মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য: নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শ্বাসকষ্ট চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিত্সকদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষপর্যন্ত ভেন্টিলেশনে দেওয়া হল বুদ্ধবাবুকে। শনিবার সন্ধেয় হাসপাতালে ভর্তির পর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ার পর তাঁর আচ্ছন্ন ভাব কিছুটা কেটে যায়। পরে আবার তাঁর আচ্ছন্ন ভাব চলে আসে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছিল। ফলে তাঁকে শেষপর্যন্ত ভেন্টিলেশনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকের।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হওয়া প্রেমিক, চরম পথ বেছে নিল গৃহবধূ


হাসপাতালে ভর্তির পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। তার পরও তাঁকে শুধু স্থিতিশীল করাই চিকিত্সকদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তা নয় বরং তার অন্যান্য যেসব সমস্য়া রয়েছে তারও নিরাময় করাই প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিত্সকদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ তা হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে। অর্থাত্ তাঁর দুটি ফুসফুসেই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ রয়েছে। পাশাপাশি তাঁর গ্রেড ২ রেসপিরেটরি ফেলিওর রয়েছে। এই দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রাখছিল চিকিত্সক দলকে।


ফুসফুসে সংক্রমণ থাকার ভেন্টিলেশন দিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা চলছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ফুসফুসের সংক্রমণ কমাতে নতুন করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। রক্তচাপ দ্রুত পড়ছিল, অক্সিজেন স্যাচুরেশনও নামছিল দ্রুত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তাঁকে স্থিতিশীল করতে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। আপাতত ফুল ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে বুদ্ধবাবুকে। তাঁর শরীরে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি। সিআরপি ৩০০-রও ওপরে। এর আগেও বুদ্ধবাবুকে ভেন্টিলেট করতে হয়েছিল। সেবারও নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে তাঁর কাজ হচ্ছিল না। সেবার ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। এবার একেবারে চরম সতর্কতায় তাঁর শরীরের সব বিষয়ের উপরে নজর রাখা হচ্ছে।


দীর্ঘদিন বুদ্ধবাবুর চিকিত্সা করছেন ডা কৌশিক চক্রবর্তী। কৌশিকবাবু বলেন, উনি বেশ সংকটজনক অবস্থাতেই রয়েছেন। তার জন্য ওঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছে। ওঁর ফুসফুসে ইনফেকশন রয়েছে। প্রচলিত অ্যান্টিবায়েটিকে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে অন্য অ্যান্টিবায়েটিক দিতে হয়েছে। কিডনির দিক থেকেও সমস্যা রয়েছে। এই অ্যান্টিবায়োটিকটি যদি কাজ করতে সময় পায় তাহলে তাহলে ইতিবাচক কিছু আশা করতে পারি। আমাদের কাছে এখন প্রথম চ্যালেঞ্জ ওঁর নিউমোনিয়া সারানো। সেটা অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ। এরকম সিওপিডি পেশেন্টকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করা খুব কঠিন কাজ। দুবছর আগেও একবার ওঁকে ভেন্টিলেট করা হয়েছিল। সেবার দ্রুত বের করা হয়েছিল। তবে এবার সংক্রমণের মাত্রা অনেকটাই বেশি। একটা অ্যান্টিবায়েটিককে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে দিতে হয়। তার পর তার কার্যক্ষমতা বোঝা যায়। তবে এর মধ্যেও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ফুসফুসের এই ইনফেকশন ছাড়া শরীটা অনেককিছু অঙ্গ নিয়ে গঠিত।  ফলে সব দিকেই নজর রাখতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে চিকিত্সা করা হচ্ছে।


শনিবার হাসপাতালে ভর্তির সময়ে বুদ্ধবাবুর রক্তে অক্সিজেনে মাত্রা ছিল ৭০ শতাংশ। ভর্তির পর তা বেড়ে হয় ৯৩ শতাংশ। তার পর তা নামতে থাকে। সন্ধের পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থায় অবনতি হতে থাকে। তাঁর আচ্ছন্ন ভাব বেড়ে যায়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। তারপরেই ফুল ভেন্টিলেশনে রেখে তাঁর উপরে নজর রাখছেন চিকিত্সক দল। ভেন্টিলেশনে দেওয়া ও নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পর বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থার উন্নতি কতটা হল তা জানতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।


উল্লেখ্য, শরীরে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে বা শরীরের অন্যান্য প্যারামিচার গুলি যখন ওঠনামা করে তখন সাধারণভাবে আচ্ছন্নভাব দেখা যায়। চিকিত্সকরা মনে করছেন সংক্রমণের জেরেই এই আচ্ছন্নভাবে। কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বিভিন্ন প্যারামিটারকে স্থিতিশীল করা চেষ্টা হচ্ছে। চিকিত্সকরা বলছেন বুদ্ধদেবের দুটি ফুসফুসেই সংক্রমণ অনেকটাই। ফলে তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।


বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিশিষ্ট চিকিত্সক ধীমান কাহালি বলেন, উনি দীর্ঘদিন সিওপিডিতে ভুগছেন। পাশাপাশি হাই ব্লাড প্রেসারও থাকতো। এই কারণেই হয়তো অক্সিজেন স্যাচুরেশটা কমছে। বয়সও হয়েছে। তার পরেও চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছেন, এটা ভালো ব্যাপার। তবে চিন্তার ব্যাপার তো রয়েইছে।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)