শুভপম সাহা: 'চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন আর কবিতায় শুয়ে কাপলেট...'। শ্রীজাতর এই লাইনগুলোই, আপনার ফের গুনগুন করতে ইচ্ছে করবে অত্য়ন্ত আনন্দের এই খবর শোনার পর। তিলোত্তমার সঙ্গে ট্রামের রোম্য়ান্স তো শেষ হচ্ছেই না, উল্টে তা আরও মধুর হতে চলেছে। সৌজন্য়ে- কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) পর্যবেক্ষণ। ঐতিহ্য়ের পরিবেশবান্ধব যানের সঙ্গে শহরবাসীর চলমান নস্ট্য়ালজিয়া চলতেই থাকবে। কলকাতা পুলিসের (Kolkata Police) ট্রাম চালানোর বিরোধিতাকে, একেবারে স্ট্রেইট ব্য়াটে খেলেই মাঠের বাইরে পাঠাল উচ্চ আদালত। ট্রাম চলছে...ট্রাম চলবে..


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Calcutta High Court : পুরুষ পুলিসের সামনে নাবালিকার যৌন নির্যাতনের বর্ণনা বেআইনি: হাইকোর্ট


ধীরগতির দু-কামরার যান নাকি শহরে ট্র্যাফিকের কারণ। এই কারণে কলকাতা পুলিস শহরে ট্রাম চালানোর তীব্র বিরোধিতা করেছিল। বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে না পারার জন্য়, রাজ্য এবং ট্রাম কর্তৃপক্ষকে এবার একহাত নিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। গত সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ট্রাম চালানোর পক্ষেই মত প্রকাশ করেছেন। ট্রাম কর্তৃপক্ষকে হাই কোর্ট প্রশ্ন করেছে, যে তারা কি শুধু ট্রাম বিক্রি করতেই বসে রয়েছেন? কর্মচারীদের বেতন দেওয়া বা কী করে পরিষেবা ফেরানো যায়, সে ব্যাপারে কি কোনও চিন্তাভাবনা নেই তাদের! ট্রাম চালানোর বিরোধিতা করছে পুলিস, এই মর্মেই হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেছিলেন সুলগ্না মুখোপাধ্য়ায়। হাইকোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, পুলিস কোনও ভাবেই এই ট্রাম চালানো বিরোধিতা করতে পারে না। কারণ পুলিসের সেই এক্তিয়ারই নেই। ট্রাম পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য। ফলে এই বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক না বাড়িয়ে তা যথাযথ ভাবে রক্ষা করা এবং পূর্ণ উদ্যমে চালু করার জন্য় গঠনমূলক আলোচনা দরকার।


ট্রামের স্বার্থ রক্ষার্থে হাইকোর্ট ট্রাম সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি করেছে। সেই কমিটিতে রয়েছেন সৌভিক মুখোপাধ্য়ায়। যিনি দীর্ঘ বছর ট্রাম নিয়ে কাজ করছেন। নিজেও তিনি একাধিক আরটিআই করে কোনও সদুত্তর পাননি কখনও। সৌভিক জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালকে বলেন, 'দেখুন পৃথিবীতে ১৫০-র বেশি দেশে ট্রাম চলে। হাইকোর্টের এই রায়ে আমরা অত্য়ন্ত খুশি। এটাই তো হওয়া উচিত ছিল। সরকারের ট্রাম চালানোর মনোভাব নেই বলেই তো কোর্ট পর্যন্ত গড়াল বিষয়টি! দেখুন ট্রামের অস্তিত্ব টিকে থাকবে তার পরিষেবার উপর। বেলগাছিয়া ৩৬টি খিদিরপুরে ২০টি ও পার্ক সার্কাসে ২০টি ট্রাম পড়ে রয়েছে। সেগুলোকে চালু করতে হবে অবিলম্বে। কলকাতাতেই কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো ইলেকট্রিক ট্রাম চালু রয়েছে। ফলে ট্রামকে দ্রুত ইউনেসকোর তকমায় আনতে হবে। দেখুন কোনও কিছু হেরিটেজ মানে তো এটা নয়, যে তাকে মিউজিয়ামে সাজিয়ে রাখতে হবে। যে রুটে ট্রাম চলে, সেই রাস্তাগুলিকেও হেরিটেজ ঘোষণা করতে হবে। কলকাতায় ট্রামের অবস্থা মোটেই খারাপ নয়। সমস্যা তার পারিপার্শ্বিক। যেমন অবৈধ পার্কিং, ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ এগুলো ভাবতে হবে। যথাযথ তথ্য় অন্বেষণ না করে, শুধু মুখের কথার ভিত্তিতে ট্রামকে বন্ধ করার কথা ভাবা হয়েছিল।সরকারের মানসিকতার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। কোর্ট আরও নির্দিষ্ট ভাবে সিদ্ধান্ত নিক।' সৌভিক জানিয়েছেন যে, হাইকোর্টে শীতকালীন ছুটি শেষ হলেই ফের এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।  রাজ্য়কে এই বিষয়ে রিপোর্ট দিতে হবে।


এই মুহূর্তে কলকাতায় মোট তিনটি রুটে (বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ, ধর্মতলা-শিয়ালদহ, ধর্মতলা-গড়িয়াহাট) ট্রাম চলে। আরও দু'টি রুটে ট্রাম যুক্ত হতে চলেছে। চালু ট্রাম রুটের পাশাপাশি এবার ধর্মতলা থেকে নোনাপুকুর ও ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর রুটে ট্রাম চালানোর ভাবনা। তবে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো রুটে কাজের কথাও ভাবতে হচ্ছে। মেট্রোর তরফে কোনও বাধা না থাকলে, দ্রুত এই রুটে ট্রাম চালু হয়ে যাবে বলেই আশা করা যায়। হাই কোর্ট জানিয়েছে যে ট্রামকে ঢেলে সাজাতে হবে। আধুনিকী-করণের পথেই হাঁটতে হবে। যাতে নতুন প্রজন্মের কাছেও ট্রাম আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।


আরও পড়ুন: রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে রাজ্য!



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)