নিজস্ব প্রতিবেদন- করোনা হাসপাতালে দুর্গা পুজো। রবিবার সকালে এমনই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করেছিল জি ২৪ ঘণ্টা ডট কম। সেই খবরের সারম্র্ম ছিল, করোনা চিকিৎসার প্রাণ কেন্দ্র কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবছর মণ্ডপ বেঁধে, প্রতিমা এনে দুর্গা পুজোর আয়োজন হচ্ছে। চিকিৎসক-নার্স-কর্মীদের একটা বড় অংশ তাতে অংশ নেবেন। হাসপাতাল চত্বরে দুর্গাপুজো করতে চেয়ে চিকিৎসকদের একাংশ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে দুর্গা পুজোর অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। দিন পনেরোর টানাপোড়েন শেষে বয়েজ হোস্টেলে সেই পুজোর অনুমতি মিলেছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-  বেনজির! খাস কলকাতায় করোনা হাসপাতালে দুর্গাপুজোর আয়োজন, মণ্ডপ তৈরি, প্রতিমাও


অতিমারীর সময় খাস করোনা হাসপাতালে পুজো হলে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে! তাই নিয়ে বিতর্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। করোনা চিকিত্সা কেন্দ্রে রোগীরা আসেন। তাঁদের চিকিত্সা হয়। তাই সেখানে পুজোর আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তবে চিকিত্সক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশ জানিয়েছিল, সাত মস ধরে কোভিড ওয়ারিয়রর অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। চিকিত্সক, নার্স এবং কর্মীরা বহুদিন বাড়িও যাননি। পরিজনদের সঙ্গে দেখা হয়নি। সাতদিন ডিউটি এবং ৭ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে দিন কাটছে। তাই হস্টেল চত্বরের এই পুজো তাঁদের কাছে প্রাণের আরাম হয়ে উঠতে পারে। কটা দিন উত্সবের আমেজ থাকলে তাঁদেরও মন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর এবার মেডিকেল কলেজের এই পুজোর আয়োজকরা বলছেন, বিতর্কের কোনো কারণ নেই। কোভিড- এর মাঝে এই পুজো আসলে করোনা যোদ্ধাদের জন্যই। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বদলে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্সব হিসাবে ভাবতে ক্ষতি কোথায়! আর এই উত্সব কটা দিন কোভিড যোদ্ধাদের একটু প্রাণ ও মনের আরাম দিতে পারলে আপত্তিই বা কোথায়! এদিন একটি পোস্ট করা হয় হাসপাতালের হস্টেল চত্বরে পুজো আয়োজকদের তরফে। আমরা সেটাই তুলে ধরছি-


''সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে খাপ খুলে ট্রায়াল-এর জাজমেন্ট চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হওয়ার আগেই কৈফিয়ৎ দিতে এলাম। মেডিকেল কলেজে কেন দুর্গাপূজো হবে? কারা করছে? কী জন্য করছে? এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, কোভিড এর মাঝে পুজো?!! 


কৈফিয়তের আগে ভণিতা করে নিই। গত ৭ই মে থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ কোভিড হাসপাতাল। প্রায় ছ'মাস ধরে এখানকার ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মীরা এখানে প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। 


গত ৯ই জুলাই থেকে এই হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের সফল আন্দোলনের ফলে কোভিডের পাশাপাশি নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসাও চলছে পুরোদমে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরামহীন পর্যায়ক্রমে কোভিড ডিউটি,  নন কোভিড ডিউটির শিডিউলে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বেশি কোভিড শয্যার হাসপাতাল ( বর্তমান বেড সংখ্যা ৬৬০, প্রস্তাবিত আরও ১০০) চলেছে ক্লান্তিহীন অভিযানে। ইতিমধ্যে বারংবার এক্সপোজারে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এখানকার বহু জুনিয়র চিকিৎসক,  শিক্ষক চিকিৎসক,  নার্স, ওয়ার্ডবয়, সাফাইকর্মী, গ্রুপ ডি কর্মচারীরা। হাসপাতালে ভর্তি থেকেছেন, সুস্থ হয়েছেন, আবার যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে। অনেকে পরিবারের প্রিয়জন বা চেনা শিক্ষকদের হারিয়েছেন কোভিড-কবলে। তার পরেও চলছে মৃত্যুর বিরুদ্ধে মাথা ঠান্ডা রেখে লড়ে যাওয়া। 


পুজোর সময়েও প্রত্যেক দিন ২৪x৭ খোলা থাকবে সরকারি হাসপাতালের সমস্ত পরিষেবা। মানে বুঝলেন? এই যে কোভিড যোদ্ধারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তারা পুজোর সময়েও তাদের যুদ্ধক্ষেত্রেই থাকবেন। এমন অনেকেই আছেন যারা প্যানডেমিক-এর শুরু থেকে বাড়ি যেতে পারেননি, বা খুব বেশি হলে একবার। কবে যেতে পারবেন তারও ঠিক নেই। 


প্রথমত, এই জায়গা থেকেই মেডিকেল-এ পুজোর ভাবনা। কোভিড যোদ্ধারা, যারা বাড়ি ফিরতে পারবেন না, ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের যারা কোভিড ডিউটি দিচ্ছেন তাদের সাধারণের জন্য উন্মুক্ত মন্ডপে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, (থাকা উচিত ও না) তারা নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের জন্য ঘরোয়া আড়ম্বরহীন এক পুজোর উদ্যোগ নিয়েছেন। 


জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে 'হাসপাতাল ক্যাম্পাস এর বাইরে', নিরাপদ দূরত্বে মেইন হস্টেল প্রাঙ্গন। ফলত, 'হাসপাতালে পুজো হাসপাতালে পুজো' বলে মিথ্যে চেঁচামেচি বন্ধ হোক। 


দ্বিতীয়ত,  দূর্গাপুজো আমাদের কাছে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়।  আমাদের কাছে বাঙালির উৎসব। তা পালন করা হবে রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে, পালন করা হবে কোভিড যোদ্ধাদের সম্মান জানানোর মাধ্যমে, পালন করা হবে কোভিড ও নানা সামাজিক সমস্যার সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে, পালন করা হবে আশেপাশের পথশিশুদের জামাকাপড় দিয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে। কোনো আড়ম্বর দিয়ে নয়, ঘরোয়া ভাবে খানিক হলেও টানা যুদ্ধের মাঝে অন্যরকম চার-পাঁচদিন কাটানোটাই এ পুজোর উদ্দেশ্য। অষ্টমীতে যারা অঞ্জলি দিতে চান দেবেন, যারা শুধু লুচি আলুভাজাটুকু হস্টেলের ক্যান্টিনে চান সেটুকুই। নবমীতে নিজেদের খরচেই আয়োজন থাকবে রাতের খাবারের। হস্টেলের ভাষায় যাকে আইডি বলে আর কী! হস্টেলেরই ক্যান্টিনে। কেউ প্রয়োজন বোধ করলে তাকে প্যাকেটে দেওয়া হবে খাবার। থাকবে প্রপার স্যানিটাইজেশন-এর ব্যবস্থা ও শারীরিক দূরত্ববিধি মানা। 


সুতরাং, অযথা বিতর্কের সম্ভাবনা বন্ধ হোক। ক্লান্তিহীন যুদ্ধের মাঝেই কোভিড যোদ্ধাদের নিজেদের জন্য নিজেদেরই উদ্যোগে থাকুক শারদীয়ার ঝকঝকে নীল সাদা আকাশ আর কাশ ফুলের নাম লেখা কয়েকটা দিন।''