`ধুতি পরার অভ্যাস করুন`, বিজেপির বঙ্গীকরণে কেন্দ্রীয় নেতাদের টোটকা বুদ্ধিজীবীদের
গেরুয়াপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
অঞ্জন রায়
'When in Rome, do as the Romans do' বাংলায় বিজেপির সাফল্যের চাবিকাটি এই প্রবাদটিই। মনোযোগ দিয়ে এই আপ্তবাক্যটি অনুসরণ করলে ফল মিলবে বলে পরামর্শই দিলেন আরএসএস-বিজেপি ঘেঁষা বুদ্ধিজীবীরা। তাঁদের মতে, গোবলয়ের দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে বাংলায় শক্তিশালী বিকল্প হয়ে উঠতে গেলে 'বঙ্গ বিজেপি' হতে হবে। হিন্দির প্রভাব ছেড়ে পশ্চিমববঙ্গে বিজেপির বঙ্গীকরণের পক্ষে সওয়াল করলেন বিজেপি ঘেঁষা বুদ্ধিজীবীরা। পরামর্শ দিলেন, ''খাঁটি বাঙালিয়ানার ছোঁয়াচ আনতে ধুতি পরার অভ্যাস করতে হবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের''।
গেরুয়াপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানতে চান, কেন এখনও শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে না বিজেপি? ঘটনা হল, রাজ্যে আগের চেয়ে বিজেপির প্রভাব বাড়লেও এখনও ইভিএমে তেমন প্রতিফলিত হচ্ছে না। দ্বিতীয়স্থানে এসেই থমকে যাচ্ছে গেরুয়া শিবির। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে ব্যবধানও থাকছে এক আলোকবর্ষ। এমতাবস্থায় কী করা যায়? 'ফাস্ট বয়' হতে বুদ্ধিজীবীদের টোটকা, বিজেপি নেতাদের আরও বেশি করে বাঙালিয়ানায় সম্পৃক্ত হতে হবে। পরতে হবে ধুতি। বাইরে থেকে অবাঙালি নেতা নয়, বরং রাজ্য থেকে বাঙালি নেতাদের নেতৃত্বদানের জন্য বেছে নিতে হবে বিজেপিকে।
একইসঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলার কৃতীদের মোদী সরকার যে প্রাধান্য দিচ্ছে না, তাও স্পষ্ট করেছেন বুদ্ধিজীবীরা। তাঁদের অনুযোগ, এরাজ্যে প্রতিভার ছড়াছড়ি থাকলেও ভিন রাজ্যের বাঙালিদের বিভিন্ন শীর্ষপদে বেছে নেওয়া হচ্ছে। এমনটা তো চলতে পারে না।
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় গ্রন্থাগারের অধিকর্তার পদে কেউ নেই। বিজেপি ঘেঁষা বুদ্ধিজীবীদের প্রশ্ন, আপনারা কি এরাজ্যের যোগ্যদের চোখে দেখতে পান না? তাঁদের অনুযোগ,''৩৪ বছরের বাম শাসন ও ৭ বছরের মমতা শাসনে এরাজ্যে লড়াই করব। কিন্তু কেন্দ্রীয় নিয়োগ হলে দিল্লি থেকে বাঙালি বাছা হবে। এই দ্বিচারিতা বন্ধ করুক বিজেপি''। উল্লেখ্য, বৈঠকে রাহুল সিনহা, মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষ ছাড়াও ছিলেন শিবপ্রকাশ ও অরবিন্দ মেনন।
প্রসঙ্গত, এর আগে কলকাতায় বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় স্মরণ অনুষ্ঠানেও বাঙালিয়ানায় নিজেদের উপস্থাপন করেছিলেন বিজেপি নেতারা। মঞ্চে উত্তর ভারতের 'ভারত মাতা'র ছবির বদলে ছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা 'ভারত মায়ে'র ছবি। এমনকি 'রামভক্ত' অমিত শাহ পুজো দেন তারাপীঠে। ফলে নানাভাবে বঙ্গীকরণের চেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ধুতি পরলেই কি বাঙালি হওয়া যায়? যে দলের সভা-সমাবেশের স্লোগান থেকে ভাষণ আকছার হিন্দির ব্যবহার করেন নেতারা, যাঁদের রাজ্য দফতরের বাইরেই হিন্দি স্লোগানের ব্যানার, সেই 'রামভক্ত'রা কি খাঁটি বাঙালি হতে পারবেন? এটা অনস্বীকার্য, বাঙালিয়ানার প্রশ্নে বিজেপিকে অন্তত গোলের মালা পরাবে দুই বিরোধী কংগ্রেস ও সিপিএম।
আরও পড়ুন- বাসভাড়া না বাড়ানোয় সোমবার থেকে শুধুমাত্র অফিস টাইমে বাস!