সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তিনি বলেছিলেন, আমি লোপ করতে আসিনি, আমি এসেছি পূর্ণ করতে!


পূর্ণতার সেই বার্তাবহ পুরুষ যখন জন্মগ্রহণ করলেন, তখন সেই নবজাতককে দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে প্রাচ্য থেকে গিয়েছিলেন কয়েকজন পণ্ডিত-দার্শনিক। তাঁরা একটি উজ্জ্বল তারা অনুসরণ করে পৌঁছেছিলেন সেই শিশুর কাছে। শিশুটির সাক্ষাৎ পেয়ে তাঁকে স্বর্ণ, গন্ধদ্রব্য ইত্যাদি দিয়ে সম্মান জানিয়ে ফিরে এসেছিলেন তাঁরা।


সেই শিশুকে মনে রেখেই অনেক-অনেক পরে আর এক প্রাচ্যকবি লিখলেন, ওই মহামানব আসে। তিনি লিখলেন সেই মহামানবের আসার আনন্দে মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে রোমাঞ্চের কথা। লিখলেন সেই মহাজন্মের লগ্ন আসতেই সুরলোকে বেজে উঠেছে শঙ্খ, নরলোকে বেজে উঠেছে ডঙ্কা। অমারাত্রির দুর্গতোরণ ভগ্ন হয়ে গিয়েছে ধূলিতলে। নবজীবনের আশ্বাসে উদয়শিখর থেকে শোনা যাচ্ছে মাভৈঃ!


সেই শিশু-মহামানবের জন্মদিন আর একদিন পরে, সেই শিশু-মহামানবের জন্মক্ষণ আর কয়েকঘণ্টা পরে। তার আগে বৃহস্পতিবার ২৪ ডিসেম্বর দিনটি হল 'ক্রিসমাস ইভ'। বাঙালির কাছে 'বড়দিনে'র আগের দিন।  ক্রিসমাস ক্যারলের দিন, সান্তার দিন। 



কমলালেবুরোদ ঠিকরে পড়েছে শহরের কুয়াশামাখা গলিতে-পাঁচিলে। পউষরোদ্দুরের সেই ধূসরতায় হয়তো ঝিম মেরে বসে রয়েছে কোনও শুভ্র বেড়ালছানা। আর একটু পরে হিমধুলো উড়ে আসবে সন্ধের ঠান্ডা বাতাসে মিশে। আরও কিছুক্ষণ পরেই শোনা যাবে মন্দ্র ঘণ্টাধ্বনি। হিম অন্ধকার কুণ্ডলী পাকিয়ে নামবে গির্জাচুড়োয়। জ্বলে উঠবে মোমবাতি। শোনা যাবে পবিত্রসঙ্গীত। এই ক্রিসমাস ইভের রাতেই ঘুমন্ত বাচ্চাদের শিয়রে এসে উপহার রেখে যাবেন কোনও এক স্বপ্নপিতামহ সান্তা। 


Also Read: Christmas & New Year Special: নানান খাবার ও পানীয় নিয়ে হাজির Cafe Offbeat up there


ঠিক এই আবহেই মর্ত্যে জন্ম নিতে আসছেন যিশু। আজও তিনি জন্ম নেন। প্রতিটি জনপদের আস্তাবলের গাঢ় খড়ের গন্ধের মধ্যে আলো হয়ে ফুটে ওঠেন তিনি। গালিলের এই ইহুদি যিশু যোহনের কাছে দীক্ষিত হয়ে তার পরে প্রচারকাজ শুরু করেছিলেন। মৌখিকভাবে প্রচার করতেন তিনি। পরে তাঁকে বন্দি করা হয়। ইহুদি কর্তৃপক্ষ তাঁর বিচার করে। বিচারের পরে তাঁকে রোমান সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রোমান গভর্নর পন্টিয়াসের আদেশে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। যদিও যিশুর অনুগামীদের বিশ্বাস, মৃত্যুর পরে যিশু মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন!


যিশু কি শুধু বেথলেহেমের? 


যিশুর মতো আলোকপুরুষের ক্ষেত্রে সে কথা খাটে না। তিনি তো এই মর্ত্যসভ্যতার প্রতিটি ধর্মশীল চিন্তাশীল মানবপ্রেমী অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোত। কিন্তু এ তো ভাবের সংযোগ, দার্শনিকসংযোগ। 


যিশুর ক্ষেত্রে স্থানবিশেষে ভূগোলযোগও মেলে। যেমন, যিশুর ভারত-যোগ  নিয়ে প্রচুর তত্ত্ব আছে। একদল দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন, যিশুর জীবনের একটা পর্যায় কেটেছিল ভারতে। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলে থাকেন, যিশু কাশ্মীরে এসেছিলেন। এ নিয়ে বইও লেখা হয়েছে। তবে কোনও ভারতীয়  নন, সেই বই লেখেন নিকোলাস নোটোভিচ নামের এক রাশিয়ান যুদ্ধ-সাংবাদিক। ১৮৮৭ সালে লাদাখে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এক বৌদ্ধমঠে গিয়ে Life of Saint Issa, Best of the Sons of Men সম্বন্ধে জানতে পারেন (ইসলামে আরবি ভাষায় যিশুকে 'ইশা' বলে বর্ণনা করা হয়)। এর উপর ভিত্তি করেই নিকোলাস বইটি লেখেন। ১৮৯৪ সালে সেই বই প্রকাশিত হয়। পরে বইটির ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশিত হয়-- Life of Saint Issa নামে।


কিন্তু মন আর কবে বুদ্ধির ব্যায়ামে স্বস্তি পায়? যুক্তি-তর্কের প্যাঁচপয়জার ঠেলে সে বরং অনুভূতির মদিরতায় মগ্ন হয়। সেই অনুভূতির মন্দাকিনীধারার মধ্যে দিয়ে সে দেখে এক অপূর্বকান্তি তরুণের মাথায় পরানো রয়েছে কাঁটার মুকুট, তাঁর হাতে-পায়ে গাঁথা তীক্ষ্ণ তীব্র পেরেক, রক্ত ঝরছে অবারিত। চেতনার শিশিররাত্রে তা থেকে ফুটে উঠছে রক্তগোলাপ। জন্মক্ষণেই স্মরণে আসে পবিত্র মৃত্যুমুহূর্ত। কেননা তিনি তো সাধারণ মানবশিশু নন, তিনি অলোকসামান্য মহামানব! তিনি পূর্ণতার প্রতীক। যিনি স্বয়ং পূর্ণ করেন, তাঁর তো ক্ষয় নেই!


Also Read: করোনার থেকেও আতঙ্কের, ২০২১ সালের জন্য ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতবাণী করেছেন নস্ট্রাদামুস!