সাতাশিতে এসে থামলেন `যৌবনবাউল` অলোকরঞ্জন
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী
নিজস্ব প্রতিবেদন: কবির মৃত্যু নেই! তবু কবির দেহের মৃত্যু তো মেনে নিতেই হয়। সেই রকমই বাঙালিকে মেনে নিতে হবে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মৃত্যুও।
জার্মানিতে গতকাল, মঙ্গলবার রাতে ৮৭ বছর বয়সে মারা গেলেন 'দেবীকে স্নানের ঘরে নগ্ন দেখে'র বর্ণময় কবি। স্ত্রী এলিজাবেথ ফোনে এ খবর জানান।
অলোকরঞ্জনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'যৌবনবাউল'। প্রকাশ ১৯৫৯ সালে। তার বহু বহু আগে থেকেই অবশ্য কাব্যচর্চা শুরু তাঁর। 'শতভিষা' ও 'কৃত্তিবাস' লিটল ম্য়াগাজিনেও লিখে চলেছেন অবিরাম।
১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর জন্ম অলোকরঞ্জনের। পড়াশোনা শান্তিনিকেতন ও সেন্ট জেভিয়ার্সে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে প্রায় দেড় দশকের অধ্যাপনাজীবন। তারপর স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান জার্মানি। সেখানেই গবেষণা। পরে অধ্যাপনাও। প্রায় পাঁচ দশকের বাস জার্মানিতে। ভারত ও জার্মানি দু'দেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে বিপুল অবদান তাঁর। সেই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন সে দেশের 'গ্যেটে' পুরস্কার।
সারাজীবন ধরে রচনা করেছেন বিপুল সাহিত্যসম্ভার। 'নিষিদ্ধ কোজাগরী', 'রক্তাক্ত ঝরোখা', 'ছৌ-কাবুকির মুখোশ'-এর মতো কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও সারাজীবন বিপুল অনুবাদকর্মে নিয়োজিত থেকেছেন। বাংলা ও সাঁওতাল সাহিত্য অনুবাদ করেছেন ইংরেজি ও জার্মানিতে আবার জার্মানি ও ফরাসি সাহিত্য অনুবাদ করেছেন বাংলায়। প্রবন্ধ রচনা করেছেন অসংখ্য। লিখেছেন 'জীবনানন্দ'-এর মতো অপূর্ব গদ্যগ্রন্থ। কবিতার পাশাপাশি তাঁর বিশিষ্ট গদ্যও বরাবর পাঠকের মন কেড়েছে। পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার।
কবিতায় অন্যরকম প্রকরণ, নিজস্ব ভাষা ও ভঙ্গির জন্য অলোকরঞ্জন চিরকালই বাঙালি কবিতাপাঠকের কাছে একটা বিশিষ্ট স্থান পেয়ে এসেছেন। তাঁর মৃত্যুতে অনেকটাই বর্ণহীন হয়ে গেল বাংলা কবিতার জগৎ।
আরও পড়ুন: ধরা দিয়ে পালিয়েছে শীত, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২° বেশি