সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

অনেকেই মনে করেন, সন্ধিপুজো হয়ে গেল মানেই মোটামুটি দুর্গাপুজো শেষ। কেননা, সন্ধিপুজোর পরেই নবমী তিথি পড়ে যায়। আর নবমী-ই যদি এসে গেল দশমী কি খুব দূরে থাকতে পারে?


ঠিক এই কারণেই তো কবি গেয়েছেন, 'যেও না নবমী নিশি'। তবু কাল তো অ-স্থির, নিষ্ঠুর। সে চলে যায়। বয়ে যায়। নবমীনিশিও তাই ফুরোয়। বাঙালি শুভ বিজয়ায় মাতে। 


কিন্তু পুজো ফুরনোর আগে?


ফুরনোর আগে দেদার মজা, দেদার রঙদারি, দেদার কেরদানি। তখন বাঙালি পুরোদস্তুর থাকে বাঙালিতেই। সে পুজোর চারদিনের মেনু ছকে নেয় একমাস আগেই। ঘরে খাওয়ার পাশাপাশি থাকে ইটিং-আউটের প্ল্যান। এর পর থাকে ঘোরাঘুরি। ঠাকুরদেখা, ভিড় ঠেলা। শ্যালিকা বা পিসিমার বাড়ি ঘুরে আসার ব্লু-প্রিন্টও মোটামুটি রেডি থাকে। আর থাকে দিবানিশি আড্ডা। কিন্তু এ বার?


অন্য বারের কথা বাদ দিলে এ বার অন্তত এসব নবমীনিশি ফুরনোর আগেই ফুরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কেননা, এ বার বাঙালিকে মেরে রেখেছে একা করোনাই। সব চৌপাট হয়ে গিয়েছে তার জ্বালায়। পুজো-আচ্ছা-উৎসব এক এক করে করোনার রোষে নষ্ট হয়েছে সব। ফলত পুজো নিয়েও ছিল বিস্তর প্রশ্ন। আদৌ হবে কিনা, হলে কী ভাবে হবে-- এসব ভেবেই বাঙালি ইদানীং কালাতিপাত করেছে।



পুজো নিয়ে জলঘোলাও তো কম হল না। রাজ্য সরকারের তরফে একরকম ঘোষণা। কেন্দ্র সরকারের তরফে একরকম মনোভাব। সুধীসমাজের এক রকম ভাবনা। হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়াল বিষয়টি। দুর্গাপুজো শেষমেশ প্রায় রুদ্ধশ্বাস আইপিএলে পর্যবসিত হল।


করোনা-মৃত্যু, করোনা-সংক্রমণের নিষ্পেষণের পাশাপাশি অগ্নিমূল্য জিনিসপত্রও বাঙালিকে বিস্তর চাপে রেখেছে। হাতে ছ্যাঁকা লেগে যাওয়ার জোগাড়। বাঙালির প্রিয় অভিনেতার গুরুতর অসুস্থতাও তাকে কিছুটা বিষণ্ণ রেখেছে। এর ওপর আবার সাড়ে পাঁচদিন ধরে বাজে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। সব পরিকল্পনা জলে যায় আর কী! নেহাত বাংলাদেশের দিকে ঘুরে গেল নিম্নচাপ!


এত কিছুর মধ্য়েই কিন্তু বাঙালি যথারীতি বোধনে সামিল হয়েছে, নবপত্রিকায় অংশ নিয়েছে, অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়েছে, কুমারী পুজোয় উপস্থিত থেকেছে, সন্ধিপুজোয় প্রদীপ জ্বালিয়েছে। এবং আজ, নবমীর দিন সকাল-সকাল সে এমনকী পাঁঠার মাংসের দোকানেও লাইন দিয়েছে!


দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা পাঁঠার মাংসের দামের ভয়ে কম্পিত নয় বাঙালি-হৃদয়। আজ, নবমীর সকালে গড়ে পঞ্চাশ টাকা করে দাম বাড়ার পরেও সে পিছিয়ে আসেনি। বরং ব্যাগ জাপ্টে অম্লান সে দাঁড়িয়ে পড়েছে লম্বা লাইনের উজ্জ্বল অন্তিমে। সে জানে আজ রবিবার; আজ নবমী; আজ পাঁঠা; এর কোনও ব্যত্যয় নেই; এর কোনও ব্যাখ্যাও নেই। করোনা পুজোর ভিড়ে কিছুটা হলেও কোপ মেরেছে, কিন্তু পাঁঠার কাছে সে বেবাক হেরে গিয়েছে!


পরিস্থিতি যা ছিল, তাতে বাঙালিরই নবমীর পাঁঠার মতো ভয়ে-উদ্বেগে কাঁপতে থাকার কথা ছিল! কিন্তু পাশা উল্টে গিয়েছে। বাঙালি মনে মনে জানে, সন্ধিপুজো হয়ে গেলেই পুজো শেষ হয় না; বরং মাংসের দোকানে-দোকানে আরও ক'টি বেশি পাঁঠা কাটা হয়। 


অবশ্য এই জন্য়ই বাঙালি হল বাঙালি। সে স্যানিটাইজারও ব্য়বহার করবে আবার প্যান্ডেলের পাশে দাঁড়িয়ে নিশ্চিন্তচিত্তে ফুচকাও খাবে। সে মাস্কও আঁটবে আবার সন্ধের ভিড়ও ঘাঁটবে। সে বলবে পুজো না হলেই ভাল হত, তাতে সংক্রমণ কিছু কমত আবার সে-ই বীরদর্পে ভলান্টিয়ারকে উপেক্ষা করে দড়ি গলে রাস্তা পেরোবে। সে আড্ডায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে চোখ-কপালে-তোলা বক্তিমে ঝাড়বে আবার নবমীর সকালে 'ভাজা মাছটি উল্টে খেতে না পারা'র মতো মুখ করে পাঁঠা বা ইলিশ খুঁজে বেড়াবে!


জয় বাঙালির জয়! জয় নবমীর জয়!