বিক্রম দাস


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সাপও মরল। অথচ লাঠিও ভাঙল না। 'ব্যালেন্সে'র রণনীতিতে কি বাজিমাত করল কলকাতা পুলিস? বিজেপির লালবাজার অভিযান ঘিরে উঠছে প্রশ্ন। লালবাজার অভিযান করল রাজ্যের বিরোধী দল, অথচ  লাঠিচার্জ, মারামারি, রক্তক্ষরণ ও সরাসরি সংঘাতের ঘটনাই ঘটল না। শান্তিপূর্ণভাবেই মাত্র ঘণ্টাখানেকে সমাপ্তি হয়ে গেল বিজেপির লালবাজার অভিযান। 


রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগে লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটে ১৮টি আসনপ্রাপ্তির পর গেরুয়া শিবিরের এমন কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধার প্রস্তুতি নিয়েছিল পুলিস। রাজনীতি নিয়ে উত্সাহী চোখও ছিল বুধবারের লালবাজার অভিযানের দিকে। কিন্তু কোথায় কি! অশ্বডিম্ব প্রসব করল বিজেপি। বাংলায় এমন শান্তশিষ্ট লালবাজার অভিযান! লালবাজারের ধারকাছেই ঘেঁষতে পারলেন না বিজেপি কর্মীরা। ন্যূনতম প্রতিরোধও তুলে ধরতে পারলেন না। আর নেতারা আগেই রণে ভঙ্গ দিয়ে বসে পড়লেন রাস্তায়।     



কেন্দ্রের ও বাংলার শাসক দলের সঙ্গে পুলিসও ভারসাম্যের কৌশল নিয়েছিল বলে শুরু হয়েছে জল্পনা। লালবাজার অভিযানে প্রথম ব্যারিকেড বিজেপিকে ভাঙতে দিয়েছিল পুলিস। আর তাতে মুখরক্ষা হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। তারা যে লড়াইয়ে আছে, সেই বার্তা গেল। দ্বিতীয় ব্যারিকেড ব্যারিকেডের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পুলিস। জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে গড় রক্ষা করল পুলিস। এই ধরনের অভিযানে ইট ছোড়া, বোতল ছোড়ার মতো বেশ স্বাভাবিক। কিন্তু সেটাও গায়েব। অতঃকিম দেড়ঘণ্টার মধ্যেই বিজেপির হম্বিতম্বির নটে গাছ মুড়োল। সমাপ্ত হল লালবাজার অভিযান। এত তাড়াতাড়ি যে বিজেপিকে ভাগিয়ে দেওয় যাবে, তা সম্ভবত প্রত্যাশাও করেনি কলকাতা পুলিস।


স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য বিজেপির ভূমিকা নিয়েও। এত হম্বিতম্বি করেও শেষ পর্যন্ত একটা ধুন্ধুমার অভিযান করতে পারলেন না তারা। অনেকেই বলছেন, দিলীপ ঘোষদের খালি, 'মুখে মারিতং জগত'। এমন সংগঠন নিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়াবেন কীভাবে? নেতারাই যদি এতো ভয় পান, তাহলে নিচুস্তরের যে কর্মীরা মার খাচ্ছেন, তাঁরা কী করবেন? ফলে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো মুখ কি আদৌ আছে বিজেপিতে?   



কীভাবে পুলিস সামাল দিল? 


এদিন লালবাজারের সামনে ছিল ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রথম ব্যারিকেড করা হয়েছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মাঝে। দ্বিতীয় ব্যারিকেডটি রাখা হয় একশো মিটার দূরে ফিয়ার্স লেন ও বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থলে। তৃতীয় ব্যারিকেডটি করা হয়েছিল স্টিল ঢাল দিয়ে। প্রথম ব্যারিকেড বিজেপিকে ভাঙতে দিয়েছিল পুলিস। আশ্চর্যের বিষয়, প্রথম ব্যারিকেড পর্যন্ত কোনও পুলিসই ছিল না। গোটা ফোর্স ছিল দ্বিতীয় ব্যারিকেডের পিছনে। হেলমেট লাঠি ঢাল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পুলিস কর্মী থেকে আধিকারিকরা। 


দ্বিতীয় ব্যারিকেডের সামনে বিজেপি আসার পরই বাধা দিল পুলিস। কোনও সংঘাতে না গিয়ে ২টি জলকামান ব্যবহার করা হয়। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। কোনও সংঘাত ছাড়াই বিজেপি কর্মীরা সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে চলে যান। পুলিস ততক্ষণে প্রথম ব্যারিকেডের দখল নিয়ে নেয়। এরপর বেশকিছুক্ষণ শীর্ষ নেতারা অবস্থান করেন সেখানে। তারপর যে যার মতো চলে যান। 


অতিসম্প্রতি জেলাশাসক ও পুলিস আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিসের উদ্দেশে প্রশ্ন ছোড়েন, আপনারা কি ব্যালান্স করে চলছেন? বিজেপির লালবাজার অভিযানেও কি সেই 'ব্যালান্স' কৌশলই নিল কলকাতা পুলিস? একটা ব্যারিকেড ভাঙতে দিয়ে বিজেপির মুখরক্ষাও হল, আবার লাঠিচার্জ না করে ভবিষ্যতের গড়রক্ষাও হল! যদিও ব্যালান্সের কৌশল নিয়ে স্পিকটি নট লালবাজার কর্তারা।


আরও পড়ুন- একটি সম্প্রদায়ের দুধ খান মমতা, তারা আইনের ঊর্ধ্বে, এনআরএস-কাণ্ডে বললেন দিলীপ