্ডিংয়ে আছে। সুরক্ষিত আছে।" আরও বললেন, " এখানে অনেক রোগী ছিল। তাঁরাও কারোও ছেলে। কারোও কোনও বিপদ হয়নি। সবাই সুরক্ষিত আছে। অন্যের ছেলেও সুরক্ষিত আছে।" কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাটিতে দাঁড়িয়ে আবুল কাসেমের বলা এই একটা কথাই তৈরি করল মানবিকতার নতুন সংজ্ঞা।
আরও পড়ুন, অক্সিজেন নেই! সাংবাদিককে দেখেই অসহায় আর্তি, "বাবা, কষ্ট হচ্ছে খুব"
বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ আগুন লাগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। মেডিক্যাল কলেজের এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের ওষুধের কাউন্টারে আগুন লাগে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। যুদ্ধকালীন তত্পরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ। আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন দমকলকর্মীরা। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানান্তরিত করা হয়েছে এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের ৪০০ জন মুমূর্ষু রোগীকে। এমসিএইচ বিল্ডিংয়ে কার্ডিওলজি, হেমাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএনট্রোলজি, এন্ডোক্রিনোলজি, মেডিসিন, হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট প্রভৃতি মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।